ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে ঋতু ছয়টি থাকলেও তিনটি ঋতু সারাবছর মুখ্য হয়ে থাকে – গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত। গ্রীষ্মকাল মানে অয়েলি স্কিনে অবিরাম যন্ত্রণা, ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট। বর্ষাকালে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণে আবহাওয়াটা কেমন ভ্যাপসা গরম থাকে। আর ভ্যাপসা গরমে অয়েলি স্কিনে ইনফেকশনসহ নানা রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
শীতকালকে অনেকে আদর্শ ঋতু মনে করেন, কিন্তু এই সময়েই তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন লাগে সবচাইতে বেশি। কর্মব্যস্ত ঢাকাতে নারীদের পক্ষে অয়েলি স্কিনের যত্নআত্তি করা বেশ একটা ঝক্কির ব্যাপার। অনেকে হয়তো জানেন না ত্বকের জন্য কোন জিনিসটা কতটা কাজ করে। বিভিন্ন দূষণ এড়িয়ে ত্বককে উজ্জ্বল ও সুন্দর রাখাটা কঠিন হয়ে যায় তখন।
আবার আবহাওয়ার কখন কি মর্জি হয় সেটাও হুট করে বোঝা যায় না।
কাজেই শীত, গ্রীষ্ম বা বর্ষা, যেকোন সময়ে অয়েলি স্কিনের বেসিক কেয়ার ঠিকঠাকভাবে নিলে সারাবছর আপনি থাকবেন দুশ্চিন্তামুক্ত। তবে বেসিক কেয়ারের পাশাপাশি পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ ও ওয়াটার-বেইজড মেকআপ ব্যবহার করতে যেন ভুলবেন না। আজকে বলব ঢাকার সারা বছরের আবহাওয়া অনুযায়ী অয়েলি স্কিনের যত্নের স্টেপ বাই স্টেপ রুটিন নিয়ে।
ত্বক তৈলাক্ত হওয়ার পিছনে অনেকগুলো কারণ কাজ করে – যেমন জেনেটিক্স, আবহাওয়া, ডায়েট, হরমোন, ফেসওয়াশের অতিরিক্ত ব্যবহার, মুখে ভুলভাল স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করা ইত্যাদি। মূল কথা হচ্ছে, তেল উৎপাদনকারী হরমোনের সক্রিয়তাই তৈলাক্ত ত্বকের প্রধান কারণ। বয়ঃসন্ধিতে টেস্টোস্টেরন হরমোন তেল ও ব্রণের সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। আবার অতিরিক্ত ভাজাপোড়া বা তেলমশলা খাবার খেলেও ত্বক তেল চিটচিটে হয়ে পড়ে।
চলুন জেনে নেই কিভাবে ধাপে ধাপে অয়েলি স্কিনের যত্ন নিবেন।
অয়েলি স্কিনের জন্য বাজারে ভালোমানের ফেসওয়াশ পাওয়া যায়। গ্লিসারিন সমৃদ্ধ ফেসওয়াশ বা সাবান বা ক্লিনজার সারাবছর ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিদিন দুইবার (সকালে ও রাতে) ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন। ব্রণ কমানোর ফেসওয়াশ ব্যবহার করলে ত্বকের তেল শুষে যাবে, তাতে শীতে ত্বক আরো রুক্ষ হবে। তাই ফেসওয়াশটা যেন ব্রণ কমানোর না হয় সেটা খেয়াল রাখবেন। পাতিলেবুর রস প্রাকৃতিক ক্লিনজারের কাজ করে৷
বাইরের ধুলাবালি মুখে আটকে যায়, ফলে তেল আর জীবাণু মিলে ব্রণের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। আবার শীতে তেলতেলে মুখ শুকিয়ে মরা চামড়া উঠে। স্ক্রাবিং করলে এই সমস্যাগুলো কমে যাবে। বাজার থেকে ভালো মানের স্ক্রাবার কিনতে পারেন, বা ঘরে বানানো স্ক্রাবারও ব্যবহার করতে পারেন।
গরমের সময় শসার রস, চালের গুঁড়া এবং মধু দিয়ে বানানো স্ক্রাব ব্যবহার করুন। মধুতে অ্যালার্জি থাকলে ব্যবহার করার দরকার নেই। শীতে অ্যালোভেরা জেল আর চিনি একসাথে মিশিয়ে স্ক্রাবার বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
গোসল বা মুখ ধোয়ার পরে টোনারের ব্যবহার অতিরিক্ত তেলক্ষরণের সমস্যা কাটাবে। মুখ হালকা ভেজা থাকতে টোনার ব্যবহার করুন। তাহলে ত্বকের পিএইচ ব্যালেন্স ঠিক থাকবে। মুখের গভীরের ময়লা পরিষ্কারের পাশাপাশি টোনার লোমকূপ ছোট রাখে এবং তেল নিঃসরণ কমায়। এসেনশিয়াল অয়েলও ব্যবহার করতে পারেন। এটা তৈলাক্ত ত্বককে নরম ও মসৃণ রাখবে।
টোনার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও কুলিং ইফেক্ট সমৃদ্ধ টোনার কিনুন। ত্বক শান্ত থাকবে, হালকা অনুভূতি হবে৷ তবে শীতের সময় কুলিং ইফেক্টওয়ালা টোনার ব্যবহার না করাই ভাল। কটনপ্যাডের ব্যবহার না করে টোনার সরাসরি স্প্রে করে হাত দিয়ে চেপে চেপে মিশিয়ে দিন মুখে। অ্যালোভেরা জেল টোনারের চমৎকার বিকল্প।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য সকালে ও রাতে নির্দিষ্ট একটি সেরাম ব্যবহার করুন। বিভিন্ন সেরাম ব্যবহার করলে বা ঘন ঘন সেরাম পাল্টালে সেটা উল্টো ত্বকের ক্ষতি করবে। আপনার যদি ব্রণের সমস্যা বেশি থাকে তাহলে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ সেরাম আর যদি ওপেন পোর নিয়ে চিন্তিত থাকেন, তাহলে নিয়াসিনামাইড সেরাম ব্যবহার করবেন। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সেরামের ব্যবহার দিনের বেলায় দূষণ ও সূর্যের বেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে ঢাল হয়ে রক্ষা করে।
অয়েলি স্কিনের পাশাপাশি চোখের যত্ন না নিলে বয়স হওয়ার আগেই বুড়িয়ে যাবেন। তাই এসপিএফযুক্ত আইক্রিম লাগিয়ে নিবেন এরপর। নিয়মিত আইক্রিম ব্যবহার করলে চোখের চারপাশে বলিরেখা নিমেষেই দূর হবে।
অতিরিক্ত তাপমাত্রায় মুখের স্বাভাবিক আর্দ্রতা উবে যায়। শীতে তৈলাক্ত ত্বকও শুষ্কতা থেকে রক্ষা পায় না। হঠাৎ করে দেখা যায় ত্বক রুক্ষ হয়ে ফেটে যাচ্ছে। এই অবস্থা এড়ানোর জন্য ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন। ক্লিনজিং, স্ক্রাবিং, টোনিং ও সেরাম লাগানোর পরে ত্বকে ময়েশ্চারাইজারের ব্যবহারে আকস্মিক রুক্ষতা কমবে।
স্রেফ শসার রস মুখে লাগিয়ে রাখতে পারেন ময়েশ্চারাইজার হিসেবে। তেলবিহীন ক্রিম বা বেবি লোশনও ময়েশ্চারাইজিংয়ের কাজ করবে। যেই ময়েশ্চারাইজারই ব্যবহার করুন না কেন, সেটা অবশ্যই যেন জেল-বেইজড হয়। তাতে লোমকূপ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।
গরমের রোদ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই৷ বর্ষাকাল বৃষ্টিস্নাত থাকলেও হুটহাট রোদ উঠে ত্বকের বারোটা বাজাতে পারে৷ শীতের রোদ কড়া না হলেও তাতে ক্ষতিকর বেগুনি রশ্মি থাকে। এই রশ্মি ত্বকের জন্য খারাপ, আর্দ্রতা কমে যাওয়ার সাথে সাথে ত্বক পুড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটতে পারে। কাজেই ঋতু যেটাই হোক, ঘর থেকে বের হওয়ার আগে এসপিএফ ৩০ বা ৩০++ সমৃদ্ধ এবং বিশেষভাবে অয়েলি স্কিনের জন্য বানানো সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন।
সপ্তাহে দুইদিন ঘরোয়া ফেসপ্যাকের ব্যবহারে ত্বকের তেল চিটচিটে ভাব কম হওয়ার পাশাপাশি ত্বকে কমনীয়তা বজায় থাকবে। গরম আর শীতের ফেসপ্যাক হতে হবে সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ গরমের সময় যেসব উপাদান তেলতেলে ভাব কমিয়ে স্কিনকে রিফ্রেশড রাখে, শীতে সেসব উপাদানের ব্যবহার ত্বককে শুকিয়ে ফেলতে পারে এবং ত্বক ফেটে যেতে পারে।
গরমে অ্যালোভেরা জেলের ফেসপ্যাক ব্যবহার করুন। ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেলের সাথে এক চিমটি হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। অথবা হলুদের গুঁড়ার পরিবর্তে ২ টেবিল চামচ গোলাপজল দিতে পারেন।
বর্ষাকালে শুধু একটি পাকা টমেটোর রসও মুখে মাসাজ করে রাখতে পারেন। অথবা ২ টেবিল চামচ টকদই এবং ২ টেবিল চামচ ওটমিল ঘন করে মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করুন। শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানিতে মুখ ধুয়ে নিন। শীতে পাকা পেঁপে, মধু, আর টকদই চটকে ফেসপ্যাক বানিয়ে ব্যবহার করলে ত্বক থাকবে নরম ও কোমল।
সব ঋতুতে অয়েলি স্কিন ঠিক রাখতে পানির বিকল্প নেই। গরমে প্যাচপেচে অয়েলি স্কিন ঠিক রাখতে ঘন ঘন ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার চেষ্টা করুন। দিনে ৭-৮ বার স্বাভাবিক তাপমাত্রার ঠান্ডা পানিতে মুখ ধোবেন। পানিতে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে নিলে সেটা বাড়তি তেল শোষণ করে নিবে। তার সাথে সাথে শরীরকে ডিহাইড্রেটেড রাখার জন্য প্রচুর পানি পান করবেন। বর্ষাকালে ৩-৪ বার কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার চেষ্টা করুন।
শীতে পানির ব্যবহার করতে হবে সাবধানে। গোসলের সময় কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করলেও বেশিক্ষণ গোসল করবেন না। তাতে ত্বক রুক্ষ হয়ে যাবে। তবে পানি খেতে হবে প্রচুর। দৈনিক কমপক্ষে ৮/১০ গ্লাস পানি পান না করলে তৈলাক্ত ত্বক আরো মলিন ও রুক্ষ দেখাবে। নিয়মিত পরিমিত পানি পান না করলে রক্ত অপরিষ্কার থাকবে। তাতে তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণের সমস্যা আরো প্রকট হবে।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…