কলকাতা শহর পুরনো শহর। ঐতিহ্য সম্পন্ন শহর। কলকাতার ঐতিহ্যের সাথে জড়িয়ে রয়েছে হাতে টানা রিক্সা। আজও উত্তর কলকাতায় গেলে চোখে পরে একটা মানুষের আরেকটা মানুষকে টেনে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য। কানে ঠুং ঠুং আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়। ছোটবেলায় যখন বাবার হাত ধরে কলকাতা শহর দেখতাম, তখন সবচেয়ে মজা লাগত হাতে টানা রিক্সা দেখে। মনে মনে ভাবতাম উফঃ কত শক্তি ওই রিক্সা কাকুটার শক্তিমানকেও হারিয়ে দেবে শক্তির জোরে। আজ যখন দেখি তখন নিজের উপর হাসি পায়। শহর আজ বিশ্বায়নের সাজে নিজেকে সাজিয়ে নিয়েছে। পুরনো ঐতিহ্যের অনেক কিছু নতুন ধ্যানধারণায় পরিবর্তিত হয়েছে। শুধু রয়ে গিয়েছে হাতে টানা রিক্সা।
হাতে টানা রিক্সা বা হাত রিক্সা প্রথম চালানো শুরু হয় জাপানে। ১৬শ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে জাপানে হাত রিক্সার উদ্ভব। সর্ব প্রথম ১৮৮০ সালে ভারতে জাপান থেকে হাত রিক্সা আনা হয়। সিমলাতে প্রথম চালানো শুরু হয়। তার প্রায় ২০ বছর পর ১৯০০ সালের শুরুর দিকে কলকাতায় হাতে টানা রিক্সার পথ চলা শুরু। আজও চলছে সেই উনিশকে শুরু হওয়া ঐতিহ্য। টুরিস্টদের কাছে কলকাতায় দেখার মত অন্যতম একটি বিষয় আজও এই হাত রিক্সা।
সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি হয় এই হাত রিক্সা। রিক্সার চাকা দুটো তৈরি হয় কাঠ দিয়ে। আকারে বড় হয় ও মোটা হয় চাকা দুটো। বসার জন্য যে জায়গা থাকে তা লোহা দিয়ে বানানো হয়। পা রাখার জায়গা থেকে রিক্সা টেনে নিয়ে যাওয়ার হাতল জোড়া থাকে। রিক্সা যিনি চালান তিনি হাতল ধরে সামনের দিকে রিক্সাকে টেনে নিয়ে যান। যাত্রীর সুবিধার কথা মাথায় রেখে ভালো মানের কাঠ দিয়ে ও দক্ষ কারিগর দিয়ে বানানো হয় এই রিক্সা। বৃষ্টির দিনে উঁচু নিচু রাস্তা খানাখন্দর কথা মাথায় রেখেই ভালো মানের কাঠ ও কারিগর দিয়ে রিক্সা তৈরি হয়।
কলকাতায় উনিশশতকে সেই যে পথ চলা শুরু হাত রিক্সার তা আজও প্রবাহমান। কালের গতি কিছুটা হলেও এই গতিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। তবে তিলোত্তমা কলকাতার বুকে আজ দেখা মেলেনা খুব একটা এই রিক্সার। উত্তর কলকাতার অলিগলিতে গেলে দেখতে পাবেন। একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে টেনে নিয়ে যাবে এ দৃশ্য অমানবিক। কলকাতাবাসী সবসময় মানবিক তাই তারা এই অমানবিকতাকে প্রশয় দেয় না আজ। সরকার থেকেও এই হাত রিক্সা চালানো নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু প্রায় ১৭হাজার মানুষ এই পেশার সাথে যুক্ত তাই অন্নের তাগিদে আইন অমান্য করে আজও রিক্সা চালাছে তারা।
শহরের সাথে সাথে সিনেমাতেও কলকাতার হাতে টানা রিক্সা অনেকবার দেখা গিয়েছে।
বিমল রায়ের ‘দো বিঘা জামিন’ সিনেমা আশাকরি কম বেশি সবার দেখা। ছবিটিতে প্রায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হাতে টানা রিক্সা দেখা যায়। গ্রামীণ এক কৃষকের কাজের সন্ধানে শহরে আসা ও রিক্সাকে জীবিকা বানানোর গল্প। দুটো হাতে টানা রিক্সার রেষারেষিকে কেন্দ্র করে পুরো সিনেমাটা।
আরেকটি সিনেমা ‘সিটি অফ জয়’ যেখানে রিক্সাওয়ালার চরিত্রে ওম পুরিকে দেখা গিয়েছিল। ভারতীয় চলচিত্রের দুনিয়াতে অনেক সিনেমাই আছে যাতে হাতে টানা রিক্সাকে বারবার দেখানো হয়েছে।
হাতে টানা রিক্সা ও রিক্সাওয়ালার কাহিনী নিয়ে অসাধারণ একটি বই আছে। বইটি বিখ্যাত লেখক ডোমেনিক ল্যাপিইয়ারের লেখা। ‘সিটি অফ জয়’। এই বইতে কলকাতার হাত রিক্সা ও তার চালকদের জীবনের গল্প সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক।
কলকাতার ঐতিহ্যর বাহক হয়ে হাত রিক্সার যাত্রা আবহমানকাল থাকবে না হয়তো, কিন্তু কলকাতার ইতিহাসে রিক্সার গল্পকথা অমর হয়ে থাকবে।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…