ধর্ম ও সংস্কৃতি

এবছরের গণেশ চতুর্থী পুজোর দিনক্ষণ ও নিয়মকানুন

দুর্গাপুজোর ঠিক আগে আগেই হয় গণেশ পুজো। বড়রা বলেন, ছেলে এসে আগে দেখে যান সবদিক, তারপর মা আসেন। অগ্রপূজার অধিকারী গণেশ পূজা বাড়িতে আমাদের সকলেরই করা উচিত। শুধু ব্যবসার উন্নতির জন্য নয়, সাংসারিক সার্বিক উন্নতি, মানসিক শান্তি, সবচেয়ে বড় কথা, সার্বিক শ্রী লাভের জন্য অবশ্যই বাড়িতে গণেশ চতুর্থী পালন করুন।

গণেশ চতুর্থী পালনের দিন

পঞ্জিকা মতে এই বছর গণেশ চতুর্থী পড়েছে ৩১ অগস্ট, বুধবার। সকাল ১০.২১ থেকে বেলা ১২.৫২ পর্যন্ত থাকবে পুজোর শুভ মুহূর্ত। অর্থাৎ এখানেও প্রায় আড়াই ঘণ্টা আপনারা সময় পাবেন। গণেশ চতুর্থী মূলত দশ দিনের অনুষ্ঠান হলেও আপনারা পরের দিন বিসর্জন দিতেই পারেন। তবে মূল নিয়ম মানলে গণেশ বিসর্জনের শুভ দিন হল ৯ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার।

গণেশ চতুর্থী পালনের নিয়ম

ভাদ্র মাসের চতুর্থী তিথিতে হয় বিশেষ গণেশ পুজো। এর নাম গণেশ চতুর্থী। মূলত মহারাষ্ট্রে এই পুজো দশদিন ধরে হলেও এখন কলকাতাতেও এই পুজো খুব ভালো করে হয়।

কীভাবে করবেন এই দিন গণেশের পুজো নিজের বাড়িতে! খুব জটিল কোনও নিয়ম নয়। মহাদেবের সন্তান তাঁর পিতার মতোই অল্পে খুশী। শুধু ভক্তিতে কম হলে চলবে না। আসুন জেনে নিই গণেশ পুজোর স্বল্প পূজা পদ্ধতি।

প্রথমে আচমনঃ

যে কোনও পুজোর আগে নিজেকে শুদ্ধ করতে হয়। স্নান করে শুদ্ধ বস্ত্র পরে পুজো করতে বসার পর সবার আগে ওম বিষ্ণু, ওম বিষ্ণু ওম বিষ্ণু বলে তিনবার আচমন করে নিতে হবে। তারপর হাত ধুয়ে নিতে হবে। এতে আপনি অন্তর থেকে শুদ্ধ হলেন।

আসনশুদ্ধিঃ

এবার যে আসনে বসে পুজো করছেন তাকে শুদ্ধ করার পালা। আসনের নিচে একটা ‘ব’ কাটবেন আঙুল দিয়ে। তারপর দু’হাত দিয়ে সেই ‘ব’ স্থানে আসন ছুঁয়ে এই মন্ত্র বলবেন- “আসন মন্ত্রস্ব মেরুপ্রস্ব ঋষি/ সুতলং ছন্দকম দেবতা আসন উপবেশনে বিনিয়োগ/ ওম পৃথ্বীত্বয়া ধৃতা লোকা দেবীত্বং বিষ্ণুনার্বিত্বা/ তঞ্চধারেৎ মাং নিত্যং পবিত্রং পুরুচাসনম।।“

দশদিক স্মরণঃ

দশদিককে নমস্কার করে পবিত্র করে নিতে হবে এই মন্ত্রে, “ বামে গুরুভ্যে নমঃ, পরম গুরুভ্যে নমঃ, পরাপর গুরুভ্যে নমঃ, পরমেশ্ব গুরুভ্যে নমঃ। দক্ষিণে গাং গনেশায় নমঃ। পশ্চাতে ক্ষেত্রপালায় নমঃ। ঊর্ধ্বে ব্রাক্ষণে নমঃ। অধঃ অনন্তায় নমঃ। সম্মুখে ওম গাং গনপতয়ে নমঃ”।। বা বলতে পারেন, “ ওম ইন্দ্রাদি দশদিক পালেভ্য নমঃ” ।।

অভিষেকঃ

যদি আপনার বাড়িতে পিতলের গণেশ মূর্তি থাকে তাহলে খুব ভালো। যদি মাটির মূর্তি বা ছবি থাকে তাহলেও কোনও অসুবিধা নেই। ছবির সামনে বা মূর্তির সামনে অল্প জল দিলেই হবে।

অভিষেকের আগে ছেলেরা নিজের ডানহাতে আর মেয়েরা নিজের বাম হাতের কবজিতে লাল রুলী পরে নিন। রুলী দশকর্মার দোকানে পেয়ে যাবেন। তারপর কপালে ঘি দিয়ে গোলা মেটে সিঁদুরের টিপ দিন।

এবার গণেশকে জল বা দুধ দিয়ে অভিষেক বা স্নান করানোর সময় যে মন্ত্র বলতে হবে তা হল, ওম বক্রতুণ্ডায় হুম। এই মন্ত্রে অভিষেক করুন। অভিষেকের সময়ে গণেশের মুখ থাকবে দক্ষিণ দিকে, যিনি অভিষেক করছেন তাঁর মুখ থাকবে উত্তর দিকে।

অভিষেকের পর ভালো কাপড় দিয়ে মূর্তি মুছিয়ে নতুন বস্ত্র বা সাধারণত যে ঘাঘরা পাওয়া যায় ঠাকুরের তা পরান।

পূজারম্ভঃ

পুজোর শুরুতে গণেশের প্রিয় বারোটি নাম বলতে হবে, ১. ওম বক্রতুণ্ডায় নমঃ, ২. ওম একদন্তায় নমঃ, ৩. ওম কৃষ্ণপিণ্ডাক্ষায় নমঃ, ৪. ওম গজবক্রায় নমঃ, ৫. ওম লম্বোদরায় নমঃ, ৬. ওম বিকটায় নমঃ, ৭. ওম বিঘ্নরাজেন্দ্রায় নমঃ, ৮. ওম ধূম্রবর্ণায় নমঃ, ৯. ওম মহোদরায় নমঃ, ১০. ওম বিনায়কায় নমঃ, ১১. ওম গণপত্যয়ে নমঃ, ১২. ওম গজাননায় নমঃ।

গণেশের সামনে একটি সজল ঘট স্থাপন করুন। তাঁর উপরে একটি নারকেল রাখুন, আমপাতা রাখুন, সিঁদুর দিয়ে স্বস্তিক আঁকুন আর সুন্দর করে সাজান। আপনার যা যা নিবেদন করার আছে, ফুল, ফল, মিষ্টি, মালা সব দিন নিজের সাধ্য মতো। তবে অবশ্যই লাড্ডু আর মোদক দেবেন। এটি গণেশের খুব প্রিয়। অবশ্যই গণেশ ঠাকুরকে দূর্বা ঘাস দিতে হবে। মনে রাখবেন, দূর্বা ঘাস কখনই শুধু নিবেদন করতে নেই। সঙ্গে অল্প আতপ চাল দিতে হয়। ধূপ, দীপ দেখান।

আরতি করুনঃ

গণেশ পুজোয় আরতি খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটি থালায় পঞ্চপ্রদীপ সুন্দর করে সাজান, তাতে কর্পূর দিন। থালায় মেটে সিঁদুর, হলুদ গুঁড়ো, আতপ চাল, দূর্বা, ফুল আর লাড্ডু নিন। আগে সিঁদুর আর হলুদ দিয়ে গণেশের মাথায় টিকা দিন। তারপর কর্পূর দিয়ে আর পঞ্চ প্রদীপ দিয়ে আরতি করুন।

আতপ চাল, ফুল খানিক নিবেদন করুন উপর থেকে। মুখে লাড্ডু ছুঁয়ে দিন। এবার শান্ত মনে বসে ‘ ওম গাং গনপতয়ে নমঃ’ এই মন্ত্র ১০ বার, ২৮ বার বা ১০৮ বার উচ্চারণ করুন। গনেশের খুব প্রিয় মন্ত্র ধরা হয়, “ওম বক্রতুণ্ড মহকায় সূর্যকোটি সমপ্রভা নিরর্বিঘ্নং কুরুমেদেবা সর্বকারয়েসু সর্বদা”। পারলে এটি বলুন। সবশেষে পুজোর প্রসাদ গ্রহণ করুন। সারা বাড়িতে কর্পূরের আশিষ ছড়িয়ে দিন। এই দিন অবশ্যই নিরামিষ খান।

ব্যস, এই সহজ পদ্ধতিতেই আপনি বাড়িতে গণেশ পুজো করে নিতে পারেন। সব সময়ে ঠাকুরমশায় ডাকতে হবে তার কোনও মানে নেই। নিজের পুজো নিজে করুন। শুরুতে মনে হতে পারে অনেক নিয়ম, কিন্তু দেখবেন খুব সময় লাগবে না। আমাদের ব্যস্ত সময়ের মধ্যে থেকে ২০ মিনিট আমরা বিঘ্নহর্তাকে দিতে পারি আশা করি, কী বলেন!

Nandini Mukherjee

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago