Personal Care

দেশী ঘি দিয়ে রূপচর্চা করুন ১০ উপায়ে

বাঙালী অথচ ঘি চেনেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। খাবারের স্বাদ বাড়াতে ও সু-ঘ্রাণ আনতে এদেশের ঐতিহ্যবাহী রান্নায় ঘি এর ব্যবহার হয়ে আসছে অনেক আগে থেকেই। এদেশের লোকজন গরুর দুধ থেকে তৈরি ঘি (যেটা গাওয়া ঘি নামে পরিচিত) কে সবচেয়ে ভালো মানের ঘি হিসেবে বিবেচনা করে। পোলাও, কাচ্চি, বিরিয়ানী, হালিম, বিভিন্ন রকম মিষ্টান্নের পাশাপাশি ভর্তা, ভাজির আকর্ষন বাড়াতেও ঘি ব্যবহার করা হয়। খাটি ঘি এর চমৎকার স্বাদ ও গন্ধ বাঙালীকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। গরম ভাতের পাতে খাটি ঘি – বাঙালীর একটি লোভনীয় খাবার।

শুধু স্বাদ কিংবা ঘ্রাণ নয়, ঘি কিন্তু পুষ্টিগুণেও অনন্য। এতে কার্বোহাইড্রেট, ক্যালোরি, প্রোটিন, ফ্যাট, ফসফোলিপিড, এসিডের পাশাপাশি রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন কে। হার্ট ভালো রাখতে ঘি খুবই উপকারী। যাদের দুধে এলার্জি বা দুধ খেলে পেটে সমস্যা হয়, তারাও ঘি খেতে পারেন নির্ভয়ে।

এটি মানব মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা বাড়ায় এবং পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। ওজন কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং ক্যান্সার থেকেও রাখে সুরক্ষিত। এছাড়াও নিয়মিত ঘি খেলে শরীরের ব্যথা-বেদনা সেরে যায়, দৃষ্টি শক্তির উন্নতি ঘটে, কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর হয়, হাড় ক্ষয় রোধ করে এবং এনার্জি বাড়ায়। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ পজিটিভ ফুড হিসেবে ঘি এর জুড়ি মেলা ভার।

এসব তো গেলো ঘি খাবার উপকারিতা। কিন্তু ঘি যে আপনার ত্বকের যত্নও নিতে পারে, তা কি জানেন? জ্বী হ্যা, খাটি ঘি দিয়ে নিশ্চিন্তে নেওয়া যেতে পারে ত্বকের যত্ন। কিভাবে? আসুন জেনে নেই।

পদ্ধতি ১ঃ

প্রতিদিন খালি পেটে এক চা চামচ ঘি খেয়ে ফেলুন। এতে ত্বকে কোলাজেনের উৎপাদন বেড়ে যায়। ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বেড়ে যায়। ত্বক মোলায়েম, কোমল, মসৃণ ও ময়েশ্চারাইজড হয়। ত্বকের যে কোনো ধরনের ক্ষতি রিপেয়ার করতে এটি খুবই কার্যকরী।

পদ্ধতি ২ঃ

ত্বকের পোড়া দাগ, মেছতার দাগ, ক্ষত, প্রদাহ, কাটা – এসব কিছুর সমাধান হচ্ছে ঘি। প্রতিদিন সকালে অথবা রাতে সামান্য ঘি নিয়ে আলতো হাতে দাগের উপর ম্যাসাজ করুন অথবা কাটা বা ক্ষতের উপরে লাগিয়ে রাখুন। খুব তাড়াতাড়ি উপকার মিলবে। এতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান ত্বকের কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে এবং এই সমস্যাগুলো সারিয়ে তোলে নিমিষেই।

পদ্ধতি ৩ঃ

রাতে ঘুমোবার আগে মুখের ত্বক পরিষ্কার করে নিন। সামান্য পরিমানে ঘি নিয়ে আলতো হাতে পুরো মুখে ম্যাসাজ করে লাগিয়ে নিন। এটি ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করবে। অল্প পরিমানে লাগালে এটি সারা রাতের জন্য রেখে দিতে পারেন ত্বকে। বেশি পরিমানে লাগালে আধ ঘন্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন।

পদ্ধতি ৪ঃ

গোসলের আধ ঘন্টা আগে কিছুটা ঘি সামান্য গরম করে হাত, পা, ঘাড়, গলা ও মুখে ম্যাসাজ করুন। বিশ মিনিট অপেক্ষা করে আবার সামান্য পানি নিয়ে ম্যাসাজ করুন। এরপর গোসল করে ফেলুন। নিয়মিত এভাবে ঘি ব্যবহার করলে ত্বক মসৃণ ও দাগহীন হয়ে উঠবে।

পদ্ধতি ৫ঃ

ঠোঁট ফেটে রক্ত পরার সমস্যা কম-বেশি সকলের মাঝেই দেখা যায়। শীতকালে এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয়। এই সমস্যা চুটকিতেই সমাধান করা সম্ভব ঘি দিয়ে। প্রতিদিন একবেলা নিয়ম করে ঘি নিয়ে আলতো হাতে ঠোঁটে পাঁচ মিনিট ম্যাসাজ করুন। ঠোঁট ফাটা কমে আসবে, সাথে পাবেন সুন্দর গোলাপী ঠোঁট।

পদ্ধতি ৬ঃ

ডার্ক সার্কেলস, রিঙ্কেলস, চোখের ফোলা ভাব – এসবের জন্য ঘি কিন্তু আই ক্রিম বা আই সিরামের কাজটাও করে। ঘুমানোর আগে হাতে সামান্য ঘি নিয়ে চোখের উপরে ও চারপাশের অংশে ম্যাসাজ করুন। দেখবেন রিল্যাক্স লাগবে। সাথে পালাবে ডার্ক সার্কেলস আর রিঙ্কেলসও।

পদ্ধতি ৭ঃ

মাথার স্ক্যাল্প ভালো রাখতেও কিন্তু ঘি বেশ উপকারী। ঘি সামান্য গরম করে সাথে কিছুটা নারকেল তেল মিশিয়ে ম্যাসাজ করলে স্ক্যাল্প ভালো থাকে। চলের আগায় লাগালে আগা ফাটা এবং চুলের ভেঙে যাওয়া রোধ হয়। ঘি এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ স্ক্যাল্পকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। চুলকে পুষ্টি দেয় এবং ঝলমলে ও মোলায়েম রাখে।

পদ্ধতি ৮ঃ

ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতেও ঘি খুব ভালো কাজ করে। ঘি এর সাথে ভিটামিন ই ক্যাপসুল ও বেসন মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। গোসলের আগে এই প্যাকটি শরীরে মেখে নিন। শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে এরপর গোসল করে ফেলুন। সপ্তাহে দুই দিন এই পদ্ধতি অবলম্বন করুন। নিয়মিত ব্যবহারে গায়ের রঙ উজ্জ্বল হবে, ত্বকও থাকবে ভালো।

পদ্ধতি ৯ঃ

চুলের উঁকুন দূর করতেও ঘি কার্যকরী। চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ঘি মেখে আধ ঘন্টা অপেক্ষা করুন। এরপর চিকন ডাটের চিরুনী দিয়ে আঁচড়ালেই উঁকুন থাকবে না মাথায় একটাও।

পদ্ধতি – ১০ঃ

অ্যান্টি-অ্যাজিং বা ত্বকে বয়সের ছাপ কমিয়ে দেয ঘি। নিয়মিত ঘি খাবার পাশাপাশি কাঁচা দুধে ঘি আর কাঁচা হলুদ বাটা মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট মুখে লাগিয়ে ত্রিশ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিনদিন এই পেস্টটি লাগালে চেহারায় বয়সের ছাপ আসবে না কখনোই, ত্বকও বুড়িয়ে যাবে না।

টিপসঃ

  • সাধারণত দুধ কিংবা দুধের তৈরি খাবারে এলার্জি থাকলেও ঘি খেলে কিংবা ঘি দিয়ে রূপচর্চার ক্ষেত্রে কারো এলার্জি হবার সম্ভাবনা নেই।
  • ত্বক খুব বেশি তৈলাক্ত হলে ঘি ব্যবহার না করাই উত্তম।
  • কখনোই গরম ঘি ত্বকে মাখবেন না।
  • আলতো হাতে ধীরে ধীরে ঘি ত্বকে ম্যাসাজ করবেন।
মোহসিনা রহমান মুনিয়া

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago