নতুন সংসার যারা শুরু করছেন, তাদের কাছে রান্নাঘর সাজানোটা প্রাথমিকভাবে একটা কঠিন ব্যাপার বলে মনে হতেই পারে। কিন্তু সহজ কিছু টিপস অ্যান্ড ট্রিকস মেনে চললে আপনারা কিন্তু খুব সহজেই সুন্দর করে সাজিয়ে ফেলতে পারেন আপনার রান্নাঘর।
একটি সাদামাটা বাঙালি রান্নাঘরের ভাঁড়ারে কী কী জিনিস থাকা দরকার। তবে এক্ষেত্রে বলে রাখা এই উপকরণ দিয়ে যে কেবল বাঙালি খাবারই রাঁধতে পারবেন এমনটা নয়। তবে বাঙালি রান্নার জন্য এইসব উপকরণ থাকাটা মাস্ট। এর জন্য আমরা প্রয়োজনীয়তা অনুসারে আমরা তিনটি ক্যাটেগরিতে ভাগ করে নেবো। প্রথমটি, প্রয়োজনীয় সামগ্রী (Basic), দ্বিতীয়টি, থাকলে ভাল (Expert) এবং তৃতীয়টি না থাকলেও চলে, তবে কখনও কখনও লাগতে পারে (Ninja)। এই লেখার ভাবনা ‘বং ইটস’ চ্যানেলের থেকে নেওয়া। তাদের ভিডিও নিচে দেখে নিতে পারেন।
প্রতিদিনের খাবারে বাঙালির প্রয়োজন সেদ্ধ চাল। কারণ সেদ্ধ চাল হজমের পক্ষে ভালো।
গোবিন্দভোগ চাল চেনা যায় এর সুগন্ধ দিয়ে। খিচুড়ি, পোলাও বা পায়েস বানাতে লাগে গোবিন্দভোগ চাল।
বাসমতি চাল দিয়ে বিরিয়ানি, ফিরনি বা অনন্যা বিশেষ বিশেষ খাবার তৈরিতে কাজে লাগবে। কেনার আগে বাসমতি নতুন না পুরনো দেখে নেবেন। নতুন চালে মাড় বেশি থাকে ফলে বিরিয়ানির চাল সেক্ষেত্রে ঝরঝরে থাকবে না।
বেসিক এই ডাল আপনারা আপনাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন। এই তিনটি ডাল ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আপনারা কিন্তু অনেক রকমের পদ রাঁধতে পারেন
একটু ভিন্ন স্বাদের ডালের স্বাদ পেতে অবশ্যই ট্রাই করুন এইসব ডাল। দোকানের মতো ঘুঘনি বাড়িতে বানাতে চাইলে চাই মটর।
বাড়িতে তড়কা বানাতে চাইলে তড়কার ডাল লাগবেই। পাশাপাশি নারকেল কুচি দিয়ে ছোলার ডাল, এছাড়া আলুকাবলি বা যেকোনও ধরণের চাটও ছোলা দিয়ে বানাতে পারেন। কাবলি ছোলার তরকারিও বানিয়ে নিতে পারেন।
বাঙালির রান্নাঘরে যে তেল অপরিহার্য তা হল ঝাঁঝালো সর্ষের তেল। সাধারণ রান্না ছাড়াও মাছ ভাজা কিংবা বেগুনি বানাতে সর্ষের তেল চাই-ই। অনেক রান্না যেমন ধরুন সর্ষে ইলিশ বা চিংড়ি ভাপা রান্নার শেষে ওপর থেকে একটু কাঁচা সর্ষের তেল ছড়িয়ে দিলে একটা অন্যরকম ফ্লেভার পাওয়া যায়। আলু সেদ্ধ আর ফেনা ভাতের সঙ্গেও সর্ষের তেলের যুগলবন্দি অসাধারণ।
যেকোনও নিরামিষ তরকারি বা খিচুড়ি রান্নার পর ঘি দিলে তার স্বাদ আরও ছড়িয়ে পড়ে।
যেসকল রান্না বা ডিপ ফ্রাইয়ের ক্ষেত্রে সর্ষের তেল একেবারেই চলে না, সেক্ষেত্রে সাদা তেল ব্যবহার করা হয়।
এই তালিকায় সর্বশেষ হল মাখন। পাউরুটি টোস্ট, কিংবা স্যান্ডউইচ বা ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতে মাখনের কোনও বিকল্প নেই।
এগরোল বা পেস্ট্রি বানাতে আপনার ডালডা বা বনস্পতির প্রয়োজন হবে।
হাল্কা রান্না হোক বা ইতালিয়ান পাস্তা – তা কিন্তু অলিভ অয়েলেই রান্না করা হয়ে থাকে।
আর একটি ফ্যাট হল মাটন ফ্যাট যা আপনারা মাটন অথবা বিফ কারির ওপর থেকে সংগ্রহ করে একটি জারে ভরে ফ্রিজে রাখতে পারেন। এটা আপানারা তড়কা, ঘুঘনি অথবা চিকেন কারিতেও ব্যবহার করতে পারেন।
এইসমস্ত মশলা দিয়ে আপনারা বেসিক নিরামিষ তরকা, মাছ-মাংস রান্না করতে পারেন, তাও আবার বিভিন্ন রকমের।
সাধারণ লঙ্কার গুঁড়ো থেকে কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো অনেকটাই আলাদা। প্রথমত এর রঙ, দ্বিতীয়ত এর স্বাদ অনেকটা মাইল্ড, কিন্তু রান্নায় একটা আলাদা মাত্রা যোগ করে, সেইসঙ্গে একটা লাল রঙ দিতেও সাহায্য করে।
কিছু কিছু নিরামিষ রান্নায় হিং ব্যবহার করা যেতে পারে। বিউলির ডালেও হিং অসাধারণ লাগে। এর গন্ধ খুবই উগ্র, তাই পরিমাণমতো ব্যবহার করবেন।
পিজা অথবা পাস্তা বানাতে আপনারা চিলি ফ্লেকস ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও ফুচকা, চুরমুর এবং আলুকাবলিতে অনায়াসে ব্যবহার করা যায়।
প্রসঙ্গত, গুঁড়ো মশলা কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বাদ ও গন্ধ বদলাতে থাকে, তাই ভালো হয়, যদি অল্প করে কেনেন এবং প্রতি মাসে কেনেন।
গুঁড়ো মশলার পাশাপাশি বাঙালির রান্নাঘরে গোটা মশলাটাও থাকা জরুরী। ফোড়ন বা মশলা বানাতে গোটা মশলা বিশেষভাবে প্রয়োজন।
যা বাঙালির কাছে গোটা গরম মশলা বলেই পরিচিত। এছাড়াও রয়েছে সাদা জিরে, কালো জিরে এবং পাঁচফোড়ন। পাঁচফোড়ন অসংখ্য বাঙালি রান্নার অঙ্গ। আপনারা এটি দোকান থেকে রেডিমেড কিনতেও পারেন আবার বাড়িতেও বানিয়ে নিতে পারেন। এরপর থাকবে তেজপাতা, শুকনো লঙ্কা, গোলমরিচ এবং সর্ষে। সর্ষে কিন্তু একাধিক বাঙালি রান্নায় ব্যবহার করা হয়, তা সর্ষে বাটা দিয়ে ইলিশ মাছ হোক, কিংবা আমের চাটনি। সর্ষে ২ রকমের হয় কালো এবং হলুদ। সাধারণ রান্নায় কালো সর্ষে ব্যবহার করা হয়। তবে সর্ষের পেস্ট বানাতে আপনারা ২ রকমের সর্ষে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিতে পারেন।
ডাল হোক বা শুক্ত রান্নার ক্ষেত্রে কিন্তু রাঁধুনি চাই-ই চাই। এরপর এই তালিকায় রয়েছে বড় এলাচ, জায়ফল এবং জয়িত্রী।
বিশেষ বিশেষ বাঙালি রান্না ছাড়াও অন্যান্য প্রদেশের রান্নাতেও এই মশলা ব্যবহার করা হয়।
মশলার ব্লেন্ডের মধ্যে যেটা বেসিক তা হল গরম মশলা, যার তিনটি উপকরণ হল-দারচিনি, এলাচ এবং লবঙ্গ।
কিছু কিছু রেসিপিতে প্রয়োজন হয় শাহি গরম মশলা, যার উপকরণ- জায়ফল, জয়িত্রী এবং বড় এলাচ।
ভাজা মশলার প্রধান উপকরণ জিরে। আরও বেশকিছু মশলার সংমিশ্রণে শুকনো খোলায় ভেজে গুঁড়ো করে নেওয়া হয়ে থাকে। ভাজা মশলা সাধারণত পাঁচমিশালি, লাবড়া, চাট, ফুচকা এইসমস্ত ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
রান্নার অন্যতম প্রধান উপকরণ নুন-চিনি সকলের ভাঁড়ারেই থাকে।
বেশ কিছু রেসিপিতে চিনির বদলে গুড় বা মিছরি ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশেষত পায়েসে চিনির বদলে মিছরি দিয়ে এর স্বাদ অনেক ভাল হয়।
অনেকের ধারণা রয়েছে আজিনোমোটো স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, কিন্তু একাধিক গবেষণায় এই ধারণাকে সম্পূর্ণ ভ্রান্ত বলা হয়েছে।
চপ বা পকোড়ায় একটা ট্যাঙ্গি স্বাদ আনার জন্য আপনারা ব্যবহার করতে পারেন চাটমশলা।
যেকোনও বাঙালি রান্না ঘরে সবচেয়ে কমন দুটি উপকরণ হল আটা এবং ময়দা। ময়দা সাধারণত লুচি, কচুরি বা পরোটা তৈরির প্রধান উপকরণ। আর রুটি বানানোর জন্য আটা মাস্ট।
বেসনের ব্যাটারে ডুবিয়ে বেগুনি বা পকোড়া ভাজা হয়ে থাকে, বাইন্ডিং-এর কাজ সহজ করে বেসন। অন্যদিকে চালের গুঁড়ো সাধারণত পকোড়া মুচমুচে বানাতে সাহায্য করে। শীতকালে বাঙালির পীঠে-পার্বনে চালের গুঁড়ো একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ।
সস বা গ্রেভির ঘনত্ব বাড়াতে কর্নফ্লাওয়ার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অন্যদিকে গরমের দিনে ছাতুর শরবত শরীরের পক্ষে খুবই উপকারী। পাশাপাশি চাঁব বা কাবাব বানাতে ছাতু বাইন্ডার হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
পোলাও, পায়েস, মিষ্টি সুজি, ঝাল সুজির মতো রেসিপিতে কাজু-কিসমিস একটা আলাদা মাত্রা যোগ করে। চাটনি-তে তো এই সবকটিই ব্যবহার করা যেতে পারে। সিঙারা বা ভেজিটেবিল চপ বানাতে চিনাবাদাম একটা আলাদা স্বাদ যোগ করে। বাঙালির চিরাচরিত আলুপোস্ত পোস্ত ছাড়া ভাবাই যায় না।
কেক বেকিং-এ বা কোর্মা বানাতে আমন্ড দেওয়া যেতে পারে। ফুচকার টকজলে তেঁতুল অপরিহার্য। এছাড়াও দই বড়া, আলুকাবলিতেও তেঁতুলের পাল্প ব্যবহার করতে পারেন।
পোস্ত, চারমগজ এবং তিল একসঙ্গে পেস্ট করে রান্নায় দিলে একটা ঘন ক্রিমি গ্রেভি তৈরি করা যেতে পারে। মিষ্টি চাটনি বা বিরিয়ানি বানাতে আলুবোখরা ব্যবহার করা যেতে পারে।
মাছের ঝোল বা সুক্তোতে ডালের বড়ির উপস্থিতি আলাদা মাত্রা যোগ করে। খিচুড়ি বা চাটনির সঙ্গে পাঁপড় ভাজা খাওয়া যেতে পারে।
সকাল কিংবা সন্ধেবেলার ক্ষিদে মেটাতে আপনাকে সাহায্য করবে মুড়ি-তেলেভাজা বা মুড়ি-চানাচুর, চিড়ের পোলাও এবং মিষ্টি কিংবা নোনতা সুজি।
দুধ-খই বা খই-মুড়কি অনেকেরই খুব প্রিয়।
ভাতের রঙ ধবধবে সাদা করতে ফিটকারি ব্যবহার করতে পারেন। তবে খুব অল্প পরিমাণে নয়তো ভাতের স্বাদ কিন্তু বদলে যেতে পারে।
ধোকলা, চাটনি, ঘরে তৈরি জ্যামে সাইট্রিক অ্যাসিড ব্যবহার করতে পারেন।
চপ,কাটলেট, ফ্রাই বা ডেভিল বানাতে আপনার প্রয়োজন বিস্কুটের গুঁড়ো বা ব্রেডক্র্যাম্বস।
লিকার চায়ের জন্য দার্জিলিং চা আদর্শ। আর চায়ের সঙ্গে টা- হিসাবে চলে বিস্কুট। তবে আপনারা যদি বিস্কুট নাও খান তাহলে কিছুটা স্টক করে রাখতে পারেন অতিথিদের জন্য।
আর যদি দুধ চা খেতে হয় তাহলে প্রয়োজন সিটিসি চা। কফি প্রেমীরা কফি স্টক করে রাখতে পারেন।
গরমের দিনে যেটা সকলের প্রিয় তা হল শরবত।
যেকোনও ধরনের চপ,কাটলেট-এর সঙ্গে টমেটো সস এবং কাসুন্দি মাস্ট। এছাড়াও কাসুন্দি কিন্তু পান্তা ভাত কিংবা শাক ভাজার সঙ্গেও খাওয়ার চল রয়েছে।
যেকোনও সাদামাটা খাবারকে সুস্বাদু করে তুলতে পারে আচার। আপনার পছন্দের ফ্লেভারের আচার স্টক করে রাখতে পারেন।
এছাড়াও যেকোনও ফ্লেভারের ফ্রুট জ্যাম আপনারা রুটি কিংবা পাউরুটির সঙ্গে খেতে পারেন।
নুডলস, চিলি চিকেন এমনকি রোলেও এই দুই প্রকারের সসই ব্যবহার করা হয়।
স্যান্ডউইচ বা স্যালাদ বানাতে মেয়োনিজ লাগবেই।
ভাত বা রুটির বদলে যদি অন্যরকম কিছু খেতে চান তাহলে পাস্তা কিংবা নুডলস খুব ভালো অপশন।
পাস্তা, স্টেক, স্যুপ-এই ধরণের রেসিপির জন্য আপনার প্রয়োজন কিছু ড্রাই হার্ব যেমন, রোজমেরি, থাইম, ওরেগানো।
সাধারণ চাউমিন, চিলি চিকেন-এর মতো পদ তৈরি করতে ভিনিগার, সয় সস লাগবে।
একটু অন্যরকমের ফ্লেভার দেবে ওয়াইন ভিনিগার বা অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার।
রোস্ট কিংবা স্টু বানাতে উস্টার সস খুব ভালো স্বাদ এনে দেয়।
আপনারা যদি ডাই-হার্ট চাইনিজ প্রেমী হন তাহলে এইমসস্ত উপকরণ আপনি রাখতে পারেন। এগুলি বহুদিন চলে
মোগলাই ডিশ বানাতে আপনার কেওড়া জল এবং গোলাপ জল প্রয়োজন। বিরিয়ানি, চাঁব, কোর্মা, ফিরনিতে এর ব্যবহার আবশ্যিক।
কলকাতার বিরিয়ানিতে মিঠা আতর দেওয়ার চল রয়েছে, তাই বাড়িতে বিরিয়ানি বানালে এটা আপনারা দিতে পারেন।
মোগলাই খাবারে রঙ এবং সুগন্ধের জন্য ব্যবহার করা হয় কেশর।
প্রফেশনাল নয়, কিন্তু বাড়িতেই কেক বেক করতে চান যাঁরা তাঁদের হেঁশেলে বেকিং পাউডার এবং বেকিং সোডা থাকতেই হবে।
কেক ছাড়াও আইসক্রিম বানাতে ভ্যানিলা এসেন্স এবং কোক পাউডার লাগে।
হট চকোলেট বা ব্রাউনি বানাতে ডার্ক চকোলেট, ক্রিম কাস্টার্ড বানাতে ভ্যানিলা বীন এবং কেক-কুকিস বা বিস্কুট বানাতে ব্রাউন সুগার মাস্ট।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…