Most-Popular

বাংলাদেশের গরমে মেয়েরা স্কিনের যত্ন নিতে কি কি করবেন?

ইদানিং গরমটা খুবই বেড়েছে। সেই সাথে বেড়ে গিয়েছে ত্বকের সমস্যাগুলোও। এমনিতেই ত্বকের সমস্যার শেষ নেই। তার উপর এই গরমে অনেকেরই ত্বকে যোগ হয়েছে নতুন সমস্যা। আসুন জেনে নেই উপকারী কয়েকটি টিপস, যা প্রচন্ড গরমেও আপনার ত্বককে ভালো রাখতে সাহায্য করবে এবং নিয়মিত মেনে চললে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা থেকেও আপনাকে মুক্তি দেবে।

১. খাবারের দিকে খেয়াল রাখুনঃ

গরমে ত্বক ভালো রাখতে চাইলে প্রচুর পানি পান করতে হবে। শরীরে কোনোভাবেই পানির ঘাটতি হতে দেয়া যাবে না। পানি শূণ্যতার কারনে ত্বক বিবর্ণ হয়ে পরে। তাই প্রচুর পরিমানে পানি পান করুন। পানির পাশাপাশি ডাবের পানি, ফলের রস, জুস পান করুন। ডাবের রসে প্রচুর পরিমানে আয়রন এবং পটাশিয়াম রয়েছে। পানিযুক্ত তাজা ফলমূল যেমন – বাঙ্গি, জাম, খেজুর, তরমুজ, শসা, স্ট্রবেরি, আম এসব খান বেশি পরিমানে।

এসব ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন, মিনারেলস, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যানেসিয়াম। এগুলো আপনার দেহের পানির ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি পুষ্টিও যোগাবে। বাদাম ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। চিনাবাদাম ও কাজুবাদামে রয়েছে ফাইবার ও ফ্যাটি এসিড, যা ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে।

২. ট্যাপের পানি সরাসরি মুখে ব্যবহার না করতেঃ

সব সময়েই মুখ ধোয়ার সময় আমরা সাধারণত ট্যাপের পানি ব্যবহার করি। চেষ্টা করবেন ট্যাপের পানি সরাসরি মুখে ব্যবহার না করতে। কারন এই গরমে ট্যাপের পানির তাপমাত্রা সাধারণ তাপমাত্রার তুলনায় অনেক বেশি হয়ে থাকে যা আপনার ত্বকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে। আমাদের মুখমন্ডলের ত্বক খুবই সেনসিটিভ। তাই ট্যাপের পানির সাথে ফ্রিজে রাখা ঠান্ডা পানি বা বরফ মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। কিংবা মুখ ধোয়ার কিছুক্ষণ আগে পানি তুলে রেখে তারপর ব্যবহার করুন, এতে পানির তাপমাত্রা কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসে।

মুখ, ঘাড়, গলায়, বরফ ঘষতে পারেন। ঠান্ডা পানিতে হাত-পা ভিজিয়ে রাখুন। কিংবা ঠান্ডা পানিতে তোয়ালে বা কাপড় ভিজিয়ে কিছুক্ষণ পরপর শরীর মুছে নিন। এতে আপনার ত্বক শুষ্কতার হাত থেকে যেমন রেহাই পাবে, তেমনি গরম থেকেও সাময়িক আরাম পাবেন। তাছাড়া মুখে নিয়মিত বরফ ঘষলে তা মুখে থাকা দাগ মিলিয়ে যেতে সাহায্য করে, ব্রণের আগমন কমায়।

৩. ত্বকের যত্নে নিমের ব্যবহারঃ

ত্বকের যত্নে নিমের ব্যবহার বহু আগে থেকেই। ড্রাই, অয়েলি কিংবা সেনসেটিভ – ত্বক যেমনই হোক না কেন…নিম কাউকেই খালি হাতে ফেরায় না। এটি ব্ল্যাকহেডস দূর করে। নিমপাতা বেটে মুখে, ঘাড়, গলা, হাত-পায়ে প্রলেপ লাগান। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর হয়ে যাবে। প্রলেপ লাগাতে না চাইলে নিমপাতা থেকে রস বের করে নিয়ে সেটাও ব্যবহার করতে পারেন। চাইলে নিমের রসের সাথে মধু, গোলাপজল, অ্যালোভেরার জেল মিশিয়ে নিতে পারেন।

৪. প্রাকৃতিক অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করুনঃ

অনেকেই বাজারের ভেজাল ক্রিম বা জেল লাগাতে ভয় পান। সেক্ষেত্রে প্রাকৃতিক অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করুন। ত্বক মসৃণ, দাগহীন ও ব্রণ মুক্ত রাখতে অ্যালোভেরার বিকল্প নেই। তাজা অ্যালোভেরার পাতা থেকে জেল নিয়ে সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন।

যে কোনো রকম দাগ, ব্রণ, ক্ষততে এটি নির্ভয়ে লাগাতে পারেন। এতে থাকা অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল উপাদানের কারনে শরীরের অন্যান্য স্থানের কাটা-ছেঁড়াতেও এটি জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। তবে অ্যালোভেরার পাতা গাছ থেকে কাটার পর মনে করে পাতার গোড়ার দিকটা কিছুক্ষণ নিচের দিকে করে রেখে দেবেন। এতে করে গোড়ায় থাকা হলুদ রঙের রস বের হয়ে যাবে, এই রস অনেকের ত্বকে এলার্জি সৃষ্টি করে।

৫. দুধের সাথে কাঁচা হলুদ মিশিয়ে খানঃ

দুধের সাথে কাঁচা হলুদ মিশিয়ে খান। ত্বকও ভালো থাকবে, সাথে দেহও। সেনসেটিভ ত্বকের জন্য কাঁচা হলুদ খুবই উপকারী। হলুদ ত্বক উজ্জ্বল করে, ব্রণের প্রাদুর্ভাব কমায় এবং ত্বকের বলিরেখা ও দাগ দূর করে। কাঁচা হলুদ বেটে দুধ বা দুধের সরের সাথে মিশিয়ে নিয়মিত লাগালে ব্রণের হাত থেকে রক্ষা পাবেন, সাথে ত্বকের কালচে ভাবও দূর হবে। এই মিশ্রণটি লাগালে মুখে হলুদাভ ভাব আসতে পারে। সেটি না চাইলে মিশ্রণটিতে সামান্য অলিভ অয়েল বা নারকেল তেল মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে হলুদাভ ভাব কিছুটা কম হবে।

৬. মুখে মিল্কের ম্যাসাজঃ

দুধ প্রোটিনের আধার। দুধ আমাদের দেহের জন্য যেমন উপকারী, তেমনি আমাদের ত্বকের জন্যেও অত্যন্ত উপকারী। এটি সবথেকে ভালো প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার। কাঁচা দুধ হোক বা নষ্ট দুধ, সবই ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা যায়। দুধে থাকা ল্যাকটিক এসিড ত্বককে মোলায়েম, কোমল ও মসৃণ করে। ত্বকের বলিরেখা, দাগ, দূর করে, এবং বয়সের ছাপ কমায়। এটি ক্লিনজার হিসেবেও দারুন কাজ করে। দুধ ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে মুখে ম্যাসাজ করলে বা বরফ করে মুখে ঘষলে ত্বকের অতিরিক্ত তেল, ময়লা, মৃত কোষ ও রোদে পোড়া ভাব দূর হয়।

৭. ত্বককে উজ্জ্বল করতে লেবুর ব্যবহারঃ

ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে ও ত্বককে উজ্জ্বল করতে লেবুর জুড়ি নেই। সৌন্দর্যচর্চায় লেবুর সবচেয়ে ভালো উপকার পেতে লেবু খেতে হবে। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকে বয়সের ছাপ পরা রোধ করে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য লেবু খুবই উপকারী। লেবুর রসের সাথে চন্দন পাউডার মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।

ভিটামিন ই-ক্যাপসুল (ক্যাপসুলের ভেতরে থাকা তরল ঔষধ), গোলাপজল, গ্লিসারিন কিংবা ডাল বাটার সাথে লেবুর রস বা লেবুর খোসার পেস্ট মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। তবে কখনোই শুধু লেবুর রস ত্বকে ব্যবহার করা যাবে না এবং লেবুর রস লাগিয়ে সূর্যালোকে যাবেন না, এতে হিতে বিপরীত হবে।

৮. ত্বক উজ্জ্বল করতে মধু খুবই উপকারীঃ

ত্বক উজ্জ্বল করতে মধু খুবই উপকারী। এটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার। এতে অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল, অ্যান্টি-ভাইরাল উপাদান রয়েছে। ব্রণ, বলিরেখা, কালো দাগ দূর করতে এটি খুবই কার্যকর। এক চা চামচ মধু সরাসরি মুখে লাগিয়ে পনের-বিশ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে নিজেই পার্থক্য বুঝবেন।

মোহসিনা রহমান মুনিয়া

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago