Most-Popular

বেশি বয়সে বিয়ে করা কি ঝুঁকির? লাভ না লোকসান!

বিয়ে একটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। সেই সত্তর এর দশক থেকে কমবয়সীদের বিয়ে চলতো রমরমিয়ে। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে জেটস্পিডের গতিতে চলতে থাকা জীবনে বিয়ের আভিধানিক অর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে ও চেতনায় নিত্যনতুন ছাঁচ পাচ্ছে।

গড়পড়তা মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজে পারিবারিক চাপ ও পড়শীদের কথার নিন্দেমন্দতে মেয়েদের উঠতে হতো ২০ এর আগেই বিয়ের পিঁড়িতে। এরজন্য দেওয়া হতো সামাজিক নিরাপত্তা ও সন্তান ধারণে সমস্যার দোহাই। কিন্তু বর্তমান দিনে মেয়েদের কেরিয়ার ও উচ্চশিক্ষায় ইতি টেনে ছাদনাতলা মুখো হবার নজির দেখা যাচ্ছে না একদমই। এরজন্য ক্রমশ বাড়ছে বিয়ের বয়স। এর কিরকম প্রভাব পড়ে তাদের জীবনে তাই আজকে দেখেনি চলুন।

দেরিতে গাঁটছড়া বাঁধার অবস্থানঃ

নিউইয়র্ক টাইমসের আর্টিকেল এর গবেষনা বলছে সারাবিশ্ব জুড়েই মেয়েদের বিয়ের গড় বয়স বাড়ছে। সেটা গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ২৮ এর কোঠায়। কিন্তু জীবনের এই সিদ্ধান্ত এতদেরীতে নেবার পেছনেও রয়েছে কিছু দৃঢ় অবস্থান ও সূক্ষ্ম বিচার। যা আসলে বিয়েকেই একটা ইতিবাচকতা দিচ্ছে না তো?

১) বনিবনাঃ

সময়ের সাথে সাথে আসে পরিণতি বোধ, যা ছোটখাটো লড়াই – গোঁসার উপরে উঠে মানুষকে বোঝার ক্ষমতা মজবুত করে, দূরত্ব ঘোচায়। রুচিবোধের মিল থাকলে দুজনেই ঝড়-ঝাপটা সামলাতে সমান অংশীদার হন। দাম্পত্য কলহের সম্ভাবনা কমে।

২) সম্পর্কে শ্রদ্ধাঃ

সংসারের বিমূর্ত ধারণাকে বাস্তবের আঙ্গিক কিন্তু মহিলারাই দিয়ে থাকেন। বেশি বয়সে দায়িত্ব পালনে সে প্রাপ্তমনস্ক হয়ে ওঠে। সন্দেহ,পজেসিভনেস, মান-অভিমান বা অহেতুক রাগের উপলক্ষ কমতে থাকে।

৩) দায়িত্বঃ

পুরুষরা দায়িত্ব নিয়ে বরাবর উদাসীন।পরিবার,আত্মীয়স্বজন প্রভৃতি সামাজিক বিষয়ের খুঁটিনাটি দিক,অনুষ্ঠান-পার্বণে বা বিশেষ তারিখ মনে রাখতে নির্ভরযোগ্য ভূমিকা পালন করে বেশি বয়সের মেয়েরাই।আইনস্টাইন এর স্ত্রী মিলেভার বয়স তার থেকে ৪ বছর বেশি ছিল, তাদের স্টেবিলিটি অনেকটাই বেশি ছিল।

৪) অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতাঃ

বিয়ে একটা নির্দিষ্ট ভবিষ্যৎ কাঠামোর উপর দাঁড়িয়ে থাকে। সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত হওয়া ও স্বচ্ছলভাবে নিজেদের ইচ্ছেপূরনের সোপান নিহিত থাকে আর্থিক অনুকূল অবস্থার উপরেই। আর নিজের রোজগারে থিতু হতে বয়স বেড়েই যায়।

৫) গুছিয়ে নেওয়াঃ

এই কনসেপ্ট এখন বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। লক্ষ্য স্থির করা ও নিজের স্যাটিসফ্যাকশন আনা এবং বিয়েটা যাতে দুজনের উপরেই বোঝা হয়ে না দাঁড়ায় সেই বোধ আসতে সময় লাগে। মেয়েদের নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর ইচ্ছে ও রয়েছে এর মধ্যে।

৬) সঠিক জীবনসঙ্গী চয়নঃ

ম্যাচুরিটি ও মানসিক প্রস্তুতি এই দুই ফ্যাক্টর জীবন সঙ্গীর চয়নে পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে।অনলাইন ডেটিং অ্যাপ টিন্ডার বা ভার্চুয়াল ম্যাট্রিমনিয়াল সাইটে এখন আলাপপর্ব জমিয়ে পছন্দের মানুষ চিনে নিজেদের সম্পর্ক তৈরি করছেন তারপর সেটা বিয়েতে গড়াতে সময় লেগে যাচ্ছে।

৭) মেডিক্যাল লাভঃ

সায়েন্স বলছে ২৫ বছরের পরে বিয়ে করলে মেয়েদের ফাইব্রোমাইলজিয়া, হার্টের অসুখ এমনকি ক্যানসার এর ঝুঁকি কমে। সম্পর্কের প্রাণবন্ততা, নিঃসঙ্গ না হওয়া দুরূহ রোগকেও কাঁচকলা দেখাচ্ছে। এখন সারোগেসির সুবিধাও উপলব্ধ, তাই মা হতেও বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখানোই যায়।

‘ধীরে চলো’ নীতির হাত ধরে নারী ক্ষমতায়নঃ

বস্তুত, আগে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ ও তাদের আত্মনির্ভর হবার জায়গাটা খর্ব করে বিয়ের শৃঙ্খল পরানো হতো। নারী শিক্ষার হারে বৃদ্ধি, তাদের স্বাধীনচেতা মনোভাব প্রতিফলিত হচ্ছে বিয়ের সময় পিছোনোর মধ্যে দিয়ে।

কম বয়সে বিয়ে হলে নিজের আত্মবিশ্বাস কম থাকে আর পুরুষসঙ্গীর উপর নির্ভরতা থাকে অনেক বেশি। যার কারণে মেয়েদের উপর আনুগত্য প্রত্যাশা বা কর্তৃত্ব প্রদর্শনের একটা ক্ষেত্র তৈরি হয়।

অপরপক্ষে স্বনির্ভর নারী নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারে আর সম্পর্কের মধ্যে আপোষ এর জায়গাগুলো খুব সুন্দরভাবে ট্যাকেল করতে পারে। ফ্যামিলি প্ল্যানিং হোক বা সমান অধিকার এই বিষয়গুলো নিয়ে কমফোর্ট জোন বাছতে পারে নিজের ইচ্ছে মতো। মেন্টাল সাপোর্টের চারণভূমি এটাই।

মধুর বোঝাপড়া যখন নারী ক্ষমতায়নকে সুনিশ্চিত করছে অপরদিকে দুজনের মাঝখানে সব পাঁচিল ভেঙে বোঝাপড়া করছে সহজ। ভয়ডর ছাড়াই স্বামীর খারাপ অভ্যাস গুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে বা একান্ত সময় চেয়ে আদায় ও করতে পারছে। রোল প্লে’এর ধারণা গাঢ় হচ্ছে ফলে একে অপরের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে সম্পর্কের স্থিতিশীলতার ভীত শক্তিশালী জায়গায়।

আইবুড়ি হবার নতুন দৃষ্টিভঙ্গি?

সত্তরের দশকেও মেয়েদের বিয়ে করার গড় বয়স ছিল ২০ বছরের নিচে আর আজ সেটা ৩০ এর কোঠায়। এর কারণ বুঝতে হলে এর পেছনে নতুন প্রজন্মের ইন্ডিভিজুয়াল চাহিদার যে দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে সেটাও বুঝতে হবে। তবে বয়সের বিয়েকে যুক্তি ও প্যারামিটার এর বেঞ্চমার্কে আমরা অনেকটাই মান্যতা দিতে পারবো।

  • বদলে যাওয়া সময়ে বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্কের ছুৎমার্গ বা যৌনতা নিয়ে জড়তা মুক্তির চেতনা অনেকটাই প্রকাশ পাচ্ছে। উদাহরন রয়েছে লিভ ইন সম্পর্কের জনপ্রিয় হওয়া।
  • বিয়ের আগে নিজেদের কমপ্যাটিবিলিটি মেপে নিতে চান এখন সিংহভাগ মেয়েই। লিভ ইন এর দীর্ঘসূত্রতা সেটাই প্রমান করছে। প্রচলিত ধ্যানধারণা ভেঙে এগিয়ে যাবার প্রবণতা একটা নতুন মূল্যবোধের জন্ম দিচ্ছে।
  • কিছুজনের মত আবার কাঁচাবয়সের রোম্যান্সে হাবুডুবু খাওয়া, সঙ্গীকে চোখে হারানোর মতো ন্যাকামির মেয়াদ বেশিদিন নয়। বয়স বাড়লে এগুলো ধোপে ও টেকে না আর রিলেশন সজীব করতেও মুখ থুবড়ে পড়ে। বরঞ্চ সময়ের পরিণতি বোধ একে অপরকে স্পেস দিতে শেখায়, ইগোর লড়াই কমায় ও হঠকারিতার দুর্ঘটনা ঘটতে দেয় না।
  • বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, একদিকে এর ফলে ভবিষ্যতে ডিভোর্সের সম্ভাবনাকে নির্মূল করার একটা প্রয়াস থাকছে ঠিক অন্যদিকে শিক্ষা, বিদেশভ্রমণ, গাড়ি, বাড়ি ইত্যাদি শখ পূরণ করার মেটিরিয়ালিস্টিক মনোভাব বিয়ের বাধ্যবাধকতা এ আসার আগেই মেয়েরা পোষণ করছেন।

পরিশেষে বলাই যায় যে, বর্তমান সমাজে নৈর্ব্যক্তিক পরিবার মানুষকে বহির্মুখী করে তুলছে। জীবনভোগের তত্ত্ব সামনে হাতছানি রাখছে স্ত্রী-স্বামী দুজনের কাছেই যেটা সিরিয়াস কমিটমেন্ট এর আগেই চেটেপুটে উপভোগ করতে চাইছেন দুজনেই।

Biswarup Parichha

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago