সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ব্রণ ভরা মুখটা দেখতে কার ভালো লাগে বলুন তো! এভাবে সকাল শুরু করা মানে গোটা দিনটাই নষ্ট হওয়া। মুড অফ, বিরক্তি, মেজাজ গরম, যার প্রভাব পড়তে পারে আপনার প্রফেশনাল বা ব্যক্তিগত জীবনেও।
আর এই ব্রণর জন্য ডাক্তারের কাছেও যেতে ইচ্ছে করে না। তাই খুব ভালো হয় না যদি ঘরোয়া উপায়েই সারানো যায় এই ব্রণ? এইজন্যই ‘দাশবাসে’র পক্ষ থেকে আজ হাজির হয়েছি কিছু সহজ উপায় বলার জন্য, কীভাবে আপনি ব্রণ দূর করতে পারবেন খুব সহজে।
ব্রণ হয় মূলত বয়ঃসন্ধির সময়। ১৩ থেকে ১৯, যেই সময়টাকে ‘টিন-এজ’ বলে, সেই সময়েই আমরা এই ব্রণর সমস্যা হতে দেখি। এই সময় ছেলে-মেয়েদের মধ্যে হরমোনগত কিছু পার্থক্য হতে শুরু করে। হরমোন ক্ষরণের মাত্রার মধ্যে তেমন ভারসাম্য থাকে না। তাই তৈলগ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত তেল আর সিবাম ক্ষরণ হতে থাকে।
লোমকূপ বন্ধ হয়ে গিয়ে ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুর ফলেই ব্রণ হয়। ব্রণর জীবাণুর নাম হল ‘প্রোপাইনো ব্যাকটেরিয়াম অ্যাকনে’। আবার শুধু বয়ঃসন্ধি নয়, অনেকসময় পিরিয়ড হওয়ার সময়তেও মেয়েদের ব্রণ হতে থাকে। সেটা শুধু যে বয়ঃসন্ধির সময় হয় তা নয়, পরেও হতে পারে।
ব্রণ কেন হয়, তা তো জানলেনই, এবার এর থেকে তাড়াতাড়ি মুক্তি কীভাবে পাবেন, তাও জেনে নিন। খুব বেশী কিছু করতে হবে না, সহজে হাতের কাছে পেয়ে যাবেন, এমনই কিছু উপাদান দিয়ে ব্রণ সারাবার পথ বলে দেব আজ।
তেলতেলে ত্বক যাদের, তাদের ব্রণ বেশী হয়। তাই ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে হলে আগে তেলতেলে ভাব কমানো দরকার, অর্থাৎ তেল নিঃসরণ কম করা দরকার। মুলতানি মাটি এক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
কয়েক টুকরো শসা পেস্ট করে নিয়ে তার থেকে রস বের করে নিন। এরপর এর সাথে মুলতানি মাটি মিশিয়ে একটা স্মুদ পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটা দিয়ে মুখে ভালো করে ম্যাসাজ করুন হালকা হাতে। দেখবেন তেলতেলে ভাব কমে আসছে। এটা পারলে রোজই করুন, নয়তো একদিন অন্তর অন্তর। যদি এটা রোজ না করতে পারেন, তো শুধু শসার রস দিয়ে মুখ ধুলেও হবে। এটা পারলে রোজ করুন।
আমরা সবাই জানি নিমপাতা আমাদের ত্বকের জন্য কত ভালো। আর ব্রণর জন্য নিমপাতা যে অব্যর্থ সেটা তো আমরা জেনেই গেছি। এর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্রণর জীবাণুর থেকে রক্ষা করে। তাই নিমপাতা ব্যবহার করুন।
নিমপাতা বেটে নিন। এবার এর সাথে গোলাপজল মিশিয়ে নিন। ‘দাশবাস’এর সৌজন্যে তো আপনারা জেনেই গেছেন যে কীভাবে ঘরেই বানাতে হয় গোলাপজল। বানিয়ে নিন সেইভাবে। এবার এই মিশ্রণটা মুখে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট মতো। তারপর ধুয়ে ফেলুন ঠান্ডা জল দিয়ে। সপ্তাহে দু’দিন করুন এটা।
চন্দন যে ত্বকের জন্য ও ব্রণ দূর করতে খুবই কার্যকরী তা আমরা জানি। এর সাথেই মিশিয়ে নিন হলুদ বাটা।
দুটি উপকরণ ভালো ভাবে মিশিয়ে নিন। এরপর ওটা যেখানে যেখানে ব্রণ আছে সেখানে লাগিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পর ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একদিন করুন। ব্রণ আর ব্রণর দাগ, দুইই দূর হয়ে যাবে।
তুলসী পাতার যে অশেষ গুণ, তা তো আপনারা জানেনই। ব্রণর সমস্যা সমাধানেও তাহলে কাজে লাগিয়ে নিন তুলসী পাতাকে।
তুলসী পাতা থেকে রস বের করে নিন। সেই রস ব্রণর জায়গায় লাগান। ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। পারলে রোজ করুন এটা।
সামনেই শীতকাল আসছে। অনেক অনেক কমলালেবু খাব আমরা। তা এবার কমলালেবু শুধু না খেয়ে ব্রণর জায়গাতেও লাগান। দেখবেন উপকার পাবেন।
মুসুরির ডাল বেটে রাখুন। এর সাথে কমলালেবুর কোয়া বেটে দিতে পারেন বা রসও ব্যবহার করতে পারেন। এর সঙ্গে মুসুরির ডাল বেটে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটা মুখে লাগিয়ে রাখুন ৩০মিনিট মতো। তারপর ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিন। দেখবেন ব্রণও কমছে, ত্বকের উজ্জ্বলতাও বাড়ছে।
পুদিনা পাতা আমাদের ফ্রেস করতে খুব সাহায্য করে। ব্যাকটেরিয়ার ক্ষতিকারক দিক থেকেও পুদিনা রক্ষা করে। তাই ব্রণর জন্য পুদিনা ব্যবহার করুন।
পুদিনা পাতা বেটে নিন। সেই বাটাও ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়া শুধু রসও নিতে পারেন। সেটা লাগিয়ে নিন ব্রণর জায়গায়। লাগিয়ে রাখুন ১০ মিনিট মতো। তারপর ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন একটা ফ্রেস ফিল হচ্ছে আর ব্রণও আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে।
মুখ পরিষ্কার না থাকলে ব্রণ হতেই থাকবে। তাই দরকার মুখ পরিষ্কার করা ভেতর থেকে। এর জন্য পাকা পেঁপে দিয়ে স্ক্রাব করুন।
পাকা পেঁপে বাটা আর চালের গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। এর সঙ্গে পাতিলেবুর রস মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটা সারা মুখে লাগিয়ে নিন। হালকা হাতে ম্যাসাজ করতে থাকুন। এবার পরিষ্কার ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটা সপ্তাহে দু থেকে তিন দিন করুন। কয়েকদিন পর থেকেই আপনি বুঝতে পারবেন পার্থক্য।
রসুন শুনে কি একটু অবাক হলেন? না না, ব্রণ দূর করতে কিন্তু রসুন খুব উপকারী। রসুনে আছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা ব্রণর জীবাণুকে বেশী সংক্রামিত হতে দেয় না। তাই রসুন ব্যবহার করুন।
রসুন ভালো করে বেটে নিন। জলের সাথে একটু মিশিয়ে নিন। এবার এটা যেখানে যেখানে ব্রণ হয়েছে সেখানে লাগিয়ে নিন। ৫ মিনিট মতো রাখুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন। এটা পারলে রোজ করুন। দেখবেন খুব তাড়াতাড়ি উপকার পাচ্ছেন।
ব্রণ হওয়া মানেই তার সঙ্গে আছে জ্বালা। আর এই জ্বালা সহ্য করার মতো কষ্ট কিছুই হয় না। তার সঙ্গে থাকে একটা গরম ভাব। এই সব থেকে খানিক রেহাই পাওয়া যায় বরফ ব্যবহার করলে।
একটা কাপড়ের মধ্যে বরফ টুকরো নিয়ে সেটা ব্রণর জায়গায় ঘষুন হালকা করে। এটা রোজ পারলে দিনে দু’বার করে করুন। দেখবেন ব্রণর জ্বালা অনেক কমে যাবে, খানিক আরাম পাবেন।
শুধু মুখে কিছু মাখলেই কিন্তু হয় না ব্রণ দূর। তার জন্যে অন্য অনেক কিছু করতে হবে। যেমন বেশী তেল, ঝাল, মশলা কম খাওয়া উচিত। রোদে বেশী বেরোনো উচিত না। সবসময় কোনো ক্রিম মাখবেন না যা মুখকে তেলতেলে করে তোলে। কোল্ড ড্রিঙ্কস খাওয়া উচিত না। পনির, দুধ একটু কম খাওয়া উচিত। বেশী করে জল খাওয়া দরকার আর মুখ সবসময় পরিষ্কার রাখা দরকার।
তাহলে আপনার স্কিনের চেনা দুশমন ব্রণকে দূর করার উপায় জেনে গেলেন। এইগুলো নিয়ম করে ব্যবহার করুন। দেখবেন ব্রণও দূর হচ্ছে আর ত্বক খিলখিলিয়ে হাসছে।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…