আর মাত্র হাতে গোনা কয়েক দিন তারপরই আসছে নববর্ষ। পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে আগমন জানাবার সময় আর এই নতুন বছরের আগমনের আগেই আসবে চৈত্র সংক্রান্তি। একটি বছরে মোট ১২টি সংক্রান্তি আছে, তারমধ্যে চৈত্রসংক্রান্তি অন্যতম। এই বছর চৈত্র সংক্রান্তি কবে আর এই দিন কী করবেন আর কী করবেন না সেইসব বিষয়ে জানাতেই হাজির হয়েছি আমরা।
বাংলা বছরের শেষ দিনটিকে চৈত্র সংক্রান্তি বলা হয়। অর্থাৎ নববর্ষের আগের দিন চৈত্রসংক্রান্তি পালন হয়। এই চৈত্রসংক্রান্তির দিন ই হিন্দু ধর্মের সবথেকে প্রধান উৎসব চড়ক মেলা হয়।
এই বছর ১৫ এপ্রিল নববর্ষ পরেছে,তার আগের দিন অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল চৈত্র সংক্রান্তি।
পুরাণে বলা হয় যে দক্ষ রাজাদের কন্যার নামে ২৭টি নক্ষত্রের নাম হয়েছিল। সেই কন্যাদের মধ্যেই দুজন কন্যার নাম ছিল চিত্রা আর বিশাখা সেখান থেকেই চৈত্র ও বৈশাখ নাম দুটি আসে।
চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নানা ধরনের অনুষ্ঠান হয়, তবে সেই সকল অনুষ্ঠান এর পিছনেও লুকিয়ে রয়েছে কিছু কারণ। সেই সকল অনুষ্ঠানগুলি কী কী এবং কী কারণে সেগুলি পালিত হয় চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।
পুরান মতে কথিত আছে চৈত্র সংক্রান্তির পূন্য লগ্নেই শিব ও কালীর মিলন হয়েছিল, তাই এই দিন শৈব ভক্তরা ও শক্তি উপাসকরা শিব-শক্তির উপাসনায় মাতেন। এটিকেই চড়ক পূজা বলা হয়। চড়ক পুজো আসলে শিব ও কালী প্রতীক।
নিঃসন্তান দম্পতিরা সন্তান লাভের আশায় এই পুজো করেন। এছাড়া দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি লাভের জন্য অনেকে এই পুজো করেন। বলা হয় যে,চড়ক পুজো করলে মনের যাবতীয় বাসনা পূর্ণতা পায়।
এইদিন সন্ন্যাসীরা শিব গৌরীর নৃত্য গীত সহকারে পূজার্চনা করেন। চরক পুজো অবধি তারা নিরামিষ খাদ্য ভক্ষণ করেন, পরে কাঁটাযুক্ত খেজুর গাছ থেকে খেজুর ভেঙে ভক্তদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে থাকেন।
কাঁটাযুক্ত খেজুর গাছ থেকে খেজুর ভেঙে ভক্তদের দেওয়ার অর্থ হলো কণ্টকময় সংসার এর মধ্যেও তারা যেন রস খুঁজে পাই। তাই যে সকল ভক্তরা প্রসাদ রূপে এই খেজুর পান তাদের জীবন আনন্দে ভরে উঠবে এমনটাই বিশ্বাস করা হয়।
এছাড়া এইদিন আরো কিছু লোকাচার পালন করা হয়। যেমন-
কৃষকরা এদিন গ্রাম থেকে শাক কুড়িয়ে আনেন ও নিজে হাতে সবজি ডাল ইত্যাদি রান্না করে থাকেন। এরপর তারা গ্রামের প্রাণবৈচিত্র্য ও নিরাপদ খাদ্য নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর নানারকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালন করা হয়।
এই অনুষ্ঠান পালনের মধ্য দিয়ে আমাদের জীবনে কৃষি কাজের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়।
চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে অনেক জায়গাতেই শিবের গাজন হয়, বিশাল মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মূলত চিত্তবিনোদনের জন্য ও শিবের গাজন এর মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভক্তির সঞ্চারিত করবার জন্যই এই গাজন অনুষ্ঠিত হয়।
নববর্ষ শুরুর এই আগের দিনটি অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তির দিনে কোন তীর্থক্ষেত্রে স্নান করলে অক্ষয় পূণ্য লাভ হয়।
চৈত্র সংক্রান্তির দিন উপবাস করে ভগবানের আরাধনা করুন, এটির ফলে সারাবছরে করা সকল কার্যের ক্ষমাপ্রার্থনা করা হয় ও ভগবানের আরাধনা করার ফলে নতুন বছরের আগমনটিও সুন্দরভাবে হয়। চৈত্রসংক্রান্তির দিন ভগবৎ আলোচনা করুন,কীর্তন শুনুন পারলে সারাদিনই মনে মনে ভগবানের নামজপ করুন এতে সংসারের খারাপ সময় কেটে যাবে।
চৈত্র সংক্রান্তির দিন সকাল বেলায় উঠে স্নান করে দরিদ্রকে কিছু দান করুন এটি অত্যন্ত সুফল দান করে। যার যেরকম অবস্থায় থাকুক না কেন সে যদি নিজের সাধ্যমত দরিদ্রকে দান করেন তাহলে সংসারের দৈন্যদশা কেটে যাবে।
চৈত্র সংক্রান্তির দিন প্রতিটি বাড়িতেই বিভিন্ন ধরনের খাবার প্রস্তুত করা হয়। বছরের শেষ দিনে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য গ্রহণ করে চৈত্র মাসকে বিদায় জানানোকে পূণ্যের কাজ বলে মনে করা হয়।
যারা প্রবীণ মানুষ তারা ইচ্ছে করলেও বার্ধক্যজনিত কারণে
চৈত্র সংক্রান্তির দিন নদীতে বা পুকুরে নেমে স্নান করতে পারেন না। এইদিন তাই তরুণ-তরুণীরা নদী থেকে জল এনে বাড়ির বয়স্কদের স্নান করিয়ে দেন। এভাবেই বাড়ির ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বছর শুরুর আগে নিজেদের কাজের মাধ্যমে প্রবীণ মানুষদের আশীর্বাদ আদায় করে নেন।এইদিন স্নান করানোর পর অতি অবশ্যই প্রবীণ মানুষদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করবেন।
সনাতন হিন্দু ধর্মে বলা হয় যে এই দিন শিব দুর্গার আরাধনা করলে অক্ষয় পূণ্য ফল অর্জিত হয় ও সেইসাথে মোক্ষ প্রাপ্তি হয়।
চৈত্র সংক্রান্তির দিন কোন প্রবীণ ব্যক্তির সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবেন না। বছর শেষের দিন সকলের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুন যাতে সকলের আশীর্বাদ আপনার নতুন বছরের পাথেয় হয়।
চৈত্র সংক্রান্তির দিন সাত্ত্বিক খাবার গ্রহণ করুন, পারলে নিরামিষ খাবার প্রস্তুত করে সেটি ভগবানকে নিবেদন করে প্রসাদরূপে গ্রহণ করুন। এর ফলে ভগবানের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ পায়।
চৈত্র সংক্রান্তির দিন সকাল বেলায় শয্যা ত্যাগ করে স্নান করে কোনো না কোনো কাজের মধ্যে দিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুন। বছর শেষের এই দিনটি অলসতা ত্যাগ করে পালন করলে বছরের শুরুটি ভালো হবে বলেই মনে করা হয়।
চৈত্র সংক্রান্তির দিন আপনার বাড়িতে যদি কেউ আসে, তাহলে তাকে কখনোই খালি হাতে ফেরাবেন না। আপনার সাধ্যমতো তাকে দান করুন, যদি কিছু না পান তাহলে নিদেনপক্ষে মিষ্টিমুখ করিয়ে তারপর বিদায় দিন। এমনটা বলা হয় যে, চৈত্র সংক্রান্তির দিন কোন মানুষকে খালি হাতে ফেরানো হলে ভগবান রুষ্ট হন যার ফলে সংসারে অভাব-অনটন শুরু হয়ে যায়।
চৈত্র সংক্রান্তির দিন মাথা ঠান্ডা রাখুন পারলে পারলে মৌনব্রত অবলম্বন করুন তবু এইদিন এমন কিছু কথা উচ্চারণ করবেন না যার ফলে কেউ কষ্ট পায় বা আপনার কারণে কারো চোখ থেকে জল বেরোয়। বছর শুরুর আগের দিন যদি আপনার কারণে কেউ মনোকষ্টে ভোগে তাহলে তা আপনার জীবনে অভিশাপ হয়ে যাবে।তাই ভুলেও এইদিন কারোর সাথে ঝগড়া বিবাদে জড়াবেন না।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…