Most-Popular

বিপত্তারিণী পুজো বা ব্রত হিন্দু মহিলারা কেন পালন করেন?

আমাদের বাঙালিদের বারো মাসে তেরো পার্বন। আর এই উৎসব সকলের জন্য। সকলের অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়েই এই সব উৎসবের সার্থকতা। কিন্তু কিছু কিছু পালনীয় বিষয় রয়েছে যেগুলো হিন্দু মহিলারা করে থাকেন আর সেগুলো একান্তই তাঁদের মাধ্যমে পালিত হয়। এগুলোর আলাদা নাম হল ব্রত।

সন্তোষী ব্রত থেকে শুরু করে ষষ্ঠী ব্রত, এই সবই কিন্তু মহিলারা খুব যত্ন করে করেন। আর এই ব্রতের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্রত হল বিপত্তারিণী ব্রত। পালন তো করেন এই ব্রত, কিন্তু জানেন কী কেন এই ব্রত পালন করা হয়? তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক এই ব্রত পালনের নেপথ্য কাহিনী।

ব্রতের পিছনে মূল কাহিনী 

দেবী দুর্গার ১০৮ অবতারের অন্যতম হল বিপত্তারিণী। যিনি বিপদের থেকে রক্ষা করেন। এই পুজো পালনের মূলে আছে একটি গল্প। বাংলার বিষ্ণুপুরের আগের নাম ছিল মল্লভূমি। সেখানে সপ্তম শতকে রাজত্ব করতেন মল্ল রাজারা। এরকমই এক রাজার রানির সখী ছিলেন এক মুচির বউ। যেহেতু তিনি রানির সখী, তাই রাজ মহলে তাঁর ছিল অবাধ যাতায়াত। একদিন এই সখীকে রানি বললেন তাঁর খুব রান্না করা গরুর মাংস খেতে ইচ্ছে করছে। মুচিনী যেহেতু অন্ত্যজ তাই তিনি এই মাংস আনতে পারবেন বলে রানির মনে হয়েছিল। কিন্তু রাজ মহলে গো মাংস, মুচিনীর তো এই কথা ভেবেই প্রাণ যায় যায় অবস্থা। কিন্তু রানিও নাছোড়বান্দা।

অবশেষে মুচিনী বাড়ি থেকে রান্না করা মাংস আনলেন রানির কাছে, খুব লুকিয়ে। কিন্তু তাতে কি হবে! রাজার কানে কথা ঠিক উঠে গেল। এবার রাজা এলেন সত্যতা যাচাই করতে। রাজা আসছেন শুনেই রানি ভয় পেলেন। কোথায় লুকোবেন এই মাংস না বুঝে আঁচলের মধ্যেই চাপা দিয়ে রাখলেন।

রাজা এসে আঁচলে কী আছে জানতে চাইলে রানি মনে মনে দেবী দুর্গার নাম জপ করেন। রাজা এসে আঁচল সরিয়ে দেখেন সেখানে রয়েছে জবা ফুল। অর্থাৎ দেবী দুর্গাকে ডেকে যেহেতু রানি বিপদ থেকে উদ্ধার পেলেন, তাই তখন থেকেই বিপত্তারিণী পুজো শুরু হয়ে গেল।

এই পুজোর নিয়ম

এই ব্রত পালন করা খুবই সহজ। মূলত আষাঢ় মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে হয় এই পুজো। ব্যবহার করা হয় ঘট, আমের পল্লব, শিষ সহ ডাব, তেরো রকমের ফুল, একটি নৈবেদ্য, তেরোটি অর্ধেক করে কাটা ফল।

আর আরেকটি জায়গায় নিতে হয় তেরোটি গোটা ফল, তেরো গাছি লাল সুতো, তেরোটি দূর্বা, তেরোটি পান, তেরোটি সুপুরি।

পুজোর পর লাল সুতোয় তেরোটি গিঁট দিয়ে তেরোটি দূর্বা বাঁধতে হয়।

এই সুতো ছেলেরা ডান হাতে আর মেয়েরা বাম হাতে পড়ে।

পুজোর আগের দিন নিরামিষ খান অনেকে। আর পুজোর দিন ব্রতকথা শুনে মিষ্ট, লুচি খেয়ে উপোস ভাঙেন মহিলারা।

শনি ও মঙ্গল বার করেই মূলত হয় এই পুজো। এই পুজো উপলক্ষে অনেক সময়ে মহিলারা দণ্ডী খাটেন।

আপনাদের সকলেরই আশা করি এই কাহিনী জেনে খুবই ভালো লাগল। খুব মন দিয়ে দেবীর পুজো করুন। দেবী আপনাদের সকলের মঙ্গল করবেন।

Nandini Mukherjee

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago