গৃহ ও জীবনযাপন

৬টি ঔষধি গাছ যেগুলি কাজ করে প্রাকৃতিক ফার্স্ট এইড হিসাবে

সাধারন কিছু যেমন দুর্বাঘাস, গাঁদাফুল পাতা, লেবু পাতা এসব দিয়ে যে সাধারণ ট্রিটমেন্ট করে সেগুলোফল খেতে গিয়ে জিহ্বায় কামড় লাগা, হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়া কিংবা নখ ভেঙ্গে ফেলা, কিছু কাটতে যেয়ে হাত কেটে যাওয়া, ভাত রান্না করতে যেয়ে হাতে মাড় পরে পুড়ে যাওয়া বা ভাপ লেগে ফোঁস্কা পড়া, জ্বলে যাওয়া – এরকম ছোটখাটো দুর্ঘটনা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে হরহামেশাই ঘটে থাকে। হঠাৎ করে এমন কোনো দুর্ঘটনায় আমরা হকচকিয়ে যাই, কি করতে হবে বুঝে উঠতে পারি না। অনেক ক্ষেত্রে হাসপাতাল হয়ে যায় দূরে কিংবা হাতের কাছে থাকে না ফার্স্ট এইডের বক্সটাও।

এমন বিপদের পরিস্থিতিতে চারপাশে থাকা গাছপালা করতে পারে আমাদের উদ্ধার। সব সময় তো আর হাতের কাছে দরকারি সব উপকরণ পাওয়া যায় না বা যাবে না। কিন্তু আমাদের আশেপাশে গাছপালা অবশ্যই থাকবে। সেক্ষেত্রে এসব গাছপালা হতে পারে আমাদের ফার্স্ট এইড। সামান্য একটু জানাশোনা থাকলে দুর্ঘটনার পর সাধারণ ট্রিটমেন্ট করতে পারেন প্রকৃতি থেকেই। এতে থাকে ইনফেকশনের ভয়টাও। কিভাবে গাছপালা আপনার ফার্স্ট এইড হতে পারে? চলুন জেনে নেই আজ সে কথাই।

দূর্বাঘাসঃ

কোথাও ঘুরতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পরে গেলেন কিংবা খেলতে গিয়ে পা ছিলে গেলো, রক্ত ঝরছে, হাতের কাছে নেই ফার্স্ট এইড। এখন কি করবেন? চিন্তা নেই, আশেপাশে তাকালেই দেখবেন কোথাও না কোথাও রয়েছে দূর্বাঘাস। শিকড়সহ ঘাস টেনে তুলে হাতে ডলে শরীরের কেটে যাওয়া বা ছিলে যাওয়া অংশে লাগিয়ে দিন। রক্ত পরা বন্ধ হয়ে যাবে। দূর্বাঘাসের অ্যান্টি-সেপটিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ দাঁতের মাড়ির রক্ত পড়া বন্ধ করতেও দারুন কার্যকর। এছাড়াও চুলকানি, একজিমা, ডার্মাটাইটিস, ফুসকুড়ি, কুষ্ঠ, পাঁচড়াসহ যে কোনো ধরনের চর্মরোগ প্রতিরোধেও দূর্বাঘাস উপকারী। চোখের ইনফেকশন হলে দূর্বাঘাস পানিতে জ্বাল দিয়ে সেই পানির ভাপ নিলে উপকার পাওয়া যায়।

গাঁদাঃ

সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য যে ফুল গাছটা বেশি লাগানো হয় সেটি গাঁদা। এই ফুলের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, টিউমার কোষকে প্রতিহত করে। এতে থাকা ফ্যাভনয়েড মানুষের শরীরে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। গাঁদা ফুলের চা মুখের ব্রণ কমিয়ে ত্বককে মসৃণ করে তোলে। সেই সাথে এই চা হজম শক্তি বাড়ায়, শরীরের ব্যথা-বেদনা দূর করে। শরীরের কোথাও কেটে গেলে গাঁদা পাতার রষ পিষে লাগিয়ে রক্ত পরা বন্ধ হয়ে যায় ও ইনফেকশনের ভয় থাকে না। ক্ষত স্থান দ্রুত সারিয়ে তুলতে গাঁদা পাতার জুড়ি নেই।

ঘৃতকুমারীঃ

ঘৃতকুমারীকে অনেকে না চিনলেও অ্যালোভেরা গাছটা কিন্তু সকলেই চেনেন। এর গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। পোড়া স্থানে অ্যালোভেরার শ্বাস দিলে খুবই উপকার হয় এবং আরাম পাওয়া যায়। ফোঁড়া এবং চর্মরোগে নিয়মিত অ্যালোভেরার শ্বাসের প্রলেপ দিলে খুব অল্প সময়েই আরোগ্য লাভ করা যায়। অ্যালোভেরার শ্বাস খেলে কোষ্ঠ্যকাঠিন্য, যকৃতের রোগ ও প্লীহা রোগ সেরে যায়। ঘামাচিতে অ্যালোভেরার শ্বাসের প্রলেপ দিলে আরাম বোধ হয়। মাংসপেশীর ব্যথা কমাতে অ্যালোভেরার শ্বাস মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায়। দাঁতের ক্ষয় ও মুখের ঘা উপশম করে অ্যালোভেরা।

নিমঃ

নিমের তেতো স্বাদের জন্য অনেকেই একে পছন্দ না করলেও এটি কিন্তু খুবই উপকারী। ঔষধি গাছগুলোর মধ্যে নিম এমন একটি গাছ যা আপনি যে কোনো স্থানে খুব সহজেই পাবেন। হাত-পা কেটে যাওয়া, ছড়ে যাওয়া, ছিলে যাওয়া এসব সমস্যায় আগে নিমের পাতা ঘষে রসটা লাগিয়ে দিন, যন্ত্রনা উপশম হবে। কৃমিনাশক হিসেবে নিমের তুলনা হয় না। এলার্জী কমাতে চাইলেও ঔষধ হিসেবে নিম খেয়ে ফেলুন এবং আক্রান্ত স্থানে নিমের রসের প্রলেপ লাগান, দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন। এছাড়া দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া, দাঁত শির শির করা, দাঁত ব্যথার সমাধানে নিমের ডাল চিবালে বেশ ভালো উপকার পাওয়া যায়। ডায়াবেটিস রোগীর ব্লাড সুগার কমাতে নিমের পাতা চিবিয়ে খেলে তাৎক্ষনিক ফল পাওয়া যায়।

থানকুনিঃ

বর্ষাকালে মাটির দিকে তাকালেই দেখা যায় থানকুনি। বৃক্কাকৃতি পাতার লতা জাতীয় এই উদ্ভিদের ঔষধি গুণ অনেক। পেটের অসুখ সারাতে থানকুনি পাতা কয়েকটি নিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলুন। হজমে গোলমাল, ডায়রিয়া, আমাশয়, পেট ব্যথাসহ পেটের অসুখে খুবই কার্যকরী এটি। জ্বর-কাশিতে থানকুনি পাতার রস খেলে আরোগ্য লাভ হয়। শরীরের কোথাও ক্ষত হলে থানকুনি পাতা সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে ক্ষতস্থান ধুয়ে দিলে দ্রুত সেরে যায়। আঘাত পেয়ে শরীরের কোনো অংশ থেঁতলে গেলে থানকুনি পাতা বেটে হালকা গরম করে প্রলেপ দিলে সেরে যায়। এই পাতার রস নিয়মিত খেলে উচ্চ রক্তচাপ কমে যায় ও চুল পরা বন্ধ হয়।

তুলসীঃ

তুলসী এদেশের অতি জনপ্রিয় একটি ঔষধি গাছ। তুলসী পাতার চা অনেকেরই খুব পছন্দের। এর বীজ, পাতা, বাকল, শেকড়, ফুল সবই উপকারী। বাচ্চাদের অসুস্থতায় তুলসীর রস খুবই উপকারী। তুলসী পাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে খাওয়ালে বাচ্চাদের জ্বর, ঠান্ডা, সর্দি, কাশি ভালো হয়ে যায়। বাচ্চাদের শ্বাসকষ্ট কমাতে আদার রসের সাথে তুলসীর রস মিশিয়ে খাওয়ালে তাৎক্ষনিক আরাম পাওয়া যায়। দাঁদ রোগ হলে তাতে তুলসী পাতার রসে লবন মিশিয়ে লাগালে আরোগ্য লাভ হয়। ক্ষতিকর পোকামাকড়ের কামড়ে তুলসীর রস লাগালে ইনফেকশন হয় না, ব্যথা কমে যায়। মুখে দুর্গন্ধ ও ঘা দূর করতে নিয়মিত তুলসী পাতা বা বাকল সেদ্ধ পানি দিয়ে কুলি করুন।

মোহসিনা রহমান মুনিয়া

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago