ওমেগা-৩ কে সংক্ষেপে বলা হয় কিছু ফ্যাটি অ্যাসিডের সমাহার, যা মানবদেহে সরাসরি পাওয়া যায় না, কিন্তু মানবদেহের সুস্বাস্থ্যের জন্য অতীব জরুরি। সাধারণত স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্রান্স ফ্যাট শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
কিন্তু ওমেগা-৩ হচ্ছে পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট যা রক্তে সহজে মিশে যায়। এতে বিদ্যমান প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মেটাবলিজম বাড়ায়, হার্ট সুস্থ রাখে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, এবং হাড় ও মাংসপেশি সুগঠিত করে।
- সামুদ্রিক মাছ, তৈলাক্ত মাছ, তিসির বীজ, শণ বীজ, চিয়া সীড, আখরোট হচ্ছে ওমেগা-৩ এর উৎস। শুধু মাছ থেকেই শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া সম্ভব। মাছের আঁশটে গন্ধ, অ্যালার্জি, বা অন্য কোন সমস্যার কারণে যদি আপনি মাছ খেতে না পারেন তাহলে ওমেগা-৩ ক্যাপসুল খেতে পারেন নিশ্চিন্তে। শরীরে পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের ঘাটতি পূরণ করতেও সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ওমেগা-৩ সেবন করতে পারেন।
- নারী-পুরুষ কমবেশি সবাই ত্বক ও চুলের সমস্যায় ভুগে থাকেন। আপনার ত্বক ও চুলের জন্য ওমেগা-৩ ক্যাপসুলগুলির উপকারিতা ঠিক কতটুকু, জানতে পড়ে ফেলুন এই লেখাটি। উপকারিতা জানলে পরে নিজের ত্বক আর চুলের স্বাস্থ্য নিয়ে আপনাকে আর বাড়তি চিন্তা করতে হবেনা।
চুলের জন্য ওমেগা-৩ ক্যাপসুলের উপকারিতা
- স্ক্যাল্পের ত্বকে জ্বালাপোড়া করলে চুলের সমস্যা দেখা দেয়। ওমেগা-৩ ক্যাপসুলের অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান স্ক্যাল্পের ইনফ্লেমেশন কমায় এবং চুলের স্বাভাবিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করে।
- এটি চুল পড়া কমায়, বিশেষ করে ফিমেল-প্যাটার্ন হেয়ার লসের জন্য ওমেগা-৩ বেশি উপকারী। তার সাথে এই ক্যাপসুল পুনরায় দ্রুত চুল গজাতেও সাহায্য করে। সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ এবং ডাক্তাররা সেজন্য চুল পড়া রোধের জন্য ওমেগা-৩ সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
- ওমেগা-৩ স্ক্যাল্পের এসেনশিয়াল অয়েল উৎপাদন বাড়িয়ে তোলে। পাশাপাশি, এটি মাথার তালুতে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তোলে। এতে করে হেয়ার ফলিকলগুলো খুলে যায় এবং সরাসরি পুষ্টি ভিতরে ঢুকে যায়। ফলে চুলের গোড়া শক্ত হয়, চুল মজবুত হয়, এবং অল্প সময়ে চুল বড় হয়।
- খুশকি, স্ক্যাল্পের শুষ্কতা, এবং ড্রাই হেয়ার ফলিকল দমন করে ওমেগা-৩ ক্যাপসুল। ফলে স্ক্যাল্পে চুলকানি অনুভূত হয় না এবং স্ক্যাল্প হাইড্রেটেড থাকে সবসময়।
- সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে চুল ও স্ক্যাল্পকে বাঁচায়।
- সর্বোপরি ওমেগা-৩ ক্যাপসুল চুলের সার্বিক উন্নতি নিশ্চিত করে। নিয়মিত ক্যাপসুল সেবনে আপনি পাবেন মনের মতো ভলিউম এবং ঝলমলে চুল।
ত্বকের জন্য ওমেগা-৩ ক্যাপসুলের উপকারিতা
- ওমেগা-৩ ক্যাপসুল স্ক্যাল্পের পাশাপাশি ত্বককেও সূর্যের ক্ষতিকর ইউভি-এ এবং ইউভি-বি রশ্মি থেকে বাঁচায়। এতে ফ্রি র্যাডিকেল স্কিনে প্রবেশ করতে পারেনা, ফলে স্কিন র্যাশ, ফোস্কা, বা ক্ষত থেকে ত্বক রক্ষা পায়। সূর্যের কারণে ত্বকের অতিরিক্ত শুষ্কতা, চামড়া লাল হয়ে যাওয়া বা পুড়ে যাওয়া থেকেও এই ক্যাপসুল মুক্তি দিবে।
- কিটোকিন নামক ইনফ্লেমেটরি মলিকিউল আমাদের শরীরে ইনফ্লেমেশনের জন্য দায়ী। ওমেগা-৩ ক্যাপসুলের অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান কিটোকিন প্রতিহত করে স্ক্যাল্পের সাথে সাথে ত্বকেরও জ্বালাপোড়া কমায়। আবার অন্ত্রের ইনফ্লেমেশন কমিয়ে হজমশক্তি ঠিক রাখার জন্যও এই ক্যাপসুল সমান কার্যকরী।
- একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যাকনের সমস্যার পেছনে প্রধানত ইনফ্লেমেশন দায়ী। তাই ব্রণ বা অ্যাকনে আক্রান্ত স্কিনের জন্য ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড বা ক্যাপসুল সেবন বাঞ্ছনীয়৷ এটি অতিরিক্ত সেবাম উৎপাদন এবং নিঃসরণ রোধ করে লোমকূপ আটকে যাওয়া থামায়। পাশাপাশি, অ্যাকনে তৈরিকারী ব্যাকটেরিয়াগুলোকে দমন করে এবং শরীরে টেস্টোস্টেরন এবং অ্যান্ড্রোজেন হরমোনকে ব্যালেন্সড রাখে। মারাত্মক ব্রণের সমস্যার চিকিৎসার জন্য আইসোট্রেটিনোইন নামক এক ধরণের ওষুধ ব্যবহার করা হয়, যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর৷ ওমেগা-৩ সাপ্লিমেন্ট সেবনে এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো কমে যায়।
- অ্যাটোপিক ডার্মাটিটিস এবং সোরিয়াসিসের মতো জটিল স্কিন প্রবলেমের জন্য ওমেগা-৩ সাপ্লিমেন্ট ভীষণভাবে উপযোগী। এটি স্কিনের ময়েশ্চার লক করে এবং সহজে যাতে ময়েশ্চার উবে না যায় তার জন্য স্কিনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা উন্নত করে। ডার্মাটিটিস, একজিমা, এবং সোরিয়াসিস হলে ময়েশ্চারবিহীন ত্বকের চামড়া লাল হয়ে যায়, শুকিয়ে খসখসে হয়, এবং সাংঘাতিক চুলকানি হয়। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আক্রান্ত চামড়ায় একটি সুদিং ইফেক্ট এনে দেয়।
- বয়সের সাথে সাথে ত্বকের কোলাজেন কমতে থাকে এবং লিপিড ব্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ত্বকে বলিরেখা পড়ে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর ওমেগা-৩ ক্যাপসুল বলিরেখা কমায়, সেই সাথে স্কিনকে রাখে ময়েশ্চারাইজড এবং নরম।
- বাইরের দূষণ থেকে ত্বকে হওয়া লালচেভাব এবং সেনসিটিভিটি উপশম করে ওমেগা-৩ ক্যাপসুল। এছাড়াও ক্ষতস্থান দ্রুত নিরাময় এবং স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় ওমেগা-৩।
ওমেগা-৩ ক্যাপসুল সেবনের মাত্রা
ওমেগা-৩ ক্যাপসুল আপনি দিনের যেকোন সময় খেতে পারবেন, অবশ্যই খাবার গ্রহণের পরে। প্রতিদিন কয়বার ক্যাপসুল খেতে পারবেন সেটা ডাক্তার আপনার শারীরিক অবস্থা, বয়স, এবং রোগের মাত্রা দেখে নির্ধারণ করে দিবেন। সাধারণত প্রতিদিন ২৫০ মিলিগ্রাম থেকে ১০০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ওমেগা-৩ ক্যাপসুল সেবন করা যায়। তবে দৈনিক সেবনের মাত্রা ৪০০০ মিলিগ্রামের বেশি করা একদমই উচিত নয়, নাহলে ইন্টার্নাল ব্লিডিং সহ আরো নানা ধরণের জটিলতা সৃষ্টি হবে।