কলকাতা

শঙ্কর চক্রবর্তী (জুনিয়র) ‘জেনানা’ টু ‘খেলাঘর’ শ্যুটিং করার অভিজ্ঞতা

টলিউডের ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দা সবেতেই শঙ্কর চক্রবর্তী’র (জুনিয়র) অভিনয় দক্ষতা দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ধারাবাহিকে একাধিক চরিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি ‘জেনানা’ সিনেমায় ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির একটি চরিত্রে অভিনয় করার জন্য তিনি উচ্চ প্রশংসিত হয়েছিলেন। তার এই সিনেমার শ্যুটিং করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো আর এরকম চ্যালেঞ্জিং একটি চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে কতখানি প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল তাকে- সব নিয়েই সাক্ষাৎকার দিলেন সঙ্গীতা চৌধুরীর কাছে।

১) রানী রাসমণির নায়েব, বরণ ধারাবাহিকের কাকা, গগন মাখালের চরিত্রকে এত সুন্দর নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তোলেন কী করে?

শঙ্করদাঃ এটা ম্যান টু ম্যান ভ্যারি করে। আর একটা সবথেকে বড় প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে যে মানুষগুলো ছোটবেলা থেকে থিয়েটারের সাথে যুক্ত, সেই মানুষগুলো ছোট থেকে থিয়েটার করতে করতে চরিত্রের মধ্যে থাকা বিভেদ গুলোকে চিহ্নিত করতে পারেন। তাই তারা যেকোনো চরিত্র‌ই খুব তাড়াতাড়ি আত্মস্থ করতে পারে। তাই শুধু আমি নয় যেকোনো শিল্পীই এটা করতে পারেন যদি তার থিয়েটার জগতের সাথে সেই ছোটবেলা থেকে যোগটা থেকে থাকে।

২) নেতিবাচক না ইতিবাচক চরিত্র কোনটি আপনার পছন্দের?

শঙ্করদাঃ প্রথমত নেতিবাচক ইতিবাচক এরকম কোনো বিষয়ে তো হয়না। যারা প্রফেশনালি কাজ করেন, তারা ভাবেন ভালো চরিত্র কি কতটা ভালো প্রেজেন্ট করা যায়। কারণ কোন চরিত্রটি একটা স্ট্যান্ডার্ড জায়গা বা বাউন্ডারি নেই।তাই সেক্ষেত্রে বলতে পারি আমার কাছে দুটোই সমান আমি পজিটিভ চরিত্র যেভাবে করব ঠিক সেইরকম ভাবে তার উল্টোটা কেউ সেভাবেই ফুটিয়ে তুলবো ঠিক যেমন রাণীরাসমণির মল্লিক মশায় ও গগন মাখাল।

৩) শান্টুর সাথে অনস্ক্রিন সাপে-নেউলে সম্পর্ক বাস্তবে কেমন সম্পর্ক?

শঙ্করদাঃ আমরা সবাই ফ্রেন্ড। আমার তো কোন পারিবারিক চরিত্র নয়, এটা একটা পলিটিকাল লিডার চরিত্র মুখেই খুব বড়াই গগন মাখালের(হাসি)। শান্টুর সাথে আমার বেশ ভাল ভাব। আরেফিন একদম মাটির তালের মত, ভীষণ কো-অপারেটিভ একজন শিল্পী, আর খুব ঠান্ডা মাটির মানুষ। মেকআপ রুমে তো সবসময় বসে আমরা গল্প করি এছাড়া যখন আমরা কোনো সিন করি তখন‌ও খুব মজা করেই করি।

৪) খেলাঘরের শুটিং চলাকালীন কোন মজার ঘটনা?

শঙ্করদাঃ আমরা মজা করি ফ্লোরের ভিতরে। সোহনদাদের বাড়ির ফ্লোরটা বেশ স্কিট করা যায় ঐ কারণে আমরা সবাই মিলে ওখানে স্কিট করি। আর আমি বিভিন্ন ভয়েস নকল করতে পারি বলে আমাদের গ্রুপে বিষয়টা নিয়ে খুব মজা হয়।

৫) আপনার স্বপ্নের চরিত্র কী?

শঙ্করদাঃ স্বপ্নের চরিত্র তো ঐভাবে হয় না কারণ প্রত্যেকটি চরিত্র‌ই স্বপ্নের। তবে কাজ করতে করতে ১৮ বছরের আমার পেশাগত জীবনে একটি স্বপ্নের চরিত্র আমি সত্যিই পেয়েছি ২০১৭ সালে বর্ষালী চ্যাটার্জী পরিচালিত ‘জেনানা’ ছবিতে আমি ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির মূল চরিত্রটি করি। একটা মানুষ কীভাবে কতটা অভাবে নিজেকে ট্রান্সজেন্ডারের পেশাগত জীবনে প্রবেশ করায় তাদের জীবন কাহিনী নিয়ে ছিলো এই সিনেমা।

৬) খেলাঘরের কারা কারা প্রিয়?

শঙ্করদাঃ খেলাঘরের তো সবাই প্রিয় তবে বিশেষ করে বলতে গেলে মৌসুমী দি,বুলবুলি,মেয়েদের যে গ্রুপটা আছে তাদের কথা বলতে হয়, শান্টু তো আছেই। সব থেকে মজার সম্পর্ক যদি বলো তাহলে সুদীপের সাথে। খেলাঘরের সত্য চরিত্রটি করছে সুদীপ। ওর সাথে ছোট ভাইয়ের মতো খুনসুটির একটা সম্পর্ক রয়েছে আমার। এসো-মা-লক্ষ্মী থেকেই ওর সাথে আমার সম্পর্ক।

৭) শঙ্কর চক্রবর্তী থেকে গগন মাখাল হয়ে ওঠার জার্নিটা কতটা কঠিন ছিল?

শঙ্করদাঃ নিজের থেকে ভেঙে আর একটা চরিত্রে ঢোকা যেকোনো পজিটিভ বা নেগেটিভ চরিত্রের ঢোকা সেটা নিজের ওপরই নির্ভর করে। এটাকে ব্রেক করে আমি যে চরিত্রটি অভিনয় করবো সেটা পুরোটাই প্রেজেন্টেশনের উপর নির্ভর করে। আমি আগেও বলেছি এটা অভিনয়ের চর্চার ওপর নির্ভর করে। তবে এই চরিত্রের অফার যখন আসে তখন স্নেহাশীষদাকে আমি বলেছিলাম যে এই চরিত্রটা কি আমি এইভাবে করতে পারি, সেক্ষেত্রে হাউজ থেকে আমাকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল এবং আমি স্বাধীনভাবে চরিত্রটি করতে শুরু করি।

৮) রূপোলী পর্দার জগতে কীভাবে এলেন?

শঙ্করদাঃ আসাটা অদ্ভুত। আমি ক্লাস ফাইভে সিক্সে যখন স্কুলে ছিলাম সেই সময় সেখানকার থিয়েটারে আমার প্রথম অভিনয় শুরু এইভাবেই এইচএস হয়ে যায়। গ্রাজুয়েশন করছি ফার্স্ট সেই সময় থিয়েটারটা আরো বাড়তে থাকে। তারপর একদিন আমাদের ‘রূপমায়া’ থিয়েটারের নিভাদিদির হাত ধরে আমি এই জগতে আসি আর আমার প্রথম থিয়েটার দল ‘রূপমায়া’র পরিচালক শ্রদ্ধেয় ব্যোমকেশ চট্টরাজ মহাশয় ছিলেন আমার প্রথম গুরু, ওনার কাছেই আমার হাতে খড়ি হয়েছিলো।

‘রূপমায়া’ থিয়েটারের নিভাদি সেইসময় ইন্ডাস্ট্রিতে সহশিল্পীর কাজ করতেন, সেই নিভা দিদি আমাকে একদিন বললেন ‘একদিন ইন্ড্রাস্ট্রিতে দেখবে চলো‌’। সেইদিন শ্রদ্ধেয় পরিচালক স্বপন সাহার একটি ছবির শুটিং চলছিল হঠাৎ করেই অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর শঙ্করদা বললেন ‘এই ছেলেটিকে দাও তো আমি একটা ছোট চরিত্র করিয়ে নিই’ সেইদিন প্রথম পাঠ করেছিলাম কিন্তু আমি ভয় পাইনি। আর সেইদিন প্রোডাকশন ম্যানেজার আমার হাতে দেড়শোটি টাকা গুজে দিয়েছিলেন। অতবছর আগে ১৫০ টাকা অনেক ব্যাপার। সেটি আমার প্রথম শুরু এবং নিভাদিকে আমার পথ দেখানোর জন্য আমি ওনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ।

৯) প্রথম দিকের স্ট্রাগল নিয়ে যদি কিছু বলেন?

শঙ্করদাঃ সেইসময় ইন্ডাস্ট্রির একটা সিস্টেম ছিল নিজের পোর্টফলিও তৈরি করে বিভিন্ন হাউজের দরজায় দরজায় দিয়ে দেওয়া। আমি বিভিন্ন স্টুডিওতে ফটোর বান্ডিল নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম ঘুরে ঘুরে প্রত্যেকটা ঘরে একটা করে ফটো দিয়ে আসতাম, এটা রেগুলার করতাম এবং সেইসাথে থিয়েটার চালিয়ে যেতাম। এরপর দীর্ঘদিন পার্শ্বচরিত্র করেছি আমি, ছোট ছোট চরিত্র করতে করতে আমাদের ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র আর্টিস্টদের সহযোগিতায় একটু একটু করে বড় চরিত্র পেয়েছি। তারপর আজ এইজায়গায়। তারপর যখন বড় চরিত্র করতে শুরু করি এরপর কুরুক্ষেত্র, ধূপছায়াতে চান্স পেলাম তারপর আর ভাবতে হয়নি।

১০) অভিনেতা হয়ে ওঠার এই লড়াইয়ে পরিবারের কাকে কাকে পাশে পেয়েছেন?

শঙ্করদাঃ আমার মা-বাবা। যারা কখনোই আমাকে অভিনয়ের ক্ষেত্রে বাধা দেননি। তারপরে আমার স্ত্রী আমাকে সবসময় উৎসাহিত করেছেন। আজকে আমার মেয়ে খুব খুশি তার বাবার প্রফেশন দেখে। আর সবথেকে বেশি যার কথা আমার মনে পড়ছে, তিনি আমার সঙ্গে ১৫ বছর ধরে আছেন ও আগামীদিন গুলোতেও থাকবেন তিনি হলেন এই মুহূর্তে আমাদের ‘মিউনাস’ থিয়েটার দলের যিনি পরিচালক শ্রদ্ধেয় উৎসব দাস মহাশয়, আমার অভিনয়ের গুরু তিনি।

১১) মোট ছবি কতগুলো করেছেন?

শঙ্করদাঃ ছবি আমি তিন থেকে চারটে করেছি। তার মধ্যে লিড দুটোর মধ্যে একটা হল বর্ষালী চ্যাটার্জির জেনানা, অপরটি হলো সত্যজিৎ মজুমদারের দ্য রেড লাইন।

১২) জেনানার অফারটা কীভাবে পেয়েছিলেন?

শঙ্করদাঃ ২০১৫ র মাঝমাঝি সময়ে আমি যখন কলকাতায় পুরোদমে মেগা সিরিয়ালের কাজ করছি আর বোম্বে গোয়াতে একটা এ্যডের কাজ নিয়ে ব্যস্ত সেইসময় মেগাসিরিয়ালের একজন ম্যানেজার আমায় ফোন করে ছবির বিষয়ে জানান। সেই মুহূর্তে মেগা ধারাবাহিকের মধ্যে দিয়ে কীভাবে ছবির জন্য ডেট বার করবো সেটা বুঝতে পারিনি তাই ছবির প্রতি অতোটা উৎসাহ‌ও বোধ করিনি। তবে ম্যানেজার বাবু ফোন করেছিলেন বলেই আমি ওনার কথা শুনে একদিন ডিরেক্টরের বাড়িতে মানে বর্ষালির বাড়িতে চলে যাই। সেখানে গিয়ে স্টোরিটা শুনে আমার ভালো লেগেছিলো।

১৩) জেনানার আগে কখনো ট্রান্সজেন্ডারের ওপর কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিলো?

শঙ্করদাঃ হ্যাঁ, মিউনাস থিয়েটারের উৎসবদার সৌজন্যে আমি এর আগে এরকম একটা কাজ করেছিলাম। ‘স্বার্থপর’ নাটকে ট্রান্সজেন্ডারের কমেডিয়ান একটি চরিত্র পেয়েছিলাম, তাই পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিলো।

১৪) ছবিটা করার প্রতি উৎসাহ কীভাবে তৈরি হলো?

শঙ্করদাঃ আমি বরাবর‌ই মেগা ধারাবাহিকে কাজ করতে ভালোবাসতাম,তাই ছবির প্রতি অতোটা আকর্ষণ প্রথমে বোধ করিনি তবে ওনারা আমাকে ট্রান্সজেন্ডারের ভূমিকায় অভিনয় করতে বলেলে আমি সেটা করে দেখিয়েছিলাম। তখন প্রোডাকশন হাউজের সকলে আমার অভিনয় দেখে হাততালি দিতে শুরু করেন, এতে আমি উৎসাহিত বোধ করি আর আন্তরিকভাবে চরিত্রটিকে রূপদান করার জন্য চেষ্টা করতে শুরু করি।

১৫) নিজেকে যখন প্রথম নারী রূপে দেখলেন তখন কেমন লাগলো?

শঙ্করদাঃ আমার লুক সেট হ‌ওয়ার পর নিজেকে দেখে আমি নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।

১৬) সুমনা ক্যারেক্টার করবার জন্য কিছু বিশেষ কসরত করতে হয়েছিল?

শঙ্করদাঃ সুমনা ক্যারেক্টারটা করার জন্য আমাকে নাচ শিখতে বলা হয়েছিলো, আমিও রাজি হয়েছিলাম। শ্যুটিংয়ে নাচ করতে করতে অসুস্থ ও হয়ে পড়েছিলাম একবার, কিন্তু ফুল টিম আমাকে ভীষণভাবে সাহায্য করেছিলো।

১৭) মোট কতদিন শ্যুটিং হয়েছিল ছবিটার?

শঙ্করদাঃ প্রায় ১৫- ১৬ দিন শ্যুটিং করেছি তবে তার থেকেও বেশি নাচ প্র্যাক্টিস করেছি। নাচের ক্ষেত্রে টুয়া সরকারও তার ফুল টিম আমায় ভীষণভাবে সাপোর্ট করেছিলেন।

১৮) বর্ষালীদির সাথে কী রকম সম্পর্ক ছিল?

শঙ্করদাঃ বর্ষালিকে প্রথম দেখে আমি থ হয়ে গিয়েছিলাম কারণ এত ছোটো বয়সের একটা মেয়ে ডাইরেক্টর এটা অবাক হ‌ওয়ার‌ই বিষয়। তবে কাজ করতে গিয়ে বুঝেছি বয়সের তুলনায় ও অনেকবেশি দক্ষ। পুরো শ্যুটিংয়ে বর্ষালীকে আমি টিচার হিসেবে পেয়েছিলাম। আমি রসিকতা করে ওকে অঙ্কের টিচার বলতাম। ও যে জিনিসটা চাইতো সেটা না হলে খুব শাসন করতো আমাকে, আবার যখন চরিত্রটা ওর মনের মতো করে করতে পারতাম তখন খুশি হতো।

১৯) জেনানা’র গল্পটা ঠিক কী রকম ছিলো?

শঙ্করদাঃ সমু নিজের ছোটবেলার বন্ধু মালাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো, ঘটনাচক্রে এই সমুই হয়ে ওঠে সুমনা, ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির একজন প্রধান। এই সমু বা সুমনার চরিত্রটি ছিলো আমার।

২০) অনান্য চরিত্রে কারা কারা ছিলেন?

শঙ্করদাঃ আমার অপজিটে মালা চরিত্রটি করেছিলো সম্পূর্ণা। এছাড়া খরাজ দা, কাঞ্চন মল্লিক, রূপাঞ্জনা থেকে শুরু করে প্রিয়াঙ্কা, অপুদাও ছিলেন।

২১) জেনানা ছবিটি করতে গিয়ে ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির কারোর সাহায্য নিতে হয়েছিলো?

শঙ্করদাঃ হ্যাঁ, ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির প্রধান শীতলা মা আমাকে ছবির প্রথম থেকে শেষ দিন অবধি গাইড করেছিলেন। ওনার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি‌। ওনাদের কমিউনিটির সবাই এই কাজটাকে ভীষণভাবে সাপোর্ট করেছিলেন।

২২) ছবি করতে গিয়ে কোনো মজার অভিজ্ঞতা?

শঙ্করদাঃ সন্তোষপুরের গঙ্গাধারের ইটভাটায় আমাদের শ্যুটিং চলতো। একবার ইটভাটায় সাপ ঢুকে পড়েছিলো, কিন্তু সিন তো আর কাটা যাবেনা তাই ঐভাবেই চুপচাপ শ্যুটিং চলতে থাকে। সিন শেষ হ‌ওয়ার পর ডিওপি বললেন, ‘ আস্তে আস্তে বেরিয়ে এসো সাপ আছে’ যেই না শোনা অমনি বর্ষালি, সম্পূর্ণা, আমি সবাই মিলে দৌড়াতে শুরু করি (হাসতে হাসতে) আর একবার পায়ে ইট পড়ে যাওয়ায় ভীষণ চোট ও পেয়েছিলাম, তবে এটা বেদনাদায়ক অভিঞ্জতা বলতে পারো।

২৩) শ্যুটিংয়ে আপনি সমু আর সুমনার ভূমিকায় অভিনয় করার মাঝে কি গ্যাপ নিতেন?

শঙ্করদাঃ না। প্রতিদিনই আমাকে পুরুষ(সমু)আর মহিলা(সুমনা) সাজতে হতো। একটা চরিত্রের কাজ শেষ করেই অন্য চরিত্রে প্রবেশ করতে হতো।

২৪) একই সময় পুরুষ ও নারীর চরিত্রে অভিনয়, অসুবিধা হয়নি?

শঙ্করদাঃ দেখো আমি মনে করি যাদের থিয়েটারের একটা ব্যাকগ্রাউন্ড থাকে, তারা যে কোনো চরিত্রেই অভিনয় করতে সক্ষম। আমার‌ও অভিনয়ের হাতে খড়ি হয়েছিল থিয়েটার দিয়েই, তাই হয়তো আমি পেরেছিলাম।

২৫) জেনানা নামটা দেওয়ার পিছনে কী কারণ ছিলো?

শঙ্করদাঃ ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির চারটে ভাগের (আকুয়া, জেনানা, ছিবড়ি, ছিন্নী) মধ্যে জেনানা হলো একটি। জেনানা তারাই যারা জন্মগতভাবে পুরুষ কিন্তু প্রফেশনের জন্য নারী সেজে থাকেন। একই সাথে দুটো সত্তার বহন করে চলেন।

২৬) ছবির পর দর্শকদের রিঅ্যাকশন কেমন ছিলো?

শঙ্করদাঃ ২০১৫ সালে এই সিনেমার শ্যুটিং শুরু হয়েছিলো আর ২০১৬ তে ছবি রিলিজ করে। ছবিটা রিলিজ হ‌ওয়ার পর প্রচুর মানুষ দেখতে এসেছিলেন, ছবি দেখে বেরিয়ে অনেকেই কেঁদে ফেলেছিলেন, বেশ কিছু অ্যাওয়ার্ড ও পেয়েছিলাম। আজ‌ও এই ছবিকে নিয়ে মানুষের আবেগ চোখে পড়ার মতো। কিছুদিন আগে একদিন দক্ষিণেশ্বর গিয়েছিলাম, সেখানে প্রচুর মানুষ আমায় ঘিরে ধরেছিলেন, আমায় সুমনা হিসেবে চিনতে পেরে তারা উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন।

২৭) এই সিনেমাটা ঠিক কী বার্তা দেয়?

শঙ্করদাঃ একজন পুরুষের কর্ম চলে গেলে তার যে কী করুণ পরিণতি হয় সেটা আমরা সবাই জানি কিন্তু এই কর্মহীনতার সঙ্গে দুভার্গ্য জুড়ে গেলে কী হতে পারে! সেই দিকটি তুলে ধরা হয়েছিলো এই সিনেমায়। অভাব ও দুর্ভাগ্যের শিকার হয়ে একজন সমর্থ পুরুষ মানুষ কীভাবে এই জীবনকে বেছে নেয় ও নিজেকে নারী রূপে সাজিয়ে তোলে তাই দেখিয়েছে ‘জেনানা’।

২৮) দর্শকদের কিছু বলতে চান?

শঙ্করদাঃ দর্শকদের কয়েকটি কথা অবশ্যই বলতে চাই। এখন দর্শকদের টেস্ট পুরোটাই বদলে গেছে। আজ থেকে কুড়ি বছর আগে আমাদের ছোটবেলায় মানুষের টেস্ট যা ছিলো তা টোটালটাই বদলে গিয়েছে। মানুষ বিনোদনের এখন অনেক রকম জায়গা পেয়েছেন, টেলিভিশন রয়েছে মোবাইল রয়েছে কিন্তু বাংলা মেগা ধারাবাহিক যে খারাপ হয়ে গিয়েছে এই কথাটি কিন্তু আমি মানতে রাজি নয়।

  • সময়ের পরিবর্তনে প্রেজেন্টেশন পাল্টেছে অবশ্যই। বাংলা মেগা ধারাবাহিক বাঙালি জগতের কথা বলে মানুষের কথা বলে সমাজের কথা বলে। আপনি দর্শক হিসেবে সেই স্বাদটাকে কীভাবে নেবেন সেটা কিন্তু টোটালি ব্যক্তিগত ব্যাপার।
  • আজকে বহু মানুষ আছেন যারা মেগাসিরিয়ালের নামে বিভিন্ন রকম নেগেটিভ কথা বলে থাকেন, আমি তাদেরকে বলতে পারি যে এটা পুরোটাই তো বিনোদন, আপনাদের ভালো না লাগলে অন্য কোনো বিনোদন বেছে নেওয়ার অপশন তো আপনাদের হাতেই রয়েছে। তবে মেগা সিরিয়াল দেখার পর যখন কেউ নেগেটিভ বলেন তখন বলতে হবে আখেরে কিন্তু আমাদেরই লাভ হচ্ছে। কারণ আপনারা দেখছেন বলেই টিআরপি হচ্ছে।
  • গল্পের ভালো মন্দ আছে গল্পকে নির্বাচন করার ক্ষমতাও আপনার আছে, ভালোটাকে বেছে নিতে শিখুন। আপনার টেস্ট অনুযায়ী আপনি বেছে নিন, কিন্তু বিনোদন নিয়ে প্রকাশ্যে খারাপ বলা উচিত নয় কারণ এর সাথে গল্পকার থেকে শিল্পী সকলেরই পরিশ্রম জড়িয়ে থাকে। আর বাংলা মেগা ধারাবাহিক টেলিছবি সব বাস্তব থেকে উঠে আসে। পরমহংস দেব তো বলেছেন থিয়েটার লোক শিক্ষা দেয়।
Sangita Chowdhury

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago