কলকাতা

ব্যাপাইরা বাড়ির ভূতুড়ে গল্প পর্ব-১

অনিকেতের পায়ের তলায় সর্ষে। একটু ফাঁকা সময় পেলেই বেড়িয়ে পড়ে, ঘরে বসে থাকা ওর কুষ্ঠিতে নেই। সেই কবে এম.এ’ পরীক্ষা হয়ে গেছে, এবার বেড়োলেই হয়। কিন্তু, সঙ্গে যারা যাবে তাদের তো কোনো পাত্তাই নেই। সেই কবে থেকে ধ্রবর পিছনে পড়ে আছে অনিকেত। ওরে চল না রে, ওরে বেড়ো না রে বলতে বলতে মুখে ফেনা উঠে গেছে। তা ছেলের সময় হয় কই! ছেলেটা অবশ্য এরকমই খানিকটা, একটু ঘরকুনো গোছের। আবার হয়তো ঠিক ঘরকুনো বলা যায় না। কিছু কিছু মানুষ থাকে না, যাদের কাছে বাড়িটাই প্যান্ডোরা’স বক্সের মতো। সবকিছু সেখানেই পায় তারা।

সে যাই হোক, যে কথা হচ্ছিল, ঘোরা নিয়ে। এইসব হুজুগে অনিকেতের একমাত্র ভরসা তিতাস। বাইরে থেকে দেখে মনে হয় ভাজা মাছটা উল্টে খেতে পারে না, সদ্য টপকালো পৃথিবীতে, কিন্তু তাকে যে না চিনেছে সে এখনও মায়ের গর্ভে আছে। একটু অ্যাডভেঞ্চার -প্রিয় মেয়ে, পারলে এক্ষুনি বেড়িয়ে পড়ে রক ক্লাইম্বিং করতে। হানিমুনটা বোধহয় মেয়ে জঙ্গলে কাটাতেই বেশি পছন্দ করবে।

কিন্তু এতক্ষনে তো আপনাদের দলের হার্টথ্রবের কথা বলিই নি, সম্পূর্ণা। এই মেয়ের জন্মই হয়েছে খাবার জন্য। মেয়ে চন্দননগর যাবে, কেন! ভাববেন না ইতিহাসের ছোঁয়া পেতে যাচ্ছে । সূর্য মোদকের মিষ্টি খাবে- এটাই উদ্দেশ্য। ভাবুন খালি! অনেকদিন আগেই হয়ে যেত ঘোরাটা, হয়নি ওর জন্যই। মেয়ের প্রতিজ্ঞা যতদিন না এম.ফিলে ভর্তি হচ্ছে ততদিন কোথাও যাবে না। টেনশন নিয়ে কী ফূর্তি করা যায়! এখন মেয়ে ভর্তি হয়েছে, তো চুটিয়ে মস্তি করতে বেড়িয়ে গেলেই হয়।

কোথায় যাবে! কোথায় যাবে! তো এই জগাখিচুরি চিল্লার পার্টি ঠিক করলো যে তারা যাবে বর্ধমানে- কেতুগ্রামে। কেতুগ্রামে অনিকেতের মাসির বাড়ি। অনেকদিন ধরেই বলছিলেন মাসি অনিকেতকে যেতে। পড়ার চাপে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। এবার গোটা গ্যাং নিয়ে যাচ্ছে। একদিক দিয়ে ভালো- থাকা খাওয়ার টাকাটা বাঁচে আর কি! এই টাকাটা শুভকাজে খরচ করা যাবে। শুভকাজ মানে বুঝলেন না তো? মাল খেয়ে চুর হওয়া আর ভুলভাল বকা, তিতাসের ভাষায় মোচ্ছব করা।

তা যাবার দিন সে এক কান্ড। অনিকেত আর সম্পূর্ণা একসঙ্গে যাদবপুর থেকে চলে গেছে হাওড়ায়, এগারোটার কাছাকাছি ট্রেন। সমস্যা হল ধ্রব আর তিতাসকে নিয়ে। তিতাসের বাড়ি এই হাওড়ার দিকেই। কিন্তু, কয়েকদিন হল সে মামারবাড়ি আছে, বেহালায়। ধ্রবর বাড়ি বেহালাতেই। তাই দুজনে ঠিক করেছিল একসঙ্গে আসবে। এলোও তাই, হন্তদন্ত হয়ে ঘেমে নেয়ে। স্টেশনে আসার পর অনিকেত জিজ্ঞাসা করলো যখন ‘কীরে তোদের এত দেরী হল কেন?’ তখন প্রায় খন্ডযুদ্ধ বেঁধে যাবার সামিল।

ধ্রবঃ ‘কারোর যদি কান্ডজ্ঞানের অভাব থাকে তো এই হয়’।

তিতাসঃ ‘এই এই কার কান্ডজ্ঞানের অভাব?’

ধ্রবঃ ‘অভাব নয়! একজনকে তো ফোন করলে পাওয়া যায় না’

তিতাসঃ ‘আর আরেকজনকে হোয়াটসঅ্যাপ করলে পাওয়া যায় না কারণ তার নেট ব্যালেন্স ভরানো নেই’

ধ্রবঃ ‘বেশ করেছি। তোর কথায় ভরাব নাকি! মিট করার টাইমটা বললাম রাতে ফিক্সড করে নে, না, ওনার সিরিয়াল দেখার আছে। বললেন শোবার আগে জানিয়ে দেবেন। তা রাত দুটো অব্দি বসে থেকেও ফোনের পাত্তা নেই, ফোন করলে ধরার নাম নেই।‘

তিতাসঃ ‘তা ঘুমিয়ে পড়লে কী করতে পারি!’

এই ঝগড়া আরও চলতে পারত,  আপাতত ট্রেনের হুইসেল শুনে সন্ধি করতে বাধ্য হল। আশ্চর্য সম্পর্ক এই দু’জনের। পাঁচ বছর একসঙ্গে পড়ল, প্রায় পাশাপাশিই বসত ক্লাসে, একসঙ্গে সবাই টুকটাক বেড়াতে যেত, কিন্তু, দুজনেই ফোনে পাঁচ মিনিটের বেশি কথাই বলেনি। সেই কথাও শুধু পড়াশোনা নিয়ে কথা; কবে কোন ক্লাস হল, একটু এইদিনের ক্লাস নোটটা আনিস, কী বই পড়ছিস এই পরীক্ষাটার জন্য এইসব। কিন্তু তাও… আচ্ছা থাক। আপাতত ট্রেন এসে গেছে, ওঠা যাক।

ট্রেনে উঠে ধ্রব গিয়ে বসল জানালার ধারে, ওটা ওর প্রিয় জায়গা। সবাই জম্পেস করে গুছিয়ে বসল। সম্পূর্ণা স্যান্ডউইচ এনেছিল সবার জন্য, খাওয়া শুরু হল। খেতে খেতে অনিকেত শুরু করল কথা বলা, ‘জানিস তোদের এখানে নিয়ে যাওয়ার পিছনে একটা কারণ আছে’।

ধ্রবঃ ‘কী কারণ?’

অনিকেতঃ ‘মাসির কাছে অনেকবার শুনেছিলাম এটা। মাসির বাড়ির থেকে এই ধর ঘন্টাখানেক লাগবে যেতে, তো একটা বাড়ি আছে আগেকার দিনের, ব্যাপাইরা বাড়ি। সম্পূর্ণা, বাড়িটায় নাকি ভূত আছে।‘

তিতাসঃ ‘আরিব্বাস, যেতে হচ্ছে তাহলে!’

সম্পূর্ণাঃ ‘একদম না, আমি নেই এতে। তোরা জানিস আমি ভুতে ভয় পাই।‘

ধ্রবঃ ‘হু, তাই মামণি অ্যানাবেল ক্রিয়েশন দেখেন না, চোখ বুজে শোনেন খালি। অদ্ভূত!’

অনিকেতঃ ‘আমি লাস্ট গেছিলাম মাসির বাড়ি পাঁচ বছর আগে, ফার্স্ট ইয়ারে পড়তে। গেছিলাম বাবা-মায়ের সাথে। বাড়িটাকে ছক ছিলাম যাবো বলে, কিন্তু ওই বাবা, মা, মাসি এরা যেতেই দিচ্ছিল না ওইদিকে। আমি তো ভালো চিনি না। তা দা’ভাইকে বললাম চ, গেল না ভীতুর ডিমটা। এবার তোদের সঙ্গে নিয়ে যাবো এক্সপিডিশনে।‘

তিতাসঃ ‘মিশন ব্যাপাইরা বাড়ি, ইয়েস। শোন না, মালটা ওখানেই খাবো।‘

ধ্রবঃ ‘বেশক!’

——————                    (ক্রমশঃ)

Nandini Mukherjee

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago