রঙে পলাশ ফাগুনে মাতোয়ারা হতে প্রস্তুত সবাই। পিচকিরি, ঠান্ডাই, ভাঙ, মাস্ক এসবের প্রস্তুতিও চলছে নিশ্চয়ই জোর কদমে। কিন্তু ভেবে দেখুন জমজমাট এই উৎসবে স্কিন ও চুল থেকে রং তুলতে যদি কালঘাম ছোটাতে হয় তবে তো হোলির রংই ফিকে হয়ে যায়। তারপর আবার স্কিনে জুড়ে বসে এলার্জি, চুলকুনি ও র্যাশ। এইসময় ত্বকের সংবেদনশীলতা বেড়ে যায় তাই আগাম সাবধানতা নিয়ে খেলুন হোলি। দেখে নিন স্কিনের যত্নে কি কি করবেন এবারের দোলে।
খেলার আগে সতর্কতা:
- শরীরে দিন ফ্লুইড
- তেল মাখুন
- মাথার যত্ন
- সানস্ক্রিন
- পোশাক পরিচ্ছদ
শরীরে দিন ফ্লুইড:
- এমনিতেই এটা ঋতু পরিবর্তন এর সময়। শরীরের সেটা মানিয়ে নিতে সময় লাগে। তাই শরীরকে ফ্লুইড এর যোগান দেওয়া দরকার।
- হোলির আনন্দে ভেসে গিয়ে আমরা জল খেতেই ভুলে যাই। কিন্তু সেটা করলে চলবে না। সময়ে অসময়ে জল বা জুস বা অন্য পানীয় খেতে থাকুন।
- জল শরীরে টক্সিন, ফ্রি রাডিক্যাল মুক্ত করে। ত্বকের ময়শ্চার ধরে রাখতে হেল্প করে ফলে রং পড়লে ত্বক তা সহজে গ্রহণ করতে পারে।
তেল মাখুন:
- রং যেখানে মাখবেন সেই সমস্ত জায়গায় অর্থাৎ হাতে মুখে গলায় ভালো করে তেলের প্রলেপ দিন। তেল এর উপর রং চড়লে তা স্কিনের ক্ষতি করেনা এবং পরে তা ছাড়াতেও সুবিধে হয়।
- তেল এর জন্য সর্ষের তেল, নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
মাথার যত্ন:
- হোলি খেলবেন তাও মাথা বাঁচিয়ে এও হয়? দেখুন মাথায় আবির বা রং লাগা যেহেতু আপনি ঠেকাতে পারছেন না তবে নিরোধক ব্যবস্থা তো নিতেই পারেন।
- মাথায় ভালো করে আমন্ড অয়েল বা জোজোবা অয়েল মেখে নিন। চুলে গিঁট দিয়ে টানটান করে বেঁধে চুল গুটিয়ে নিন। এতে চুলে বেশি রং এর অত্যাচার হবেনা। পারলে উইগ ও পরতে পারেন। ভালোই লাগবে।
সানস্ক্রিন:
- দেখুন হোলিটা আমরা কিন্তু সারাদিন রৌদ্রেই খেলি তবে কেউই অতটা নজর দিই না এটির ওপর। আপনি সেই ভুল করবেন না।
- মুখে ও হাতে ভালো করে মেখে নিন সানস্ক্রিন লোশন। এটা উত্তম ডাস্ট ও কালার প্রতিরোধক।সূর্যের ইউভি রশ্মি থেকেও রক্ষা করবে আপনাকে। এসপিফ এর মান যেন ২০ এর উপরে থাকে দেখে নেবেন।
পোশাক পরিচ্ছদ:
- বসন্ত উৎসবে খুব একটা খোলা মেলা হয়ে বেরোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
- তাই সুতির ফুল হাতা শরীর ঢাকা দেওয়া কাপড় জামা পরে বেরোন। এতে রঙের সংস্পর্শে আপনার ত্বক কম আসবে।
খেলার পরে সতর্কতা:
- স্নানের নিয়ম
- চুলের কেয়ার
- প্যাক
- ত্বকের বিশেষ যত্ন
স্নানের নিয়ম
- দোল খেলে আসার পরই যে চিন্তা আমাদের সবার আগে আসে তা হলো এবার এই যাবতীয় রং এর হাত থেকে নিষ্কৃতি কিভাবে পাওয়া যায়? আর এটা করেই আমরা অনেক ভুল করে থাকি।
- দোল খেলে ফিরেই স্নান করতে যাবেন না। কারণ ছোটাছুটি ও খেলার হুল্লোড়ে তখন আমাদের ঘাম হয় এবং রোদ থেকে এসে স্নান করলেই ঠান্ডা লাগার সমূহ সম্ভাবনা।
- আধঘন্টা অপেক্ষা করে স্নানে ঢুকুন। কিছুক্ষন শাওয়ার অন করে তার তলায় দাঁড়িয়ে থাকুন। এতে রঙের উপরি আবরণ ধুয়ে যাবে তারপর মাইল্ড সোপ দিয়ে আলতো ভাবে রাব করে তুলতে থাকুন।
- মনে রাখবেন জোর করে ঘষে, স্ক্রাব বা বেদিঙ সল্ট ব্যবহার করবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
চুলের কেয়ার
- চুলের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। প্রথমে চুল ভালোভাবে আঁচড়ে নেবেন। জল দিয়ে দিবেন না প্রথমেই। তাতে গুঁড়ো রং ঝরে পড়ে যাবে।
- এবার চুলের গোড়া ধরে ধরে তাতে শ্যাম্পু লাগিয়ে নিন ও পরে কন্ডিশনার।
প্যাক
- সবচেয়ে ভালো উপায় হলো সাবান প্রথমেই না ব্যবহার করে প্যাক ব্যবহার করা। এতে স্কিনের ট্রিটমেন্ট সবচেয়ে ভালো নেওয়া যায়।
- প্যাক লাগানোর আগে মুখে কোন সফ্ট ক্রিম লাগিয়ে নিন। এটা রংকে সোক করে নেবে। তারপর ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে প্যাক লাগাবেন।
- হলুদ, দই ম্যাসাজ করে মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে মুখ ধুয়ে নিতে পারেন। বেসন বা অলিভ অয়েল এর প্যাক বানিয়েও মুখে লাগাতে পারেন ত্বকের বিশেষ যত্নে।
ত্বকের বিশেষ যত্ন
- স্নানের পর আমাদের ত্বক রুক্ষ হয়ে যায়। যদি রং এ রাসায়নিক থাকে। তার থেকে মুক্তি পেতে মুখে লেবুরস, চন্দন গুঁড়ো, মিশিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে ফেলতে পারেন।
- এটা হালকা ভাবে মেসেজ করতে পারেন কানের পাশ, নাকের নিকটবর্তী অঞ্চল, চোখের ওপরের অংশে কারণ এইসব জায়গায় রং লেগে থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। চমৎকার কাজ দেবে।
- চুলের জন্য ডিম ও টক দই এর ফেসপ্যাক লাগাতে পারেন।
যে যে পয়েন্ট মিস করবেন না
- সানগ্লাস ক্যারি করা মাস্ট। চোখের সুরক্ষা সবার আগে। চশমা বা কন্ট্যাক্ট লেন্স থাকলে সেগুলো খুলে খেলবেন।
- চেষ্টা করবেন ভেষজ রং এ হোলি খেলার। স্কিনের জন্য খুবই ভালো।
- ত্বকে রং লেগে প্রদাহ বা জ্বালা হলে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- রং খেলার মাঝে মাঝেই ন্যাপকিন বা রুমাল দিয়ে আবির মুছতে থাকুন। এতে রং ত্বকে চেপে বসে রোমকূপ বন্ধ করতে পারবে না।
- খেলার আগে ওয়াটার প্রুফ মেকআপ বা ঠোঁটে লিপবাম মেখে নিতে পারেন।
- কখনোই রঙের উপর এন্টিসেপটিক ক্রিম লাগাবেন না। এতে রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়ে আরো কুপ্রভাব এর সম্মুখীন হবেন।
- রং যদি শত চেস্টাতেও না যায় তবে জোর করে রং ওঠাতে যাবেন না। এতে ত্বকে জ্বালা আরো বাড়বে। কিছুদিন সময় দিন আপনি সব উঠে যাবে।