আয়নার সামনে দাঁড়ালেই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন চোখের চারপাশে, কপালে কুঁচকে যাওয়া আর দাগ? বয়স হওয়া তো স্বাভাবিক ঘটনা। তাকে আটকাবেন কীভাবে! কিন্তু বয়স হলেই যে ত্বক কুঁচকে যেতেই হবে তার তো কোনও মানে নেই। আর এখন বলিরেখা বা রিঙ্কলস অনেক কম বয়সেও আসতে পারে। আপনি হয়তো বাজার থেকে ভিটামিন ই সমৃদ্ধ, অ্যান্টি এজিং কোনও ক্রিম আনবেন। কিন্তু সবও সময়ে ব্যবহারের জন্য সেগুলি একটু দামী হয়ে যায় বৈকি! তাহলে উপায়? আমরা বলব তো ফেস মাস্কের কথা, যা রিঙ্কলস সহজেই কমিয়ে দেবে। সঙ্গে থাকবে আরও অনেক উপকার।
শতকের পর শতক ধরে ফেস মাস্ক ব্যবহার করা হচ্ছে আমাদের ত্বকের সৌন্দর্যের জন্য। রিঙ্কলস দূর করার জন্যও ফেস মাস্ক খুব কার্যকরীভাবে ব্যবহার করা হয়ে আসছে। কিন্তু রিঙ্কলস দূর করা ছাড়াও ফেস মাস্ক আরও অনেক দিক থেকে আমাদের উপকারে আসে।
এখন দেখে নেওয়া যায় ফেস মাস্ক তৈরি করতে আপনাদের হাতের কাছে থাকা ঠিক কোন কোন উপকরণ আপনি ব্যবহার করতে পারেন। এই সব উপকরণ হাতের কাছে থাকলেই আপনি ফেস মাস্ক তৈরি করে ফেলতে পারবেন।
অরেঞ্জ পিল অর্থাৎ কমলালেবুর খোসা। এই অরেঞ্জ পিল শুকিয়ে নিয়ে গুঁড়ো করে রেখে দিলে ফেস মাস্কে ব্যবহার করা যায়। এর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান রিঙ্কলস দূর করে স্কিন টানটান করতে সাহায্য করে।
রক্ত পরিষ্কার করা, স্কিন থেকে দাগ তুলে দেওয়া, হলুদের এই সমস্ত গুণের কথা তো আমরা জানি। হলুদ কিন্তু রিঙ্কলস দূর করতেও খুব ভাল কাজ দেয়। স্কিনের টানটান ভাব ধরে রাখে হলুদ। সঙ্গে ফিরিয়ে আনে ত্বকের জেল্লা।
গ্রিন টি অ্যান্টি এজিং উপাদান হিসেবে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এতে আছে পলিফেনোলিক, যা ত্বকের বার্ধক্য রোধ করে। এর পাশাপাশি গ্রিন টির মধ্যে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান, যা বার্ধক্যের চিহ্ন দূরে রাখে।
স্যান্ডলউড স্কিনকে টোনড করে। স্কিন টেক্সচার নর্মাল করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যে একটা বুড়িয়ে যাওয়া অনুজ্জ্বল ভাব আসে, সেটাও চন্দন দূরে রাখে। চন্দন স্কিন টাইট রাখে। সঙ্গে ব্রণ বা দাগ ছোপ আসতে দেয় না।
টক দই স্কিন টানটান রাখতে, ত্বকের ইলাস্টিসিটি ধরে রাখতে খুব ভাল কাজ দেয়। ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখে, সঙ্গে ত্বকে আনে উজ্জ্বলতা। টক দইয়ের মধ্যে থাকা সেলেনিয়াম রিঙ্কলস বা বার্ধক্যের চিহ্ন সহজে আসতে দেয় না।
নিমের মধ্যে আছে অ্যান্টি মাইক্রোবায়াল উপাদান, যা ত্বকের সার্বিক স্বাস্থ্য বজায় রাখে। তাই সহজে ত্বক ঝুলে যায় না। ফ্রি র্যাডিকেল থেকে ত্বক রক্ষা করে আর অক্সিডেটিভ ড্যামেজ থেকেও স্কিন উদ্ধার করে।
কফির মধ্যে থাকা ক্যাফেইনে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান। ক্যাফেইন ত্বকের মধ্যে ব্লাড সার্কুলেশন ভাল করে। তাই ত্বক কোমল থাকে আর রিঙ্কল, দাগ, স্কিন ঝুলে যাওয়ার মতো বুড়িয়ে যাওয়ার ছাপ সহজে আসে না।
লেবুর মধ্যে আছে ফাইটোকম্পাউন্ড, যা অ্যান্টি এজিং উপাদান হিসেবে খুব ভাল কাজ করে। ত্বকের চামড়া ঝুলে গেলে লেবু খুব তাড়াতাড়ি স্কিনের ইলাস্টিসিটি ফিরিয়ে এনে ফিরিয়ে আনে তারুণ্য।
আপেলে আছে হাইড্রোক্সি অ্যাসিড। এই অ্যাসিড তারুণ্য বজায় রাখতে আর সহজে যাতে বার্ধক্য না আসে তার জন্য কাজ করে। আপেল আমাদের স্কিন এক্সফোলিয়েট করে আর ডেড স্কিন সেল দূর করে দেয়। ত্বক অনেক স্মুদ থাকে।
অলিভ অয়েলে আছে ফেনোলিক অ্যাসিড, যা অ্যান্টি অক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ। অলিভ অয়েলে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ভিটামিন ই-এর থেকেও বেশি ভাল কাজ দেয়। অক্সিডেটিভ ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে স্কিন, স্কিনের সার্বিক স্বাস্থ্য বজায় রাখে।
স্কিনের বার্ধক্য দূর করে স্কিনকে তারুণ্যে ভরিয়ে তুলতে দুধের জুড়ি মেলা ভার। দুধ বুড়িয়ে যাওয়ার হার বা মাত্রা কমিয়ে আনে। এতে আছে আলট্রা হাইড্রক্সি অ্যাসিড, যা বার্ধক্যের ছাপ আসতে দেয় না।
১ টেবিল চামচ টক দই, এক চিমটে হলুদ গুঁড়ো।
একটি পাত্রে টক দই আর হলুদ গুঁড়ো নিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন। হার্বাল হলুদ গুঁড়ো পেলে ভাল হয়। এই মিশ্রণ মুখে মেখে ১৫ মিনিট রেখে দিন। শুকিয়ে আসলে সাধারণ জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এটা সপ্তাহে এক দিন করে করুন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তফাৎ বুঝতে পারেন।
২ টেবিল চামচ মুসুরি ডাল, ৩ টেবিল চামচ জল।
আগের দিন রাতে মুসুরির ডাল অল্প করে ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন বেটে নিন ভাল করে। মুখে মেখে অপেক্ষা করুন ৩০ মিনিট। যখন দেখবেন শুকিয়ে আসছে, মুখে অল্প টান ধরছে, তখন মুখ ধুয়ে নিন সাধারণ ঠাণ্ডা জল দিয়ে। ১০ দিন ছাড়া ছাড়া করতে পারেন। এতে স্কিন টাইট থাকবে।
২ টেবিল চামচ লেবুর রস, অল্প মিল্ক ক্রিম।
লেবুর রস আর মিল্ক ক্রিম নিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এটি মুখে মেখে ২০ মিনিট মতো অপেক্ষা করুন। তারপর সাধারণ জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে তিন দিন করতে পারেন। খুব ভাল উপকার পাবেন মিল্ক ক্রিমের জন্য। এতে স্কিন টানটান থাকবে।
২ চামচ অলিভ অয়েল, ১ চামচ লেবুর রস।
লেবুর রস আর অলিভ অয়েল একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর ঠাণ্ডা সাধারণ জল দিয়ে ধুয়ে নিন। এক দিন ছাড়া ছাড়া করতে পারেন। খুব ভাল উপকার পাবেন।
একটা আপেল, এক চামচ গুঁড়ো দুধ, ১ চামচ মধু।
একটা আপেল নিন আর সেদ্ধ করে নিন। আপেল ঠাণ্ডা হতে দিন। এবার বীজ বের করে আপেল ভাল করে চটকে নিন। এর মধ্যে গুঁড়ো দুধ আর মধু দিয়ে ভাল করে একটা পেস্ট করে নিন। এই পেস্ট মুখে মেখে নিন আর অপেক্ষা করুন ১৫ মিনিট। সাধারণ জল দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন। এটা মাসে এক দুইবার করতে পারেন।
এই পাঁচটির মধ্যে যে কোনও একটি বা দুটি ফেস মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন আপনার পছন্দ মতো। যে কোনও ত্বকের জন্য এই সব ফেস মাস্ক প্রযোজ্য। তবে শুধু ফেস মাস্ক ব্যবহার করলেই চলবে না। এর সঙ্গে আরও কিছু বিষয়ে নজর দিতে হবে। তবেই রিঙ্কলসের হাত থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পেয়ে তারুণ্যে ভরপুর থাকবে আপনার ত্বক।
১. রাতে স্কিন কেয়ার রুটিন মাস্ট। অবশ্যই স্কিন কেয়ার রুটিন মানে বিশাল কোনও ব্যাপার নয়। রাতে আমাদের স্কিন বিশ্রাম চায়। তাই ক্লিনসিং, টোনিং অবশ্যই করবেন। এর পাশাপাশি সঙ্গে রাখবেন ময়েশ্চারাইজিং। রাতে স্কিনে ময়েশ্চার দেওয়া মাস্ট।
২. সানস্ক্রিন অবশ্যই ব্যবহার করুন। সূর্যের কড়া রোদে স্কিন ড্যামেজ হয়। তাই স্কিন কেয়ার রুটিনের মধ্যে সানস্ক্রিন মেখে বাইরে যাওয়া মাস্ট।
৩. ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা তো উচিত। কিন্তু কোন ধরণের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন! নর্মাল স্কিন টাইপ হলে যে কোনও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু যদি অয়েলি বা কম্বিনেশন টাইপ হয় তাহলে ওয়াটার বেস ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ভাল। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে স্কিনের ইলাস্টিসিটি ভাল থাকে।
৪. ফেস মাস্ক অন্তত সপ্তাহে এক বার ব্যবহার করতেই হবে। এতে যেমন এজিং সমস্যা প্রায় হবে না, তেমনই অনেক ভাল থাকবে স্কিন।
৫. স্কিনের ধরণ অনুযায়ী প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। সব প্রোডাক্ট সবার জন্য নয়। আগে জানুন আপনার স্কিন টাইপ। তারপর সেই অনুযায়ী প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। ভুল প্রোডাক্ট কিন্তু অনেক সময়ে স্কিনের ক্ষতি ডেকে আনে।
৬. সময় করে দিনে দু’বার অন্তত মুখ ভাল করে পরিষ্কার করুন। দু বার মুখ না ধুলে বা ডিপ ক্লিনসিং না করলে মুখে ময়লা জমতে শুরু করে। অয়েল সিক্রিয়েশনে সমস্যা হয়। এতে পরবর্তী অনেক সমস্যার জন্ম হয়।
৭. সব কিছুর মূল শরীরের ভিতর। তাকে ভাল রাখার জন্য দরকার হেলদি ডায়েট। ভাল পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। অতিরিক্ত তেলতেলে খাবার স্কিনের জন্য ভাল নয়। তাই তেলতেলে খাবার বন্ধ করুন।
৮. যে কোনও এক্সারসাইজ স্কিন ভাল রাখে, টানটান রাখে। এক্সারসাইজ করলে ব্লাড সার্কুলেশন ভাল হয়। তাই অনেক দিন পর্যন্ত আপনাকে সুন্দর দেখায়।
সবশেষে একটাই কথা বলার। বয়স বাড়া খুব স্বাভাবিক একটা জিনিস। কিন্তু বয়স বাড়লেই যে চামড়া কুঁচকে বুড়িয়ে যেতে হবে তার কোনও মানে নেই। বয়স বাড়ুক তার মতো, আপনি তরুণ থাকুন শরীরে, মনে আর স্কিনের দিক থেকেও। বয়সের ছাপ যেন মুখে না দেখা যায়।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…