চিনা বা জাপানী মহিলাদের চুল এত সুন্দর হয় কেন জানেন? কয়েকশো বছর ধরে তারা মেনে চলে আসছেন এক অভাবনীয় সলিউশন, যার মাধ্যমে তাঁদের চুল এতটা সুন্দর এবং স্বাস্থ্যোজ্জ্বল দেখায়।
কী সেই সলিউশান? বিষয়টি একেবারেই কঠিন কিছু নয়। চাল ধোয়ার পর যে জল বেরোয় সেই জল থেকেই পেতে পারেন ঘন কালো লম্বা চুল। তাই এবার থেকে ভাত রান্নার সময়ে চাল ধুয়ে নিয়ে জলটি ফেলে না দিয়ে সেই জলেই করে নিন চুলচর্চা। আপনাদের জন্য রইল সহজ পাঁচটি উপায়।
রাইস ওয়াটার বানানোর দুটি পদ্ধতি
সহজ দুটি উপায়ে রাইস ওয়াটার বানানো যায়। চুলের মাপ অনুযায়ী এই পরিমান আপনারা ধার্য করে নিতে পারেন।
পদ্ধতি- ১
- যেকোনও চাল এক কাপ পরিমাণে নিয়ে তা আগে ভাল করে ধুয়ে নিন যাতে। যাতে চাল থেকে ধুলো বেরিয়ে যায়।
- তারপর দু’কাপ পরিমাণ জলে চাল আধ ঘন্টা মতো ভিজিয়ে রাখুন।
- আধ ঘণ্টা পর চালের জল ঘোলা হয়ে এলে হাত দিয়ে চালগুলি একটু কছলে নিন। তাহলেই চালের জল তৈরি।
- এবার চাল ছেঁকে নিয়ে জলটি একটি কাঁচের পাত্রে রেখে দিন ব্যবহারের জন্য।
- ফ্রিজে রেখে এটি এক সপ্তাহ মত ব্যবহার করা যায়।
- তবে আমি বলবো দিনের দিন ব্যবহার করাই ভালো।
পদ্ধতি- ২
- চাল ধুয়ে পরিষ্কার করে নিয়ে হাঁড়িতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল দিয়ে বসিয়ে দিন।
- চাল ফুটতে শুরু করলে আঁচ কমিয়ে দিয়ে চালের জল ঘোলা হয়ে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
- এবার ভাত ছেঁকে নিয়ে জলটুকু (মাড়) নিয়ে নিন, এটাই রাইস ওয়াটার হিসাবে ব্যবহার করতে পারবেন।
- তবে ব্যবহার করার আগে পুরোপুরি ঠাণ্ডা করে নিয়ে তবেই ব্যবহার করবেন।
১) চুলের বৃদ্ধিতে হেয়ার মাস্ক চাল ধোয়া জল
- হেয়ার মাস্ক হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন রাইস ওয়াটার।
- এর জন্য প্রথমে ভাল করে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।
- তারপর চাল ধোয়া জল ভাল করে চুলে ঢালতে থাকুন, সঙ্গে করুন হালকা হাতে মাসাজ।
- এবার ১০ মিনিট মতো মাথায় রেখে দিন এই মাস্ক।
- এরপর ভাল করে পরিষ্কার জলে চুল ধুয়ে নিন।
- সপ্তাহে তিনবার করে এটি অ্যাপ্লাই করতে পারেন এতে চুল বাড়বে তাড়াতাড়ি।
২) শ্যাম্পু হিসাবে রাইস ওয়াটার
- প্রথমে এক কাপ চাল ধোয়া জলের সঙ্গে মিশিয়ে নিন এরক চামচ আমলা বা সিকাকাই পাউডার।
- এবার তাতে ১/৪ চা চামচ অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে নিন।
- সেই সঙ্গে চুলের লেন্থ অনুসারে নিন মাইল্ড শ্যাম্পু।
- গোটা বিষয়টা ভাল করে মিশিয়ে একটি কাঁচের বোতলে রেখে দিন।
- ২ সপ্তাহ এটি রেখে দিতে পারেন।
- এবার এটিকেই শ্যাম্পুর মতো করে ব্যবহার করুন।
৩) হেয়ার সিরাম হিসাবে রাইস ওয়াটার
- জানেন কি চুলের পুষ্টির জন্য শ্যাম্পু, কন্ডিশনার ছাড়াও হেয়ার সিরাম লাগানো খুবই প্রয়োজন। এতে চুলের মধ্যে থাকা কেরোটিন পুষ্টি লাভ করে।
- আর এক্ষেত্রে অসাধারণ সিরামের কাজ করে থাকে রাইস ওয়াটার।
- এর জন্য ভাতের মাড় ঠাণ্ডা করে ভাল করে সারা চুলে লাগিয়ে নিন।
- তবে সাধারণত সিরাম চুলে লাগিয়ে রেখে দেওয়া উচিত। তা আর জল দিয়ে ধোয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
- তবে ভাতের মাড় যেহেতু একটু আঠালো এবং চটচটে প্রকৃতির হয়, সেহেতু আপনাকে বলবো ভাতের মাড় চুলে ১০-১৫ মিনিট মতো রেখে ধুয়ে নিন।
- সপ্তাহে দুবার করে এটি ব্যবহার করতে পারেন।
৪) চুলের গোড়া শক্ত করতে বিশেষ হেয়ার মাস্ক
- চালের জলে প্রচুর পরিমাণে অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে যা চুলের গোড়া মজবুত করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
- সেই কারণে, চাল ধোয়া জলের সঙ্গে খানিকটা অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন।
- এই মিশ্রণটি স্ক্যাল্পে খুব ভাল করে ঘষে ঘষে লাগিয়ে নিন।
- তারপর ২০ মিনিট মতো রেখে শ্যাম্পু করে ভাল করে স্নান করে নিন।
- সপ্তাহে যে কদিন নর্মাল শ্যাম্পু করেন তার আগে এটা ব্যবহার করুন।
- চুলের গোঁড়া মজবুত করে চুল ওঠা রোধ করতে এটি দারুন কার্যকরী।
৫) ফার্মেন্টেড রাইস ওয়াটার
- কোকড়ানো চুলের যত্নে ফার্মেন্টেড রাইস ওয়াটার ভীষণ উপকারি।
- এটি তৈরি করাও খুবই সহজ। ফার্মেন্টেড রাইস ওয়াটার বানাতে প্রথমে চাল ধুয়ে জল বের করে নিন।
- এবার সেই জল একটি কাঁচের বোতলে ভরে রাখুন। বোতলের মুখ বন্ধ করে কাঁচের বোতলটি দিন কয়েক খোলা জায়গায় রেখে দিন।
- ৩-৪ দিন পরে দেখবেন জল থেকে থেকে একটা টক-টক গন্ধ বেরোলে জলের বোতলটি রেফ্রিজারেটরে রেখে দিন।
- এই জল ২ সপ্তাহ পর্যন্ত রেখে দিতে পারেন। এই রাইস ওয়াটার চুলের জন্য খুবই পুষ্টিকর।
- বিশেষ করে যাদের কোকড়ানো চুল, তাদের চুলে জট পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচতে চুলে লাগান ফার্মান্টেড রাইস ওয়াটার।
- তবে এই জল সরাসরি চুলে অ্যাপ্লাই না করাই ভাল। এর সঙ্গে একটু জল মিশিয়ে ব্যবহার করুন।
- সপ্তাহে দুবার করে এটি ব্যবহার করতে পারেন। ব্যবহার করার পর ২০ মিনিট মত রেখে তারপর শ্যাম্পু করবেন।