এক সময়ে আমরা বাঙালিরাই সবচেয়ে বেশি বই পড়তাম, বই নিয়ে আলোচনা করতাম। কিন্তু দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে আমরা অভ্যস্ত হলাম কর্পোরেট কালচারে আর দোসর হিসেবে পেলাম ১০ ঘণ্টা, বা তার বেশি সময়ের অফিস আওয়ার্স, ক্লান্তি, হতাশা, প্রতিযোগিতা আর নিঃসঙ্গতা।
এর মাঝে আর বইটই ছুঁয়ে দেখার সময় আমাদের হয় না, ইচ্ছেও করে না। কিন্তু আমাদের হাতে এখন এই লকডাউনের মধ্যে বেশ খানিকটা সময় আছে। আর সেই সময়ে আপনার সবচেয়ে প্রিয় সঙ্গী কিন্তু হয়ে উঠতে পারে একমাত্র বইই। আজ আপনাদের এমন পাঁচটি বাংলা বইয়ের কথা বলব, যা সবার তো বটেই, বিশেষ করে বাঙালি মেয়েদের অবশ্যই পড়ে ফেলা উচিৎ।
আজকের মেয়েরা প্রায় সকলেই চান পড়াশোনা করতে ও তারপর চাকরি করতে। এটা আমাদের কাছে জল খাওয়া বা নিঃশ্বাস নেওয়ার মতোই স্বাভাবিক ব্যাপার যেন। কিন্তু ব্যাপারটা তো একদিনে স্বাভাবিক হয়নি। আজ আমরা টানা এতগুলো দিন ঘরে বসে বসে ক্লান্ত, একঘেয়েমির শিকার। কিন্তু আশাপূর্ণা দেবী সেই সময়ের কথা প্রথম প্রতিশ্রুতি বইটায় লিখছেন যখন মেয়েদের ঘরে থেকে ঘরের কাজ করাটাই স্বাভাবিক বা মান্য ছিল।
সেই স্বাভাবিকত্বকে অস্বাভাবিক করার যাত্রাপথ জানতে, আমাদের আগের প্রজন্মের লড়াই করে, পাথর কেটে আমাদের জয়যাত্রার রথ নিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি করার ইতিহাস আসুন এই সময়ে পড়ে ফেলি। টাকা রোজগার করে নিজের পায়ে তো দাঁড়িয়েছি, স্বাধীনতা পেয়েছি, সেই দাঁড়ানোর আর স্বাধীনতার নেপথ্যে কয়েক দশকের লড়াইটা জানবো না! তাই পড়ুন সত্যবতীকে, সুবর্ণলতাকে চিনুন, চিনুন নিজেকেও।
ঠাকুরবাড়ি আমাদের বাঙালিদের সংস্কৃতি জগতে মধ্যমণি। এক বাড়িতে একইসঙ্গে এতো রত্ন কলকাতা কেন, ভারত তথা বিশ্ব আগে দেখেনি। আমরা সাহিত্য, দর্শন, নাটক, ছবি আঁকা এই সবের সঙ্গে ঠাকুরবাড়িকে রাখি। কিন্তু সংস্কৃতির আরেক অঙ্গ আমাদের নিত্যদিনের যাপনও বটে আর তার অঙ্গ কিন্তু খাওয়াদাওয়া।
এই খাওয়াদাওয়া নিয়ে ঠাকুরবাড়ির মানুষদের বেজায় গবেষণা ছিল। তার একটির ফসল হল পূর্ণিমা ঠাকুরের লেখা ঠাকুরবাড়ির রান্নাবান্না। এখন লকডাউনে আমরা একটু নিজেদের ট্র্যাডিশনাল রান্না করছি বেশি, যেহেতু হাতে খানিক সময় পাচ্ছি, আর তা ফেসবুকে দিয়ে প্রশংসাও কুড়চ্ছি। এবার এই বই দেখে কিছু রান্না করে ফেলুন। আপনার মুকুটে একসঙ্গে দশটা পালক যুক্ত হবে এই কথা হলফ করে বলতে পারি।
সুচিত্রা ভট্টাচার্য আমাদের সকলেরই খুব কাছের একজন লেখক। দহন উপন্যাসটি তাঁর লেখাগুলোর মধ্যে অন্যতম ও জনপ্রিয়ও বটে। ঋতুপর্ণ ঘোষের এই উপন্যাসকে অবলম্বন করে ছবি বানানোর ফলে আরও খানিক জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এটি পড়তে বলব কারণ এখানে অনেক প্রশ্ন আছে যার মোকাবিলা আমরা আজও দাঁড়িয়ে মেয়েদের করতে দেখি।
মেয়েরা কত রাতে ফিরলে সে ভালো, ঘড়ির কাটা কটা পার করে ফেললে তাঁর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, সবচেয়ে বড় কথা, মেয়েদের সম্মান আর তাঁদের প্রতিবাদ করার ভাষা, সবই শেখায় এই উপন্যাসটি। এখনও তো মেয়েরা শ্বশুরবাড়ির বা বয়ফ্রেন্ডদের কাছে ‘টেকেন ফর গ্রান্টেড’, সে যতই রোজগার করুক না কেন। সেখানে দাঁড়িয়ে এই উপন্যাস কিন্তু পড়ে ফেলা চাইই।
এটি একটি আত্মজীবনী, লেখক সরলা দেবী চৌধুরানী। সম্পর্কে ইনি রবীন্দ্রনাথের ভাগ্নী, মানে দিদি স্বর্ণকুমারী দেবীর মেয়ে। কেন এই বইটি পড়তে বলছি? আজ তো আমরা বলি মেয়েদের বাইরে গিয়ে কাজ করতেই হবে, দরকার পড়লে অন্য রাজ্যে বা দেশে। আমরা বলি মেয়েদের একটু আত্মরক্ষা করার পদ্ধতিগুলো রপ্ত করা দরকার।
মেয়েদের বিয়ের বয়স নিয়ে কিন্তু আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবারে আজও একটু চিন্তা আছে, বয়স ২৫ পার হলেই কেমন যেন বাবা মায়েদের মন ধুকপুক শুরু হয়ে যায়। কিন্তু আজকের মেয়েরা বিয়ের বয়স বাড়িয়ে মোটামুটি আটাশ অবধি টেনে নিয়ে গিয়ে বেশ খানিকটা নিজেদের পিঠ চাপড়াচ্ছে আর আধুনিক হয়েছে ভাবছে।
তাহলে আপনাদের বলি, এই সরলা দেবী চৌধুরানী কিন্তু সেই সময়ে দাঁড়িয়ে, ঠাকুরবাড়ির মেয়ে হয়েও মাইসোরে গেছেন শিক্ষিকা হয়ে, অবাঙ্গালি কে বিয়ে করেছেন যার বয়স অনেক বেশি, নিজে বিয়ে করেছেন ৩৩ বছর বয়সে আর স্বদেশী আন্দোলনের সময়ে পুরুষদের লাঠিখেলা শিখিয়েছেন। বাগবাজার সর্বজনীনের দুর্গাপুজোয় আজও অষ্টমীর দিন যে বীরাষ্টমী পালন আর লাঠি খেলা হয়, তাঁর নেপথ্য ওনার অবদান কিন্ত অনেক। তাই এরকম একজন সাহসী আর আধুনিক মহিলার আত্মজীবনী কিন্তু আজকের আধুনিক মেয়েদের পড়া কর্তব্য।
এখন লকডাউনে অনেকেই বাড়ির বাইরে যেতে পারছেন না। তাই পুরনো ঘুরতে যাওয়ার ছবি ফেসবুকে আপলোড করছেন। ঘুরতে যাওয়ার শখ কিন্তু আপনি এই বইটি পড়েও দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো করে পূরণ করতে পারেন, তবে এক্ষেত্রে ঘোলের স্বাদ খানিক বেশি হতে পারে। কারণ আপনার সঙ্গী হতে চলেছেন নবনীতা দেবসেন।
আপনারা যারা একা ঘুরতে পছন্দ করেন, নিজের মতো করে বেরিয়ে পড়তে পছন্দ করেন তাঁদের জন্য একটি আদর্শ বই। বইয়ের প্রতি ছত্রে ছত্রে অফুরান প্রাণস্পন্দন ঠিক যেমন এই বইয়ের লেখকের। সশরীরে নাই যেতে পারেন, কিন্তু পাহাড়, বরফ আর অ্যাডভেঞ্চার মিলে মানসভ্রমণ বেশ উপভোগ্য হবে।
আশা করি এই বইগুলি পড়তে পড়তে আপনাদের একঘেয়েমি কাটবে আর বইয়ের সঙ্গে পুরনো বন্ধুত্ব আবার ফেরত আসবে। এই সময়ে আপনারা যেহেতু বাইরে গিয়ে বইগুলি কিনতে পারবেন না, তাই লিঙ্ক নিচে দেওয়া হল। আপনারা সহজেই পড়তে পারবেন। তাহলে উপভোগ করুন আপনার লকডাউনের দিনগুলি।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…