ধর্ম ও সংস্কৃতি

বাংলায় দুর্গা পুজো শুরু হওয়ার আদি ইতিহাস

আশ্বিনের শারদপ্রাতে ধরণীর বুকে বেজে ওঠে পুজোর সানাই। উমা আসেন বাপের বাড়ি। ভবের ভবানি মর্তে এলে গোটা বাংলা যেন সেজে ওঠে গৌরীকে আমন্ত্রণ জানাতে। হিন্দুদের কাছে এটি ঠিক ধর্মীয় উৎসব নয়, পুনর্মিলনের উৎসব।

বর্তমানে থিমের পুজোর চাকচিক্যে বাঙালির এই প্রানের উৎসব অনেকটাই তার আদি রূপকে হয়ত ভুলতে বসেছে। এই বহুকালের ঐতিহ্যের পিছনে রয়েছে অনেক ইতিহাস অনেক লোক কথা এবং অবশ্যই পৌরাণিক তথ্য।

পৌরাণিক তথ্য কি বলছে 

পৌরাণিক তথ্য অনুযায়ী বসন্তকালেই আসল দেবী দুর্গার আবাহনের সময়। কিন্তু রাজা রাম, রাবন বধের আগে দেবীকে এই আশ্বিন মাসে অকালে বোধন করেন। রামের আবাহিত দুর্গার দশ হাত এবং তিনি মহিষাসুর-মর্দিনী। এই দুর্গাকেই আমরা বরাবর পুজো করে আসছি।

প্রত্নতত্তের ভিত্তিতে দুর্গা বহু প্রাচীন দেবী। দুর্গার পুজো কবে থেকে শুরু হোল তার যথার্থ নথি সঠিক ভাবে পাওয়া যায়না। বৈদিক সাহিত্যে দুর্গার পরিচয় রয়েছে। বাংলাদেশে সম্ভবত মোঘল আমল থেকেই ধনী পরিবার গুলিতে দুর্গা পুজো সম্পাদিত হত।

দুর্গা পুজো শুরু কবে থেকে 

ইতিহাস মতে দেবীর পুজো সম্ভবত ১৫০০ শতকের শেষ দিকে প্রথম চালু হয়। সম্ভবত দিনাজপুর- মালদার জমিদার স্বপ্নাদেশের পর পারিবারিক ভাবে দুর্গা পুজো প্রথম শুরু করেছিলেন। এই দুর্গার রূপ যদিও একেবারে অন্যরকম।

লোককথা মতে এই আদি দুর্গার চোখ গোলাকার ও উজ্জ্বল এবং দেবী সাদা বাঘ ও সবুজ সিংহএর উপর অধিষ্ঠিত। আরেকটি সূত্র অনুসারে, তাহেরপুরের রাজা কংসশনারায়ন বা নদীয়ার ভবানন্দ মজুমদার বাংলায় প্রথম শারদীয়া বা শরৎ দুর্গা পূজা সংগঠিত করেন। এরপরে রাজশাহির রাজা এবং গ্রামের হিন্দু রাজারা নিয়মিতভাবে এই পুজা আরম্ভ করেন।

বারোয়ারি দুর্গা পুজোর সূত্রপাত 

দুর্গার বারোয়ারি পুজো সংগঠিত হয়েছিল বারো জন ইয়ার বা বন্ধুদের ইচ্ছায়। ১৭৯০ সালে গুপ্তিপাড়ার ১২ জন মিলে, অন্যদের সহযোগিতার সাহায্যে একত্র পুজোর এই ঐতিহ্যটি চালু করেন, একে বলা হত ‘বারো পল পূজা’। সম্ভবত কাশিমবাজারের রাজা হরিনাথ, কলকাতায় প্রথম দুর্গা পুজোর প্রচলন করেন। এরপরে ব্রিটিশ আমলের কলকাতায় প্রায় বহু বাড়িতেই দুর্গা পুজোর ইতিহাস পাওয়া যায়। বিখ্যাত নবকৃষ্ণ দেবের বাড়িতে এক বছর দুর্গোৎসবে যা খরচ করা হয়েছিল তাতে এই উৎসবটি প্রায় গ্র্যান্ড ফিস্টে পরিনত হয়।

১৯১০ সালে কলকাতায় প্রথম আনুষ্ঠানিক ভাবে বারোয়ারি পুজোর সুত্রপাত ঘটে। সনাতন ধর্মতসাহিনি সভা, বাগবাজারে সর্বজনীন দুর্গোৎসবের সূচনা করেন। এটি সম্ভব হয়েছিল জনসাধারণের সর্বত সহযোগিতার সাহায্যে।

তারপর থেকে কলকাতা সহ গোটা বাংলা জুড়ে দুর্গা পুজোর প্রবল প্রচার বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে এটি বাংলার জাতীয় পরিচয় হিসাবে পরিচিত হয়েছে।

সোহিনী গাঙ্গুলি

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago