আর্টসের স্টুডেন্টদের প্রাইভেট কী কী চাকরির সুযোগ আছে?

আর্টসের বিষয় নিয়ে জেনারেল লাইনে পড়াশুনো করে ভাবছেন সরকারি চাকরিতে আর ভিড় করবেন না? আর সরকারী কম্পিটিটিভ পরীক্ষায় বসা, তার প্রস্তুতি নেওয়ার ইচ্ছে হয়তো আপনার নেই। এদিকে ভাবছেন এতদিনে আপনার ইঞ্জিনিয়ার বন্ধুরা চাকরিও পেয়ে গেলো– এসব ভেবে শুধু শুধু নিজের আর্টস নিয়ে পড়াশুনো করার পুরনো সিদ্ধান্তকে দোষ দেবেন না। হয়তো আপনি অতীতে আপনার ভালো লাগাকে গুরুত্ব দিয়েই আর্টসের কোনও বিষয়কে বেছেছিলেন পড়ার জন্য, চাকরির কথা তখন ভাবেননি। কিন্তু এখন আপনি অবশ্যই চাকরির কথা ভাববেন, আর ভালো লাগাকে বজায় রেখে আপনি চাকরিও পাবেন। তবে তার জন্য আপনাকে একটু খোঁজ খবর রাখতে হবে ঠিক কী ধরনের চাকরি আছে এখন বেসরকারি বাজারে। আসুন, এ বিষয়েই জেনে নেওয়া যাক খানিক।

১. সাংবাদিকতা

আপনি যদি হন সাহিত্যের ছাত্র, অথবা যদি লিখতে ভালো পারেন, তাহলে প্রিন্ট মিডিয়ায় সাংবাদিকতার দিকটি ভেবে দেখতে পারেন। আসলে শুধু লেখা বা সাহিত্যও নয়, আপনি যদি কথা ভালো বলতে পারেন, তাহলে আপনি আপনার সেই মেধাকে কাজে লাগিয়েও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় চেষ্টা করে দেখতে পারেন। আসলে এখনকার দুনিয়ায় এই মিডিয়া বিষয়টির প্রভাব যে কতটা, তা আর আপনাকে বলে দিতে হবে না। এখন তো মাস কমিউনিকেশন ও জার্নালিজমের ওপরে কোর্সও করানো হয়। তাই আপনি যদি জার্নালিজম ও মাস কমিউনিকেশনের ওপর ডিগ্রি কোর্স করে থাকেন, তাহলে তো খানিক এগিয়েই আছেন এই লাইনে। আর তা ছাড়া অল্প দিনের ডিপ্লোমা কোর্সও করে নিতে পারেন এই বিষয়ে। ফলে খবরের কাগজ বা খবরের চ্যানেল- চেষ্টা চালাতে পারেন এই দুই জায়গাতেই। সাংবাদিকতা পেশা হিসেবে অনেকের কাছেই খুব আকর্ষণের। এবার দেখার, আপনাকে এই পেশা কতটা টানে।

২. ট্র্যাভেল এজেন্ট

আপনার যদি ঘুরতে নিয়ে যাওয়ায় আগ্রহ থাকে, ইচ্ছে থাকে পৃথিবী ঘোরার ও জানার, তাহলে এটি আপনার পছন্দের অপশন হতেই পারে। তবে সে ক্ষেত্রে যদি আপনি করে রাখেন ট্র্যাভেল ও ট্যুরিজমের ওপর কোনও কোর্স, তাহলে তো আপনার বাড়তি সুবিধা। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ট্র্যাভেলিং এজেন্সিগুলোয় আপনি আবেদন করে দেখতেই পারেন। তবে এক্ষেত্রে দেশের বা পৃথিবীরও বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়ার কারণে আপনার কমিউনিকেশন স্কিল ভালো হওয়া প্রয়োজন। সেদিকটায় যত্নশীল হলে, এই বিষয়ে আগ্রহীরা ভেবে দেখতে পারেন।

৩. এডিটিং

লেখা এডিট করা যদি আপনার আগ্রহের জায়গা হয়, তাহলে এই কাজটিকেও আপনি আপনার পেশা বানাতেই পারেন। হতে পারে আপনি কলেজ জীবনে নিজের বা অন্যের লেখা একাধিকবার এডিট করেছেন, তাহলে অবশ্যই বিভিন্ন খবরের কাগজ বা মাসিক ও বার্ষিক পত্রিকার অফিসে এই বিষয়ে আবেদন করে দেখতেই পারেন। কোনও জায়গায় এই বিষয়ে কাজ করলে অর্জিত অভিজ্ঞতারও দাম আছে এই লাইনে।

৪. অ্যাডভার্টাইজিং ম্যানেজার

এক্ষেত্রে আপনার কথা বলার দক্ষতা দরকার, আরও বেশী করে প্রয়োজন কথা বলে সেই কথাকে মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার ক্ষমতা। আপনার কাজ হবে এ ক্ষেত্রে বিশেষ কোনও কোম্পানির হয়ে তার জিনিসটিকে কোম্পানির মত করে মানুষের কাছে উপস্থাপন করা ও তাকে বিক্রি করা। সে ক্ষেত্রে মানুষের মনে ধরবে এমন কোনও পাঞ্চ লাইন ভেবে বের করার দক্ষতা প্রয়োজন হবে আপনার। প্রয়োজন হবে অ্যাডভার্টাইজমেন্টটিকে মানুষের কাছে উপস্থাপন করবেন কীভাবে, সেই বিষয়ক জ্ঞান। অ্যড এজেন্সিগুলোয় এই কাজের জন্য আবেদন করতেই পারেন।

৫. টেকনিকাল রাইটার

লেখার বিষয়বস্তু ইন্টারেস্টিং না হলেও বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানিতে টেকনিকাল রাইটার নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে। মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানিতে এই কাজের জন্য খোঁজ করে দেখতেই পারেন।

৬. ইভেন্ট অরগানাইজার

আপনি যদি ভালো অরগানাইজার হন বা প্ল্যান করতে ভালো পারেন, তাহলে বিভিন্ন কোম্পানির ক্লায়েন্টদের জন্য অনুষ্ঠান সংগঠিত করা ইত্যাদি কাজে এই দক্ষতাকে কাজে লাগাতেই পারেন। ভেবে দেখুন ও খোঁজ পেলে আবেদন করুন।

৭. ইন্টারপ্রেটার ও ট্রান্সলেটর

যদি আপনি ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি আর্টসের ছাত্র হিসেবে কোনও বিদেশী ভাষা শিখে থাকেন, তাহলে বিভিন্ন বিদেশী দূতাবাস বা বিদেশী প্রোজেক্টের কাজে এই ধরনের কাজ পেতে পারেন। এক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ভাবে ওই সংশ্লিষ্ট দ্বিতীয় ভাষাটি জানতে হবে আপনাকে। শুধু বেসরকারি নয়, এমন ক্ষেত্রে মর্যাদাপূর্ণ সরকারী চাকরিও জুটে যেতে পারে আপনার।

অর্থাৎ, আপনি আর্টসের ছাত্র, এইজন্য আপনার কাছে কেবলমাত্র সরকারী চাকরিই একমাত্র অপশন– এমনটা ভাববেন না। আসলে আর্টসের ছাত্রদের কাছে অপশন থাকলেও প্রতিটি চাকরির ধরণ সম্পূর্ণ আলাদা। তাই আপনার ভালোলাগার কাজ কোনটি হতে পারে, সেটি আগে বুঝে নিন। বুঝে নিয়ে সেই মতো এগিয়ে গেলেই ঠিক ফল পাবেন।