সন্তানের জন্ম দেওয়া একজন মায়ের কাছে একটা বিরাট বড় পাওয়া। তবে সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে নর্মাল ডেলিভারি হবে না সিজারিয়ান ডেলিভারি হবে সেই নিয়ে চিন্তিত থাকেন অনেক প্রসূতি, বিশেষত যাঁরা প্রথমবার সন্তানের জন্ম দিতে চলেছেন।
অধিকাংশ নারী নর্মাল ডেলিভারি প্রত্যাশা করেন। কিন্তু শারীরিক পরিস্থিতির বিচারে অনেককে আবার সিজার ডেলিভারি করানোর প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু কয়েকটি নিয়ম মেনে চললে খুব সহজেই ব্যথা কম নর্মাল ডেলিভারি করানো সম্ভব হতে পারে।
১) সঠিক পথ্য
- সঠিক পথ্য নিয়ম করে খেলে এবং আপনার শারীরিক অবস্থা যদি ঠিক থাকে তাহলে কিন্তু যেকোনও গর্ভবতী মহিলাই নর্মাল ডেলিভারি করাতে পারেন।
- আর খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে প্রাচীনকাল থেকে বহু প্রথা প্রচলিত রয়েছে। অনেকে বলেন, গর্ভাবস্থায় ঘি বেশি করে খেলে গর্ভস্থ শিশু খুব সহজেই ভূমিষ্ঠ হতে পারবে।
- কিন্তু সত্যি বলতে খাদ্যনালীর সঙ্গে বার্থ ক্যানেলের সঙ্গে বায়োলজিক্যালি কোনও সম্পর্ক নেই।
- এরজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে খাওয়া-দাওয়া করুন।
- পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খেলে একদিকে তা যেমন আপনার সন্তানের স্বাস্থ্য গঠনে বিশেষভাবে সাহায্য করবে তেমনই, আপনার সন্তানকে ভুমিষ্ঠ করার জন্য শরীরে শক্তি যোগাবে।
২) ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
- পুষ্টিকর খাবার খাওয়া মানেই অনেক বেশি পরিমাণে খাবার খাওয়া নয়। খাবার খাওয়ারও একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ থাকা উচিত।
- গর্ভাবস্থায় অনেক মহিলারই মুখে খাবার রোচে না। তাই বলে কিছু না খেয়ে থাকাও যেমন খারাপ, তেমনই কোনও খাবার ভালো লাগছে বলে তা বেশি বেশি করে খাওয়াও ভালো নয়, এতে করে কোনও কারণে যদি ওজন বেড়ে যায় তাহলে সমস্যা।
- ওজন যদি খুব অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে যায় তাহলে তা কিন্তু নর্মাল ডেলিভারির পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
৩) গরম জলের ব্যবহার
- সন্তান গর্ভে ধারনের পর নিয়মিত গরম জলে স্নান করুন।
- তাই বলে অতিরিক্ত গরম জল কখনওই নয়। ঈষদ-উষ্ণ জল করে সেই জলে স্নান করুন।
- বাড়িতে যদি বাথ টব থাকে তাহলে গরম জল করে বাথ টবে বসুন।
- সেইসঙ্গে হালকা গরম জল পান করুন।
- এরফলে গর্ভাশয়ের পথ প্রশস্ত হয়, ফলে নর্মাল ডেলিভারি যন্ত্রণামুক্ত হতে পারে।
৪) মর্নিং ও ইভনিং ওয়াক
- সকাল এবং বিকেল করে হাঁটা অভ্যাস করুন।
- তবে অবশ্যই সমান জায়গায় হাঁটবেন।
- গর্ভাবস্থা সক্রিয় জীবনযাত্রা বজায় রাখা খুবই জরুরী।
- রীরের যাবতীয় ক্লান্তি এবং অলসভাব দূর করে।
- সেইসঙ্গে পেশীর সঞ্চালন ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
৫) যোগব্যয়াম
- গর্ভাবস্থায় যোগাভ্যাস করা খুবই জরুরী।
- যতদিন যায় বেবি বাম্প বড় হতে থাকে, তাই কোমর, উরু ও যোনি অঞ্চলের পেশি শক্তিশালী করতে যোগব্যয়াম অভ্যেস করুন।
- এইসময় প্রাণায়ম সবচেয়ে আদর্শ।
- তবে প্রেগনেন্সির কোন স্টেজে কী ব্যায়াম তা কিন্তু অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন।
৬) নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের অভ্যাস
- নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের অভ্যাস করলে তা আমাদের শরীরে স্ট্রেসের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
- আর গর্ভবতী মায়েরা যদি দমের চর্চা করেন, তাহলে গর্ভস্থ শিশুর শরীরেও পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে।
- শুধু তাই নয়, দমের অভ্যেস করলে গর্ভাশয়ের পথও নমনীয় হয়, এবং আপনার সন্তানও কিন্তু আপনাকে প্রসবে সাহায্য করবে।
- কীভাবে এবং কতক্ষণ ধরে এই দমের অভ্যাস করবেন, তা চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।
৭) স্ট্রেস ফ্রি জীবন যাপন
- জীবনে স্ট্রেস যত কম রাখবেন তা আপনার সন্তান এবং আপনার স্বাস্থ্যের পক্ষে ততই ভালো হবে।
- এরজন্য গান শোনা,ছবি আঁকার পাশাপাশি নিজের পছন্দমতো যেকোনও হালকা কাজ আপনি করতে পারেন। প্রথম সন্তানের সময় প্রত্যেকেরই একটা ভয় কাজ করে।
- কিন্তু জানেন তো, অতিরিক্ত নার্ভাসনেস এবং টেনশনের কারণে প্রসবের সময় অক্সিটোসিন নামে এক হরমোনের উৎপাদন কমে আসে।
- এই বিশেষ হরমোনটি ডেলিভারির সময় কম করতে সাহায্য করে।
- আর এই হরমোনটির নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে ডেলিভারি কিন্তু দীর্ঘায়িত হতে পারে।