করোনাভাইরাস এবং ফ্লু-এর মধ্যে পার্থক্য কোথায়? আর মিলই বা কোথায়?
নোভেল করোনা ভাইরাস তথা COVID-19 এবং ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা দুইই কিন্তু শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণের কারনে হয়ে থাকে। প্রাথমিকভাবে করোনা এবং ফ্লুয়ের লক্ষণের মধ্যে অনেক মিল থাকায় দুটি এক বলে মনে হতে পারে।
কিন্তু দুটি রোগ আলাদা আলাদা ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। জন হপকিন্স মেডিসিনের সিনিয়ার ডিরেক্টর লিজা মার্গাকিসের মতে করোনা ভাইরাস এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মধ্যে একাধিক মিল এবং অমিল রয়েছে।
করোনা ভাইরাস এবং ফ্লু-এর মধ্যে সাদৃশ্য
লক্ষণ
কাশি, পেশীতে ব্যথা, বমি ভাব, ডায়রিয়ার মতো লক্ষণগুলি উভয়ক্ষেত্রেই একইরকম।
দুই ক্ষেত্রেই অসুস্থতার মাত্রা অল্প, গুরুতর এবং মারাত্মক আকার ধারণ করেত পারে।
দুটি রোগই নিউমোনিয়ার আকার ধারণ করতে পারে।
রোগের ছড়িয়ে পড়া
দুটি রোগই কাশি, হাঁচি বা কথা বলার সময় মুখ বা নাক থেকে নিঃসৃত ছোট ছোট জলীয় কণা দ্বারা বাতাসে মিশে গিয়ে অন্য মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ভাইরাসে আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ করার ফলে এই দুই রোগ সংক্রামিত হতে পারে।
দুই ভাইরাসের লক্ষণগুলি প্রকট হওয়ার আগেই ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং করোনাভাইরাস দুইই ছড়িয়ে পড়তে পারে। যদিও এই বিষয়টি এখনও প্রমাণিত হয়নি।
চিকিৎসা
উভয় রোগের চিকিৎসা অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে সম্ভব নয়। কারণ অ্যান্টিবায়োটিক কেবল ব্যাকটেরিয়াজনিত ইনফেকশনের ক্ষেত্রেই কার্যকর।
দুই রোগের চিকিৎসা সম্ভব যদি একই পদ্ধতিতে জ্বরের মাত্রা কমানো যায়।
আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তি করা বা প্রয়োজনে ভেন্টিলেশনে দেওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে।
রোগ থেকে উদ্ধার
দুই ক্ষেত্রেই হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধোয়া উচিত। সেক্ষেত্রে অ্যান্টিসেপ্টিক সাবান এবং ৬০ শতাংশ অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া উচিত।
হাঁচি বা কাশির সময় মুখে হাত চাপা দেওয়া এবং টিস্যু ব্যবহার করা।
একান্তে বাড়িতে থাকে।
আক্রান্ত ব্যক্তিদের সান্নিধ্য এড়িয়ে চলা।
করোনা এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মধ্যে অমিল রয়েছে যেখানে
করোনা হয় নোভেল করোনা ভাইরাস বা COVID-19-এর কারণে। আর ফ্লু-এর ভাইরাস একাধিক ভাইরাসের কারণে হতে পারে।
রোগের ছড়িয়ে পড়া
যদিও করোনাভাইরাস এবং ফ্লু একইরকমভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তবুও তফাতের মধ্যে এই যে করোনা ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং আক্রান্ত মানুষের হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ফোঁটাগুলি বাতাসে মিশে যায়। পরে সেই ব্যক্তির অনুপস্থিতিতেও এটি বাতাসে জীবিত থাকে এইভাবে অন্য ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করে।
অ্যান্টি ভাইরাল মেডিসিন
অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধগুলি ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণ নির্ণয় করতে পারে এবং অসুস্থতার সময়সীমা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
অন্যদিকে অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধগুলি করোনা ভাইরাসের লক্ষণগুলি সনাক্ত করতে সক্ষম কিনা তা এখনও গবেষণালব্ধ।
টিকাকরণ
ফ্লুয়ের ভ্যাকসিন বাজারে উপলব্ধ। ভয়ঙ্কর মাত্রায় ফ্লু হলে টিকাকরণের মাধ্যমে এর নিরাময় সম্ভব।
অন্যদিকে করোনা ভাইরাসের টিকা এখনও আবিষ্কার করা হয়নি। এরজন্য চিকিৎসকরা নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ইনফেকশন
সারা বিশ্বে আনুমানিক এক বিলিয়ন মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত।
অন্যদিকে সারা বিশ্বে প্রায় ১,২১,৫৬৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। ১৬ মার্চ পর্যন্ত ভারতে ১১০ জনের মধ্যে করোনার লক্ষণ দেখা গিয়েছে।
মৃত্যু এবং মৃত্যুর হার
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪,৬০০ মানুষ করোনাভাইরাসের কারণে প্রাণ হারিয়েছে।এই রোগে মৃত্যুর হার ৩-৪%।
প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ২,৯১,০০০ থেকে ৬,৪৬,০০০ মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়। ফ্লুতে মৃত্যুর হার ০.১%।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র তরফে জানানো হয়েছে
করোনাভাইরাস ফ্লু-এর থেকে ধীর গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। এটিই সম্ভবত দুটির রোগের মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য।
ফ্লুয়ের লক্ষণ খুব তাড়াতাড়ি প্রকট হয়, অন্যদিকে করোনার লক্ষণ প্রকট হতে বেশি সময় লাগে। ফ্লুয়ের একের পর এক কেসে সিরিয়াল ইন্টার্ভাল করোনা ভাইরাসের থেকে কম।
করোনা ভাইরাসের সিরিয়াল ইন্টারভাল ৫-৬দিন হয়ে থাকে, যেখানে ফ্লুয়ের সিরিয়াল ইন্টারভাল হয় ৩দিন। অর্থাৎ ফ্লু বেশি তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ে।
করোনায় আক্রান্ত রোগী ২দিন পর থেকেই এই ভাইরাস ছড়াতে শুরু করে। অন্যদিকে ফ্লু-এর ভাইরাস রোগীর শরীর থেকে ২দিন থেকে ১ সপ্তাহের মধ্যে ছড়াতে শুরু করে।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, করোনা আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে ওঠার পর ২০ দিন পর্যন্ত ভাইরাস পরিবেশে ছড়াতে পারে।
সেকেন্ডারি ইনফেকশন
করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর ব্যক্তির শরীরে দুই বা ততোধিক রোগ বাসা বাধে।
ফ্লু-এর ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে।
ফ্লু মূলত শিশুদের দ্বারা অধিক সমক্রামিত হয়, অন্যদিকে করোনা ভাইরাস প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের দ্বারাই বেশি ছড়িয়ে পড়ে।