Most-Popular

চিরকুমারী থাকা কি এখন ট্রেন্ড! না কি সত্যি বিয়ে না করে সারা জীবন কাটানো যায়?

প্রবাদে রয়েছে জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে তিন বিধাতা নিয়ে। এর মধ্যে জন্ম ও মৃত্যুর ওপর আমাদের অধিকার না থাকলেও বিয়ের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ থাকে আগাগোড়া। বিয়ে নিয়েও নানা মুনির নানা মত। বাল্যবিবাহ, বিধববিবাহর উত্তর যুগে আমরা এসে পৌঁছেছি সিঙ্গেল ওমেনহুড এর যুগে। যার পোশাকি নাম হলো – ‘স্পিনস্টার’।

বিয়ে কি সত্যিই মনের মিলনমাত্র?

সমাজকেন্দ্রিক জীবনব্যবস্থায় বিয়েটা অনেকের কাছেই মানসিক, শারীরিক ইত্যাদি লক্ষ্যপূরণের জন্য গঠিত একটা পরম্পরিক সম্পর্কের মেলবন্ধন হলেও, কিছুজনের কাছে কেবলই তা নিজের স্বাধীনতা হরণের মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। একজন পুরুষের পক্ষে সমাজের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করা যতটা সহজ হয়, একজন নারীর ক্ষেত্রে বোধহয় ততোটাও নয়। কিন্তু একজন মেয়ে অবিবাহিত থেকে সারাটা জীবন কাটাতে পারে কিনা? এই প্রশ্ন যদি কেউ করেন তাহলে নীচে লেখা বিষয়গুলি ভালো করে পড়ুন। উত্তর পেয়ে যাবেন সহজেই।

অবিবাহিত থাকার পক্ষে আসা চ্যালেঞ্জ:

বিয়ের পরবর্তী জীবনে আসা নানা নেতিবাচক প্রভাব বর্তমান প্রজন্মের কাছে বিয়ে নিয়ে এক বিভীষিকা তৈরি করেছে। অবিবাহিত জীবন কাটানো চাট্টিখানি কথা নয়। বিশেষ করে একজন মেয়েকে এরজন্য বহু প্রতিকূলতার সন্মুখীন হতে হয়।

১. পারিবারিক চাপ:

বাবা মা এর প্রধান চিন্তার মধ্যে অন্যতম বিয়ে। তারা চান তাদের মেয়েকে যেকোনো মূল্যে সুখী দেখতে। এর জন্য অবশ্য গাঁটছড়া বাঁধাকেই তারা উৎকৃষ্ট বলে মনে করেন। তাই মেয়েদেরও অগত্যা তাদের মুখ চেয়েই বিয়ে করতে হয়।

২. কুড়ি পেরোলেই বুড়ি:

সমাজে প্রচলিত ভ্রান্ত কুসংস্কার গুলির মধ্যে এটি চরমতম। তাদের ধারণা মেয়ের বয়স কম হলে তাতে বিয়ে দেবার সুবিধে। প্রতিষ্ঠিত পাত্রের সুনজরে আসে কমবয়সী মেয়ে। কিন্তু বয়সের গ্যাপ বেশি হলে মেয়েদেরকে ডমিনেট করার প্রবণতা দেখা দেয়। ফলস্বরূপ দাম্পত্য সম্পর্কের অবনতি।

৩. বিরূপ কুৎসা:

আত্মীয় পরিজন থেকে শুরু করে পাড়া প্রতিবেশী প্রত্যেকেই আপনাকে এটা বোঝাবে যে সারাজীবন পথ চলার জন্য আপনার অবলম্বন হবেন একজন পুরুষই। অতিশিক্ষিত মেয়ের ভালো বর জোটেনা ইত্যাদি সেকেলে চিন্তাধারার মুখোমুখি হতে হয় হামেশাই।

৪. বায়োলজিক্যাল চাহিদা:

আমরা সকলেই রক্তমাংসের জীব। আমাদের শরীরের চাহিদা বা যৌনতা ও স্বাভাবিক জীবনেরই অঙ্গ। বিয়ে এমন একটা প্রতিষ্ঠান যা শারীরিক সম্পর্ককে মান্যতা দিয়ে বৈধ করে। কিন্তু অনেকসময়ই দেখা যায় শারীরিক পরিতৃপ্তির পর পার্টনার সহযোগিতা করছেনা। ফলে জীবন হয় দুঃসহ।

৫. আবেগ প্রবণতা:

বাহ্যিক সৌন্দর্য বা অন্ধ আবেগ দুই এর বশবর্তী হয়ে আমরা সারাজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। আমাদের আশা থাকে যে স্বপ্নের মানুষটিকে ঘিরে তার বাস্তবতা আমাদের হতাশ করে। ফলে বিচ্ছেদের আগুনে জ্বলে নিজের অপরিনামদর্শীতার জন্য হা হুতাশই সম্বল হয়।

আইবুড়ি’দের নিয়ে গবেষণা যা বলছে:

  • যাদের আইবুড়ো নাম খণ্ডানোর অদূর ভবিষ্যতে কোনো সম্ভাবনা নেই এই খবর কিন্তু তাদের মুখে হাসি ফোটাবে। বিখ্যাত জার্নালিস্ট কল্পনা শর্মা জানাচ্ছেন সিঙ্গেল ওমেনরা গতানুগতিক চিন্তাধারার ঘেরাটোপ ভাঙছেন এবং একা থাকার জীবনকে বেশি করে আপন করে নিচ্ছেন।
  • ৩০ এর কোঠাকে মেয়েদের বয়স এর কাট অফ পয়েন্ট বলা হচ্ছে। এর মধ্যে বিয়ে বা বিয়ে সংক্রান্ত চিন্তা আপনার মাথায় যদিনা আসে তবে ধরে নেওয়া যায় আপনি বিয়ে আর করছেন না। তবে এর ব্যতিক্রম হতে পারে।
  • ২০১১ এর জনসমীক্ষা বলছে আগের চেয়ে ভারতে সিঙ্গেল অবিবাহিত নারীর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান।
  • ব্রিটিশ আচরণবাদী বিজ্ঞানী পল ডোলান এর মতে, সিঙ্গেল মহিলারা বাচ্ছা ও স্বামী নিয়ে সংসার করা স্ত্রীদের থেকে বেশি সুখী ও স্বাস্থ্যবতী। এমনকি তারা কম মানসিক অশান্তি ও ডিপ্রেশন এ ভোগেন।
  • কানাডার এক সমীক্ষাতে দেখা যাচ্ছে অবিবাহিত মহিলারা নিজেদের জীবনযাপনের মান কে হ্যাপিনেস ইনডেক্স এ ১-১০ রেটিং এ অনেকবেশি নম্বর দিয়েছেন যারা বিয়ে করেছেন তাদের থেকে।

বিয়ে না করার ফায়দা:

  • সংসার,ঘরকন্নার ঝক্কি নেই,বাচ্চার কান্না থেকে শাশুড়ির নিন্দে শুনতে হবেনা কিছুই।
  • নিজেকে প্রয়োজনমতো সময় দিতে পারবেন।পছন্দমতো ঘুরতে পারবেন কাউকে জবাবদিহি করতে হবেনা।
  • নিজের কাজকর্মের কৈফিয়ত কাউকে দিতে হবেনা।সমালোচনা করার কেউ থাকবেনা।
  • কারোর উপর নির্ভরশীল হতে হয়না। স্বাধীন বিহঙ্গের জীবন কাটাতে পারবেন দায়িত্ব ছাড়াই।

ভবিতব্য যদি একলা চলো রে হয়:

  • দেখুন বিয়ে তো দিল্লীর লাড্ডু! খেলেও পস্তাতে হবে আর না খেলেও। তাই ঠিকানা যদি চিরকৌমার্য হয়, তবে তা নিয়ে দ্বিধা না রাখাই ভালো। বরং স্থিরভাবে লক্ষ্যে উপনীত হওয়াই কাম্য।
  • নিজের আত্মমূল্যায়ন করুন। নিজের নেয়া সিদ্ধান্তের উপর অটল থাকুন এবং অনুশোচনাকে মনে স্থান দেবেন না।
  • কোনো অসুবিধার মধ্যে পড়তে না হয়। সেভিংস শুরু করুন এখন থেকেই।
  • কারোর সাথেই সমঝোতা বা স্যাক্রিফাইস এর পথে হাঁটবেন না। এর জন্য নিজের মধ্যে কঠোর মনোভাব আনুন। ভবিষ্যত প্রজন্ম টিকিয়ে রাখতে বিয়েটাই একমাত্র সমাধান নয়।
  • লিভ-ইন বা সিঙ্গেল মাদার এর দিকটাও ভেবে দেখতে পারেন কিন্তু।
  • একাকী বা নিঃসঙ্গ বোধ করলে বাড়িতে পোষ্য রাখতে পারেন। ব্যক্তিগত সময় কাটানোর উপযোগী।
  • ইমোশনাল সাপোর্ট বা নিরাপত্তার জন্য সম্পর্কে জড়িয়ে নিজেকে ঠকাবেন না। সবসময় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে চলুন।
Biswarup Parichha

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago