সঠিক ও সুষম খাওয়াদাওয়া ভাল স্বাস্থ্যের মাপকাঠি। কিন্তু যখন ব্যালেন্সড ডায়েটের সাথে লাইফস্টাইলের সংঘর্ষ বাঁধে তখনই দেখা দেয় হাজারটা সমস্যা। হঠাৎ খাওয়ার রুটিন অস্বাভাবিকভাবে বদলে যায়, তৈরি হয় ইটিং ডিসঅর্ডার, এবং তার মারাত্মক প্রভাব পড়ে শরীর ও মনের উপর।
ইটিং ডিসঅর্ডার – শব্দ দুটো শুনতে নতুন লাগছে? হ্যাঁ, আজকে কথা বলব ইটিং ডিসঅর্ডার নিয়ে। চলুন জেনে যাক ইটিং ডিসঅর্ডার কি, এর প্রকারভেদ, লক্ষণ, কি কি কারণে এটা হয়, এটা শরীরের কি কি ক্ষতি করে, এবং এর প্রতিকার কি।
এই ডিসঅর্ডার এক ধরণের মানসিক ব্যধি, যেখানে নিজের ফিগার নিয়ে অতিরিক্ত সচেতনতার কারণে স্বাভাবিক খাওয়াদাওয়ায় ব্যাঘাত ঘটে৷ অর্থাৎ একজন সুস্থ মানুষের যতটুকু খাওয়া দরকার, স্বাস্থ্য নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণে সেটুকু বন্ধ হয়ে যায়। আবার মাত্রাতিরিক্ত খাওয়াদাওয়া থেকেও ইটিং ডিসঅর্ডার হয়।
সাধারণত তিন প্রকারের ইটিং ডিসঅর্ডার বেশি লক্ষ্য করা যায় তরুণ প্রজন্মের মধ্যে।
সবচাইতে প্রথম এবং বিপজ্জনক ডিসঅর্ডার। যখনই আপনি আপনার স্বাভাবিক খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেন তখনই আপনি এই অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসার শিকার হন। অবশ্য এমনটা হওয়ার পেছনে বিভিন্ন মানসিক, সামাজিক, এবং সাংস্কৃতিক কারণকে দায়ী করা হয়।
কোন অনুষ্ঠানে গিয়ে বা বন্ধুদের সাথে বেশ জমিয়ে খেলেন, পরমুহূর্তেই মনে হল আজকের খাওয়াটা আপনার ওজন বাড়িয়ে দিবে। ব্যস, শুরু হয়ে গেল অপরাধবোধ। ইচ্ছে করে বমি করে, ল্যাক্সেটিভ খেয়ে, দৌড়ঝাঁপ করে, বা পরের বেলা একদম না খেয়ে থেকে কিছুটা ব্যালেন্স করার চেষ্টা করছেন।
এই ধরণের আচরণকে বলা হয় বুলিমিয়া নার্ভোসা৷ তবে এর একটা সুবিধা হচ্ছে, আপনি হঠাৎ করে শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাবেন না, যেমনটা অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসার কারণে হতেন।
বুলিমিয়া আর বিঞ্জ-ইটিং বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে প্রায় কাছাকাছি। পার্থক্য শুধু এই, বুলিমিয়া নার্ভোসায় বেশি খাওয়ার কারণে আপনার ভিতর একটা খারাপ লাগা কাজ করে। বিঞ্জ-ইটিং ডিসঅর্ডারে এই খারাপ লাগা তো কাজ করেই না, উল্টো আপনি মনে করেন যে বেশি যখন খেয়েই ফেলেছি, তাহলে চিন্তা করে কি আর লাভ হবে।
নিজের ভিতরের চিন্তাটা ধামাচাপা দেয়ার জন্য আপনি আরো বেশি করে খেতে থাকেন। আর অতিরিক্ত ক্যালরীটা ব্যালেন্স করার কথা একদমই ঝেড়ে ফেলেন মাথা থেকে।
আরো কিছু ধরণের ইটিং ডিসঅর্ডার আছে, যেগুলো বাচ্চা, গর্ভবতী মহিলা, এবং বয়স্ক লোকদের মধ্যে বেশি লক্ষ্য করা যায়।
পাইকায় আক্রান্ত একজন মানুষ খাদ্য নয় এমন জিনিস খাওয়ার জন্য আগ্রহী হয় বা খায়। যেমন – বরফ, নখ, ধুলাবালি, কলম, মাটি, চক, সাবান, কাগজ, চুল, কাপড়, উল, পাথরের কণা, ডিটারজেন্ট পাউডার ইত্যাদি। ছোট বাচ্চা, কিশোর-কিশোরী, মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের মধ্যে পাইকার লক্ষণ দেখা যায়। মাঝে মাঝে গর্ভবতী মহিলাদের মাঝেও এই প্রবণতা থাকে।
শুঁটকি দেখলেই কেমন বমি বমি লাগে, দুধ দেখলেই গা গুলিয়ে উঠে, ব্রোকলি দেখলে কেমন অস্বস্তি লাগে – এই ধরণের অনুভূতি একজন মানুষকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ থেকে দূরে রাখে। এটাই হচ্ছে অ্যাভয়ডেন্ট ফুড ইনটেক ডিসঅর্ডার।
বাচ্চাদের মধ্যে এটা বেশি লক্ষ্য করা যায়। পরিণতি হচ্ছে, বাচ্চারা খাবারের বেলায় অতিরিক্ত বাছবিচার করে। আবার অনেক সময় বয়স্ক মানুষেরা হজমশক্তির দুর্বলতা ও রুচিবদলের কারণে এই ডিসঅর্ডারে ভোগেন। গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যেও এই জাতীয় সমস্যা দেখা যায়।
এটা নতুন এক ধরণের ইটিং ডিসঅর্ডার। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজে থেকেই গিলে ফেলা খাবার উগড়ে পুনরায় চিবিয়ে খায় বা বমি করে ফেলে দেয়। খাওয়ার পর প্রথম ৩০ মিনিটে এই উগড়ে ফেলার কাজটা করা হয়৷
সাধারণত ৩ মাস থেকে ১ বছরের বাচ্চাদের মধ্যে রিউমিনেশন ডিসঅর্ডার দেখা যায়, পরে একসময় আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যায়। যদি বন্ধ না হয়, তাহলে বড় হওয়ার পরও এই ডিসঅর্ডারের কারণে ওজনহ্রাস, অপুষ্টি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।
যারা নাইট ইটিং সিনড্রোমে ভোগেন, তারা মাঝরাতে ঘুম ভেঙে ইচ্ছামত খেতে থাকেন।
এখানে লেখা কোন একটা লক্ষণের সাথে যদি আপনার আচরণ মিলে যায়, তাহলে নিশ্চিতভাবে আপনি ইটিং ডিসঅর্ডারে ভুগছেন।
এই ডিসঅর্ডার শরীরে বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরীণ ক্ষতি করে ফেলে৷ বাহ্যিক ক্ষতির মধ্যে চুল পড়া, নখ ভেঙে যাওয়া বা বিবর্ণ হয়ে যাওয়া, চামড়া রুক্ষ হয়ে যাওয়া, মানসিক সমস্যা ইত্যাদি আছে। আর আভ্যন্তরীণ ক্ষতির কথা গুনে হিসাব করা যাবে না। রক্তশূন্যতা, পানিশূন্যতা, হার্টের সমস্যা, মাল্টি-অরগ্যান ফেইলিউর, কোষ্ঠকাঠিন্য, অনিয়মিত মাসিক ঋতুস্রাব, অপুষ্টিসহ শরীরের ভিতরের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায় অস্বাভাবিক খাদ্যগ্রহণের ফলে।
মানসিক সাহায্যই ইটিং ডিসঅর্ডার সারিয়ে তোলার প্রধান অস্ত্র, কারণ অস্বাভাবিক খাওয়াদাওয়ার পিছনে দায়ী কারণগুলো বেশিরভাগই মানসিক সমস্যার কারণে হয়। যদি আপনার এই জাতীয় কোন সমস্যা থাকে, তাহলে কাছের মানুষের সাথে শেয়ার করুন। দরকার পড়লে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।
সবসময় ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে থাকবেন, নেতিবাচকতা একদম ঠেলে সরিয়ে রাখবেন। রইল বাকি মেডিকেল হেল্প৷ নিয়মিত ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ফলো করুন, ঠিকঠাক ডায়েট মেইনটেইন করার জন্য নিউট্রিশন এক্সপার্টের পরামর্শ নিতে পারেন। নিয়মিত ব্যায়াম করবেন, পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাবার খাবেন।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…