Most-Popular

ব্যাপাইরা বাড়ির ভূতুড়ে গল্প পর্ব-২

ট্রেন এসে পৌছালো বর্ধমানে। গরমটা একটু বেশিই লাগছে এখানে। স্টেশনে অনিকেতের মাসতুতো দাদা ধীমান অপেক্ষা করছিল। এখন চাকরি করে, দেখতে শুনতেও বেশ। সম্পূর্ণা চাপ খেয়ে গিয়েছিল। তা হাই-হ্যালো পর্ব শেষ করে, কুশলমঙ্গল জিজ্ঞাসা করতে করতে যখন বাড়িতে পৌছানো হল তখন প্রায় বেলা গড়িয়ে এসেছে। সবার পেটেই ছুঁচো ডন মারছে। এখানে এলেই অনিকেত পুকুরে স্নান করতে যায়, এবার খিদের চোটে দু মগ জল গায়ে কোনোরকমে ঢেলে খেতে বসল। চব্য চোষ্য খেয়ে সবাই খানিক গড়িয়ে নিয়ে বিকেলে বেরোল সামনেই এক মন্দিরে আরতি দেখতে। আরতি দেখাটা ছুতো, আসল কথা ব্যাপাইরা বাড়ি যাবার প্ল্যান বানানো।

অনিকেতই বলতে শুরু করল, ‘বাড়িটার নাম কেমন অদ্ভূত না, ব্যাপাইরা বাড়ি!। জানিস কেন এমন নাম?  অনেক বছর আগে এখানে যিনি জমিদার ছিলেন তিনি নাকি খুবই বিলাসী  ছিলেন, যেমন হন জমিদাররা। বড় করে দুর্গাপুজো তো হতই, গ্রামের সব লোকের পাত পরতো। গোটা অঞ্চলটা আলো দিয়ে সাজানো হত, ভিয়েন বসত। এরপর কালীপুজোয় লাখ লাখ টাকার বাজি পোড়ানো। সারাবছরই বিশেষ বিশেষ তিথিতে বিশেষ পুজো হত, জমিদার গিন্নির উদ্যোগে। মোট কথা সারাবছরই এই বাড়িতে কিছু না কিছু  ব্যাপার লেগেই থাকত।‘

সম্পূর্ণাঃ ‘ আর তাই বাড়িটার নাম ব্যাপাইরা বাড়ি, রাইট?’

অনিকেতঃ ‘একদম। কিন্তু আজ বাড়িটায় কেউ যায় না রে। পুরো খান্ডার হয়ে গেছে।‘

ধ্রবঃ ‘কেউ থাকে না তাহলে?’

অনিকেতঃ ‘তা নয়, একজন বয়স্ক ভদ্রলোক নাকি থাকেন। তিনি কী যে খান, কী যে করেন কেউ জনেন না, জানার আগ্রহও নেই কারোর অবশ্য। দেখা যাক, যদি গেলে দেখা হয় ওনার সাথে।‘

তিতাসঃ ‘আমার কিন্তু বেশ লাগছে ইয়ার। কত্তদিন পর এরম একটা অ্যাডভেঞ্চারে আসা গেল। এই পড়া পড়া করতে করতে জীবনটা ম্যাদা মেরে গেল শালা!’

অনিকেত একটা বিয়ারের বোতল বের করে বলল, ‘নাও খানিক ঢেলে নাও দেখি গলায়।‘

ধ্রবঃ ‘এটা কোত্থেকে জোগাড় করলি রে?’

অনিকেতঃ ‘আরে বাজারে দোকান আছে একটা, দা’ভাইকে দিয়ে আনিয়েছি। মালটা ভীতু হলে কী হবে, এইসব দিকে বেশ সরেস। ওর কাছেই তো প্রথম দীক্ষা পাওয়া। তা আমাদের মধ্যে একজন চুপচাপ কেন! কিরে সম্পূর্ণা?’

সম্পূর্ণাঃ ‘কি বলব! এই সব ভূতের কান্ড হবে জানলে আমি আসতামই না।আমি জানি তুই ইচ্ছা করে বলিসনি আগে প্ল্যানটা। ওই বাড়িতে গিয়ে যদি আমি মরে যাই! এখনও তো বিয়ে, বাচ্ছাকাচ্ছা কিছুই হল না বল! ওই তিতাস আমি যাবো না।‘

তিতাসঃ ‘চুপ কর তো! তুই আমার সঙ্গে সঙ্গে থাকবি। ফ্রেন্ডস চলো এবার আমরা প্ল্যানটা করে ফেলি’।

ধ্রবঃ ‘আচ্ছা অনি, তোর মাসি আমাদের ছাড়বেন যদি বলি আমরা ওখানে যাচ্ছি?’

অনিকেতঃ ‘ধুর! সত্যিটা বলছেই বা কে। শোন, ওই বাড়িটায় যাবার পথে একটা চন্ডী মন্দির আছে। মন্দির থেকে বাড়িটা ম্যাক্সিমাম আধ ঘন্টা। তো ওই মন্দিরের সামনে প্রতিবছর এই সময়ে একটা বড় মেলা হয় তিন চার দিন ধরে। এবারেও মেলাটা শুরু হয়েছে। আসার আগে দা’ভাইয়ের থেকে সব জেনে নিয়েছি বস। ওই মেলায় যাবার নাম করেই আমরা বেরবো’।

তিতাসঃ ‘উফ! ভাবলেই আনন্দ হচ্ছে ভাই। কত্তদিন বড়দের গ্যাস খাইয়ে কোথাও বেরনো হয়নি।‘

অনিকেতঃ ‘কাল দুপুরে খেয়ে নিয়ে আমরা বেড়িয়ে পড়ব। যাবার পথে বাজার থেকে মাল-টাল কিনে নেব, ব্যস। ভূতুড়ে বাড়িতে মাল খেয়ে আমি ভূতের সঙ্গে লিভ-ইন করবো। ফুল্টু মস্তি হবে ইয়ার’।

পরের দিন প্ল্যান অনুযায়ী সবাই খেয়ে নিয়ে রওনা দিল। অনিকেতের মাসি বারবারই বলছিলেন ধীমানকে সঙ্গে যেতে। তা মালটার নাকি কাজ আছে। কাজ না ছাই! যাবে তো প্রেম করতে। তা সঙ্গে যায়নি বেশ হয়েছে। অনিকেত টর্চ, দেশলাই সব নিয়ে নিয়েছে। একটা ছোট শিশিতে কার্বোলিক অ্যাসিডও এনেছে। পুরো ব্লু-প্রিন্ট করেই এসেছে ছেলে বোঝা যাচ্ছে।

চন্ডীর মন্দির থেকে মিনিট পনেরো  দূরে একটা প্রশাসনিক ভবন মতো আছে। ওই অব্দিই রিক্সা যায়। অগত্যা ওদের বাকী রাস্তাটা হেঁটেই যেতে হল। সম্পূর্ণার এত হাঁটা পোষায় না। গজগজ করতে করতে বলল, ‘আজ আমার দিনটাই নষ্ট। এখন নাকি হেঁটে হেঁটে যাবো ভূত দেখতে, যত্তসব। এর থেকে মেলায় গিয়ে কত্তকিছু খাওয়া যেত। তা না, একেই বলে সুখে থাকতে ভূতে কিলায়’।

তিতাসঃ ‘তুই থামবি মা আমার! দেখ আমরা সবাই তো আছি। আর এটা একটা মজা……আঃ’।

তিতাস আসলে একটু পিছনে পিছনে হাঁটছিল। হঠাৎ সে চিল্লে ওঠায় সবাই পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখল ও বসে পড়েছে পায়ে হাত দিয়ে।

সম্পূর্ণা দৌড়ে এসে জিজ্ঞাসা করলো,’ কীরে কী হল?’

তিতাসঃ ‘ আরে কিছু না, একটু পা টা হাল্কা মচকে গেল আচমকা। খানিক বসি ঠিক হয়ে যাবে’।

অনিকেতঃ ‘আজ আর গিয়ে লাভ নেই তাহলে। চল ব্যাক করি, ওইটুকু একটু কষ্ট করে চল, গিয়ে রিক্সায় উঠি। একটু সাবধানে হাঁটবি তো বল’।

তিতাসঃ ‘আরে বাবা কিচ্ছু হয়নি, চিল! ব্যাক করার প্রশ্নই ওঠে না, আজ যাওয়া হবে’।

ধ্রবঃ ‘ছাড় না ভাই, যেতে চাইছে যাক। জেদ। এই জেদের জন্যই একদিন… নে চল আমার হাত ধর, আস্তে আস্তে চল’।

তিতাস একটা ঠান্ডা দৃষ্টিতে ধ্রবর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে বলল, ‘থ্যাঙ্কস বাট আমি রাস্তায় একাই চলি, তাতেই অভ্যস্ত। তাছাড়া সবসময় পা মচকে গেলে সঙ্গে যাবার জন্যে কেউ যে থাকবে তা নাও হতে পারে, তাই না? এত ভাবিস না তুই, আই উইল ম্যানেজ’।

চার বন্ধু আবার হাঁটা শুরু করলো। চারিদিকে খুব একটা যে লোকজন আছে তা নয়। খুবই নিঝুম জায়গা। আর পাঁচ মিনিট গেলেই বাড়িটা। এইতো বাড়ির তোরণ দেখা যাচ্ছে, মানে প্রায় চলেই এল ওরা। দেখা যাক কী অপেক্ষা করছে ভেতরে ওদের জন্য।

——————–                 (ক্রমশঃ)

Nandini Mukherjee

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago