ব্রহ্মার পুত্র বিশ্বকর্মা হলেন দেবশিল্পী। গোটা বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের নকশা থেকে শুরু করে দেবতাদের রথ অস্ত্রশস্ত্রের ও প্রাসাদের নির্মাতা তিনিই। বিঘ্নহর্তা গণেশের পুজোর পরেই বিশ্বকর্মার পুজো হয় তাই বিশ্বকর্মা পুজো মানেই দুর্গাপুজোর ঘন্টি বেজে যাওয়া।
বিশ্বকর্মা পুজো আসা মানেই দুর্গা পুজো আর হাতে গোনা কয়েক সপ্তাহ, এই পুজো নিয়ে বাঙালির মধ্যে তাই উন্মাদনার শেষ নেই। এই বছর বিশ্বকর্মা পুজো কবে এবং এই পুজোর হাজারও বিধি নিষেধ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করতেই দাশবাসের তরফ থেকে আজকে আমি হাজির।
মহাভারতে বলা আছে যে, শিল্পকলার দেবতা হলেন দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা। তিনি দেবতাদের প্রাসাদ, অলংকার থেকে শুরু করে সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র নির্মাণ করেন। ধ্যান ও প্রনাম মন্ত্র অনুসারে তিনি সৃষ্টির নির্মাতা ও ধাতা ও মানদণ্ডধারী একজন মহা শিল্পী ও মহাযোদ্ধা। পুরানে তাকে বলা হয়েছে সহস্র শিল্পের অধিকর্তা, দেবতাদের শিল্পের কার্য সাধক তিনি।
শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকাপুরী, জগন্নাথের বিগ্রহ, রাবণের স্বর্ণলঙ্কা থেকে শুরু করে কুবেরের মহল, স্বর্গের দেবসভা, শিবের ধনুক, ত্রিশূল সব এঁনার হাতেই সৃষ্টি। ইন্দ্রের অস্ত্র বজ্রের নির্মাণও তিনি করেছেন। এছাড়া পান্ডবদের ইন্দ্রপ্রস্থ ও কৌরবদের হস্তিনাপুর ও তাঁরই হাতে তৈরি।
একজন সুদক্ষ শিল্পী ছাড়াও বিশ্বকর্মা একজন দক্ষ লেখক। বিশ্বকর্মা রচিত স্থাপত্য শিল্প বিষয়ক গ্রন্থটির নাম ‘বাস্তুশাস্ত্রম’। এছাড়া পুরাণে বলা হয় যে চারটি বেদের পাশাপাশি চারটি উপবেদ আছে।
এই উপবেদ গুলির রচনা করেছিলেন স্বয়ং বিশ্বকর্মা। চারটি উপবেদ হলো- আয়ুর্বেদ, ধনুর্বেদ, গান্ধর্ব বেদ ও স্থাপত্যবেদ। তাকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রধান বাস্তুকার বলা হয়। তাঁর রচিত অন্তত ১০খানি পুঁথি এখনো অবধি পাওয়া গেছে।
‘মন্ডনসূত্রধারে’ বিশ্বকর্মার রূপের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তার চারটি বাহু, মাথায় রাজার মুকুট, হাতে থাকে বই, অক্ষমালা, শঙ্খ ও কমন্ডলু। তিনি ত্রিনেত্র যুক্ত ও হংস বাহনারূঢ়।
তবে বর্তমানে শাস্ত্র মেনে বিশ্বকর্মার রূপ নির্মিত হয় না। এখন প্রায়ই দেখা যায় যে বিশ্বকর্মার হাতে হাতুড়ি, বিভিন্ন যন্ত্র ,কাস্তে ইত্যাদি আছে এবং তাকে
গজারূঢ় হিসেবে দেখানো হয়। তার হাতে দাঁড়িপাল্লাও দেখতে পাওয়া যায়। এই দাঁড়িপাল্লার দুটি পাল্লা আসলে ঞ্জান ও কর্মের প্রতিক স্বরূপ। এছাড়া তার অন্য হাতে হাতুড়ি রয়েছে যা তাঁর শিল্পকর্মের প্রতীক।
ভাদ্র মাসের সংক্রান্তির দিন বিশ্বকর্মার পুজো হয়, এই দিন কলকারখানা থেকে শুরু করে স্বর্ণকার ,কর্মকার, দারুশিল্প, স্থাপত্যশিল্প ও মৃৎ শিল্পের সাথে যুক্ত মানুষরা বিশ্বকর্মা পুজো করে থাকেন। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন যেমন খাওয়া-দাওয়ার আরম্বর লক্ষ্য করা যায় তেমনি বিশ্বকর্মা পুজোর পরে অনেক জায়গায় ঘুড়ি ওড়ানোর রেওয়াজও লক্ষ্য করা যায়।
এই বছর বিশ্বকর্মা পুজো হচ্ছে ৩১ শে ভাদ্র, ১৭ ই সেপ্টেম্বর ২০২১, শুক্রবার।
বিশ্বকর্মা পুজোর দিন বিশ্বকর্মা পুজো করলে ব্যবসাতে শ্রীবৃদ্ধি হয় ও শুভ ফল লাভ হয়। ব্যবসায়িক দিকের পাশাপাশি বিশ্বকর্মা পূজা বিধি মেনে পালন করলে নির্মাণকাজ, সম্পত্তি সংক্রান্ত নানা কাজেও লাভ হয়।
বিশ্বকর্মা যেহেতু দেব শিল্পী তিনি সমস্ত কিছুর নির্মাণ করেন তাই বিশ্বকর্মার প্রতীক হিসেবেই বিশ্বকর্মা পুজোর দিন যন্ত্রাংশ গাড়ি ইত্যাদির পুজো করা হয়।
বাচস্পতি বা বাক্যের অধিপতি। তাই এইদিন বাক্যের ব্যবহারে সংযত হতে হবে। কারোর প্রতি রূঢ় বাক্যের প্রয়োগ করবেন না।
যে কোনো পুজোরই নির্দিষ্ট তিথি ও নক্ষত্র আছে কিন্তু অনেকেই বলেন যে, একমাত্র বিশ্বকর্মা পুজোয় নাকি একটি নির্দিষ্ট তারিখ ধরে হয়, প্রতিবছর বিশ্বকর্মা পুজো ১৭ সেপ্টেম্বর হয় বলে একটি ধারণা আছে। এই মত কতোটা সত্য? হ্যাঁ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিশ্বকর্মা পুজো ১৭ করেই হয় ঠিক যেমন বাংলার ১৪২৫ সনে (২০১৮ তে) বিশ্বকর্মা পুজো ছিলো ৩১ শে ভাদ্র ১৭ ই সেপ্টেম্বর।
আবার এই বছর ১৪২৮ সনেও বিশ্বকর্মা পুজোর দিন পড়েছে ১৭ সেপ্টেম্বর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই বাধা ছকটা দেখতে দেখতে মানুষজনের মধ্যে একটা প্রচলিত ধারণা হয়ে গিয়েছে যে, বিশ্বকর্মা পুজো মানেই ১৭ সেপ্টেম্বর কিন্তু প্রতিবছর বিশ্বকর্মা পুজো ১৭ সেপ্টেম্বর ই হবে এই ধারণাটা কিন্তু ঠিক নয়, এর ব্যতিক্রমও কিন্তু বেশ ভালোভাবেই চোখে পড়ে।(২০১৫ সালে) বাংলার ১৪২২ সনের ৩১ শে ভাদ্র বিশ্বকর্মা পুজার তারিখ ছিল ১৮ সেপ্টেম্বর। আবার (২০১৯) ১৪২৬ সনেও ৩১ শে ভাদ্র ১৮ সেপ্টেম্বর ছিলো।
অর্থাৎ আমাদের সনাতন শাস্ত্রে বাংলা সন ও সময় অনুযায়ী পুজো হয়, ভাদ্র মাসের সংক্রান্তি তিথি কখনো কখনো ইংরেজিতে ১৭ সেপ্টেম্বর পরে, আবার কখনো কখনো সেটা ১৬ সেপ্টেম্বর বা ১৮ সেপ্টেম্বর ও হয়। এর থেকে এটাই বলা যায় যে, বৈদিক রীতিনীতি অনুসারে ভাদ্র মাসের সংক্রান্তি তিথিই বিশ্বকর্মা পুজোর জন্য নির্ধারিত দিন, ১৭ ই সেপ্টেম্বর নয়।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…