প্রধান তোরণ পেরিয়ে যখন ওরা এল তখন সন্ধ্যে সাতটা মতো। তোরণটা নজর কারার মতো দেখতে। পেল্লাই থামের অপরে আর্চ। পুরো উনিশ শতকীয় গথিক স্ট্রাকচার। দুই থামের দুই দিকে পরী। আর্চের ওপরে মাঝখানে ভাঙ্গা সিংহ। একটু এগিয়ে গেলে সামনের ফোয়ারার জায়গা, এখন আর সেই সব নেই। ধুলো ময়লা জমে আছে। চারিদিকে শুকনো পাতা। একটা কুকুর বিনিয়ে বিনিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে। কাল অমাবস্যা গেছে, তাই অন্ধকারটা আজও বেশ জোড়ালো। মোট জায়গাটা বোধহয় দশ না বারো একর। তার মাঝে পেল্লাই অট্টালিকা আজ শ্মশান। ইটের গাঁথনি অনেক জায়গাতেই খসে গেছে। যেখানে সেখানে আগাছা গজিয়েছে। কে বলবে এই বাড়িতেই একদিন নাকি দশ দশ জন মালি কাজ করত। গাড়ি বারান্দাটা আজ ফাঁকা। যে বাড়িতে একসময় সন্ধ্যেবেলা হাজার হাজার বাতি জ্বলে উঠতো, সেই বাড়ির সবকটা বাতিদন্ড আজ ভাঙ্গা। অর্ধনগ্ন মূর্তিগুলো অনেককালের জমাট বাঁধা অন্ধকারের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
তিতাসের এবার একটু বসতে হবে। পা টা এর মধ্যেই একটু ফুলে গেছে। সিড়ির একটা ধারে বসে পড়ল সবাই। আসলে এই প্রথম তো এরা এইরকম জায়গায় এল, তাই সবাই একটু হলেও নার্ভাস। এমনকি যে অনিকেত কিনা এত হুজুক নিয়ে এল সেও খানিক চুপসে গেছে। অবশ্য তার তো বেশিক্ষন এক জায়গায় বসা ধাতে নেই। খানিক বসে সে বলল না! এবার উঠি। চারপাশটা একটু ছকে নেই। এখানে একটা নাকি কুয়ো আছে বড়। ওটা নিয়েও কি সব গল্প আছে। ওই সম্পূর্ণা আয়, আমি আর তুই ওটা খুঁজে আসি। তিতাস বসুক খানিক’।
সম্পূর্ণাঃ ‘আমি কোথাও যাবো না। এই অন্ধকারের মধ্যে, ধুর বাবা! ধ্রবকে নিয়ে যা’।
অনিকেতঃ ‘আমি তোকেই নিয়ে যাবো। এই ধ্রব তুই একটু বস তো তিতাসের সঙ্গে। আমি এই মেয়েটাকে আজ এখানেই অ্যানাবেল ক্রিয়েশন দেখিয়েই ছাড়বো। চল’, বলে হাত ধরে টানতে টানতে সম্পূর্ণাকে নিয়ে গেল।
তিতাস আর ধ্রব বসে আছে। এই প্রথম বোধহয় দুই বন্ধুর পাশাপাশি একা বসে থাকা। খানিক ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে। বেশ খানিকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকার পর তিতাস বলল, ‘এই শোন, চুপ করে বসে থাকার চেয়ে ওদের সঙ্গে গেলে ভালো করতিস’।
ধ্রবঃ ‘ব্যথা কেমন আছে?’
তিতাসঃ ‘আছে মোটামুটি। তোকে সেই নিয়ে ভাবতে হবে না’।
ধ্রবঃ ‘তখন ওদের সামনে ওভাবে কী না বললেই হচ্ছিল না! আমার হাত ধরে আসলে কী এমন ক্ষতি হত? তুই আমার সঙ্গে সবসময় এভাবে কথা বলিস কেন?’
তিতাসঃ ‘কেন আসব হাত ধরে? যে ছেলেটার সঙ্গে আমার পাঁচ বছরে ফোনে দশ মনিটের বেশি কথা হয় নি, যার কখনও মনে হয়নি আমার সঙ্গে পড়ার বাইরেও খানিক গল্প করা যায়, চারজনে একসঙ্গে বেরোলে যে আমার থেকে দশ হাত দূরে দূরে হাঁটে আমি কেন তার হাত ধরে হাঁটব ভাই! তুই কখনও ভেবে দেখেছিস আমি কেন তোর ওপর এত রেগে থাকি? তা ভাববি কেন! সময় নষ্ট হবে কিনা। ওই সময়ে বাড়ি বসে দু’পাতা পড়লে কাজে দেবে’।
ধ্রবঃ ‘এখন কী এই কথাগুলো বলার সময়?’
তিতাসঃ ‘না, একদমই সময় না । তুই আমায় রোজ যে অগাধ সময় দিয়ে রাখিস সেই সময়ে কথাগুলো বললেই হত। আমি শখ করে এই খান্ডারে বসে এইসব বলছি’।
ধ্রবঃ ‘এভাবে নাই বা বললি! আমি বুঝি যে……’
তিতাসঃ ‘কী বুঝিস? কিচ্ছু বুঝিস না। বুঝলে এত না না করতিস না। ন্যাশনাল লাইব্রেরি যাবি-না, সাহিত্য অকাদেমি যাবি-না, বইমেলা যাবি-না। ভাই পড়ার জায়গায় যাবার কথাই বলতাম তোকে, আড্ডা দিতে যেতেও বলতাম না । তাতেও না। কিন্তু চারজন গেলে হ্যাঁ। এই তোর এত আপত্তি কেন হয় আমার সাথে বেড়োতে? এত ভয় কীসের? আমি বাঘ না ভাল্লুক যে ছিড়ে খাবো!’
ধ্রবঃ ‘আমি আসলে……’
তিতাসঃ ‘অজুহাত দিবি না। আমার এই কথাগুলো বলার পর অজুহাত শুনতে ভালো লাগবে না। সম্পূর্ণা আসছে বোধহয়। এখন এইসব কথা থাক। শুধু এইটুকুই বলি দরদ দেখাতে আসবি না। যদি কখনও মনে করিস দরদ দেখানোর জায়গায় যেতে পারবি সেদিন দেখাস’।
কেতুগ্রামের এই শতাব্দী প্রাচীন মহলে অনেক শুকনো পাতার মর্মর শব্দ হয়েছে। বৃষ্টিও পড়ে গেছে অঝোরে। প্রতিক্রিয়া হবার মতো মনটা আসলে এখানে অনেকদিন হল হারিয়ে গেছে। মরে হেজে গেছে সব। আজ এই ভূতুড়ে অট্টালিকায় হাহাকারের মধ্যে যদি আবার বৃষ্টি হয়, তাতে যদি কোনো শুকনো গাছ সবুজ হয় কেউ কী তা দেখতে আসবে!
———————— (ক্রমশঃ)
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…