Most-Popular

এই দশ জায়গার ফুচকা মুখে লেগে থাকবেই

ফুচকা বলুন, গোলগপ্পে বলুন বা গুপচুপ বলুন, যে নামেই ডাকুন না কেন এটা হল স্বর্গ। যদি আপনি কলকাতায় থাকেন তাহলে রাস্তায় বেরিয়ে ফুচকা খাবেন না এটা হয় না। আর যদি বাইরে থেকে কেউ আসেন কলকাতায়, তাহলে ফুচকা না খেয়ে তো কলকাতা ছাড়ার কোনও মানেই হয় না। এমনিতে বলতে গেলে ফুচকা যে কোনও জায়গা থেকে খেলেই ভাল লাগে, তবে কলকাতায় এমন কিছু জায়গা আছে যে জায়গার ফুচকা খেলে মনে হবে এই ফুচকা খাওয়ার জন্যেই আরেকবার কলকাতায় জন্ম নেওয়া যায়।

১. বর্ধন মার্কেট

এক্সাইড বলুন, পার্কস্ট্রীট বলুন বা ধর্মতলা, এর কোনও একটা থেকেও খুব দূর নয় বর্ধন মার্কেট। তাই এই তিনটে জায়গার কাছাকাছি থাকলে একবার বর্ধন মার্কেটে চলে যান আর ফুচকা খেয়ে আসুন। রাস্তার ধারেই একটা সামান্য ‘কিয়স্ক’ বা দোকান নিয়ে বসেন কৃষ্ণকান্ত শর্মা। তিনি তার বাবার থেকে এই দোকান পান। এই ফুচকার বিশেষত্ব হল একদম ঘরে তৈরি মশলার ব্যবহার। মেথি, ধনে, জোয়ান, জিরে সব মিলে যে সুন্দর গন্ধ তৈরি করে সেটা খাবার আগেই জিভে জল নিয়ে আসে। এর সঙ্গে পাবেন একটা বিশেষ চটপটা চাটনি যাতে থাকে লেবু, পুদিনা আর তেঁতুল। এটা দিয়ে ফুচকা খেতে কিন্তু ভুলবেন না। লকডাউনের আগে ২০ টাকায় পাঁচটা মতো পাওয়া যেত।

২. বিবেকানন্দ পার্ক

আপনারা কি জানেন, এই ফুচকার দোকানে লোকে আগে থেকে ফোন করে ফুচকা অর্ডার দেয়! বিবেকানন্দ পার্কে দিলিপ দা’র দোকান সুপারহিট। সাধারণ কুড়ি টাকার ছয়টা ফুচকা তো আছেই। এখানকার ফুচকার বিশেষত্ব হল দই ফুচকা, যার ওপরে থাকে খেজুর, আম আর পুদিনা দিয়ে তৈরি করা এক মিষ্টি চাটনি। আরেক বিশেষত্ব হল আমিষ ফুচকা। হ্যাঁ, মাটন, চিকেন, ককটেইল, প্রন সব ধরণের ফুচকা হয় আর এই ফুচকাই অর্ডার দিতে হয়। আর দিলিপবাবু কিন্তু পাশে রাখা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত না ধুলে ফুচকা দেন না।

৩. রাসেল স্ট্রিট

উত্তরপ্রদেশ থেকে এসে নঙ্কুরাম গুপ্ত এই দোকান খুলেছিলেন আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে। এই দোকানে ফুচকায় কি মশলা ব্যবহার করেন উনি সেটা কিন্তু রহস্য। আপনি আন্দাজ করতে পারবেন কিন্তু ধরতে পারবেন না। আপনি ওনাকে জিজ্ঞাসা করলেও উনি বলবেন না। বলবেন উত্তরপ্রদেশের সিক্রেট রেসিপি। আপনিও একদিন গিয়ে খেয়ে দেখুন দেখি বুঝতে পারেন কিনা কি আছে ওই ফুচকাতে। ২০ টাকায় ছয়টি অনায়াসে পেয়ে যাবেন।

৪. চক্রবেড়িয়া

কোনোদিন ভেবেছেন যে কাঁচকলার পুর ব্যবহার করা যেতে পারে ফুচকার মধ্যে? ভাবেননি তো! চক্রবেড়িয়াতে উপিন্দর ৪০ বছর ধরে এটি করে আসছেন। আসলে জৈন সম্প্রদায়ের মানুষদের কথা ভেবেই তার এই কাজ। তা বলে আলুর ফুচকা উনি বানান না তা নয়। কিন্তু কাঁচকলা সেদ্ধ, মিনারেল ওয়াটার, সেদ্ধ ছোলা, কাচালঙ্কা চেরা, সঙ্গে তেঁতুল, এই হল মূল উপকরণ। এরকম অভূতপূর্ব ফুচকা কিন্তু খেতেই হবে।

৫. ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল

ঘুরতেই যান বা প্রেম করতে, দুটোই কিন্তু ফুচকা ছাড়া হয় না। আর ভিক্টোরিয়ায় এসে ফুচকা না খাওয়া পাপ। রাম গুপ্ত বাংলাদেশ পার্টিশানের সময়ে এই দোকান খোলেন। তখন নাকি উনি এক টাকায় বত্রিশটা ফুচকা দিতেন। এখন কিন্তু ১০ টাকায় চারটে। উনি আলুমাখার সঙ্গে তেঁতুলের পাল্প আর তেঁতুল ড্রাই করে গুঁড়ো, এই দুটোই মেশান। এতে স্বাদ খুব ভাল খোলে। অনেক ক্ষণ এই স্বাদ থেকে যায়।

৬. নিউ আলিপুর

বিজয় প্রকাশ ৪৫ বছর ধরে এখানে ফুচকার দোকান করে আমাদের রসনার তৃপ্তি করাচ্ছেন। যারা নিত্য এখানে খান তাঁরা বলেন এই ফুচকার মতো বড় ফুচকা নাকি আর হয় না। এটাই নাকি ইউএসপি এই দোকানের। সঙ্গে ঘরের মশলা তো আছেই।

৭. দক্ষিণাপন

গোলপার্কের কাছে দক্ষিণাপন, শপিং করার তীর্থক্ষেত্র। এখানে রোজ যান আপনারা। আর শপিং করতে গিয়েই হোক কি এমনি হোক, সামনেই যে ফুচকার স্টল আছে ঢোকার মুখে সেখানে ঢুঁ না মারলে কিন্তু হবে না। এতো ভাল ফুচকা খুব কম পাবেন। ফুচকার সঙ্গে দই ফুচকা খেয়েও দেখতে পারেন। টক ঝাল মিষ্টি চাটনি দিয়ে ফুচকা ট্রাই মাস্ট। সঙ্গে আলুর দম খেতে ভুলবেন না। এখন ২০ টাকায় চারটে পাবেন, কিন্তু খেতে অনবদ্য।

৮. আলিপুর

কেমন হয় যদি চকোলেটের ফুচকা হয়! বা ধরুন ঘুগনির। হ্যাঁ, এই সব সম্ভব আলিপুরে প্রভাশ পানিপুরিওয়ালার কাছে। আলিপুরে উডল্যান্ড রোডে ঢুকে এইচ পি পেট্রোল পাম্পের কাছে এই ফুচকার স্টল। এখানে ধোকলার ফুচকাও পাওয়া যায়। এখানে ফুচকায় মিনারেল ওয়াটার ব্যবহার করা হয়। আর শুনুন, এই ফুচকা অস্ট্রেলিয়াতেও যায়।

৯. ফুচকালাসিয়াস

নামটা বড় অদ্ভুত। অদ্ভুত আরও অনেক কিছু আছে। আপনি যদি খেতে চান চিজ ফুচকা, বা কর্ন ফুচকা বা টুটি ফ্রুটি নিউট্রেলা ফুচকা, চলে যান এখানে। হাইজিন বজায় রেখে ফুচকা দেওয়া হবে। যেতে হবে একটু দূরে, নিউটাউনের সিটি সেন্টারে। খুব দূর কিন্তু নয় ফুচকা খাওয়ার জন্য।

১০. বড়বাজার

একটা কথা চালু আছে, বড়বাজারে পাওয়া যায় না এমন কিছু নেই। তাহলে ফুচকাই বা বাদ যায় কেন। বড়বাজার পুলিশ স্টেশনের সামনে একজন ফুচকাওয়ালা আছেন যার ফুচকার খুব চাহিদা। এমন কিন্তু আহামরি কোনও আদবকায়দা নেই। সাধারণ শালপাতার ছোট বাটি, তাতে ফুচকা। তবে টক জলে উনি নাকি অল্প হিং দেন। সেই জলের স্বাদ নাকি তাতেই এমন হয়ে যায় যে লোকে দাঁড়িয়ে থাকতেই রাজি, কিন্তু না খেয়ে যাবে না। একবার গিয়ে খেয়ে আসুন।

নিন, দশটা বেস্ট জায়গার নাম বলে দিলাম। এবার খেয়ে এসে আমাদের জানান কোনটা আপনার ভাল লাগল।

সুস্মিতা দাস ঘোষ

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago