স্বাস্থ্য

২ বছরের শিশুর দৈনন্দিন খাবার তালিকাঃ কি খাবে আর কি খাবে না

শিশুদের জন্য মা এর দুধ অপরিহার্য হলেও তারপরে একটা ব্যালেন্স ডায়েট চার্টের দরকার পড়েই পড়ে। ২বছরের শিশুরা যেমন দুরন্ত হয় তেমনি বদলায় তাদের খাবার খাওয়ার মেজাজ তাই পুষ্টিগুণ মেনে তাদের পছন্দের খাবার যোগান দেওয়া সত্যি কষ্টের কাজ।

২ বছর বয়সী শিশুদের প্রায় ১২৫০কিলো ক্যালোরির চাহিদা যা পূরণে অভিভাবকদের সঠিক খাদ্যতালিকা নির্বাচন করা উচিত। স্বাস্থ্যকর অভ্যাস মেনে আদর্শ খাবারের চার্ট রাখছি তাই আপনাদের সামনে যাতে আপনার ফুটফুটের খাবার বায়ানাক্কার চিন্তায় ঝক্কি না পোহাতে হয়।

ভারসাম্য গড়ে তুলতে রুটিনে যে খাবার গুলো রাখবেন:

ডেয়ারি প্রোডাক্ট:

দুধ, দই, পনির ইত্যাদির মধ্যে ক্যালসিয়াম থাকে যা শিশুর হাড়, নখ, দাঁত এর গঠন মজবুত করে।

চিকেন:

নন ভেজ ডায়েটের মধ্যে চিকেন এর মধ্যে প্রোটিন আয়রন থাকে যা শিশু সহজে গ্রহণ করতে পারে। এটি রক্তে হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ বাড়ে আর অ্যানিমিয়ার প্রকোপ থেকে রক্ষা পায়।

মাছ:

মাছের মধ্যে এসেনশিয়াল ফ্যাটি এসিড থাকে যা ইমুনিটি বাড়াতে সাহায্য করে। বাচ্চা তাই সহজে জ্বর-সর্দি-কাশিতে ভোগে না আর ভেতর থেকে তরতাজা থাকে।

সোয়াবিন:

সোয়াবিন থেকে হেলদি অয়েল পাওয়া যায় যা শিশুর উচ্চতা বাড়ানোর জন্য দরকারি।

ড্রাই ফ্রুটস:

ওয়ালনাট, আমন্ড, হ্যাজেলনাট, কাজু, কিশমিশ, খেজুর এসবে কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম এর ক্ষমতা অনেকগুণ বেড়ে যায়।

সাইট্রাস ফল:

মৌসম্বি, কমলালেবু ইত্যাদি ফল ভিটামিন সি তে পরিপূর্ণ যা স্কার্ভির মতো মারণ রোগের হাত থেকে শিশুকে বাঁচায়। মাড়ি পোক্ত করতে ও কাটাছেঁড়ার থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভ করতে ভিটামিন সি রাখুন।

সব্জি:

ব্রকোলি, শিম, গাজর, পালং, মিষ্টি আলু, বিন্স, টমেটো, শাক ইত্যাদি থেকে ফসফরাস, জিঙ্ক, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফলিক এসিড ও এন্টিঅক্সিডেন্ট এ পরিপূর্ণ। বাড়ন্ত বাচ্চার সব চাহিদা সব্জিই উত্তমভাবে পূরণে সক্ষম।

ওটস ও চিজ:

প্রোটিন ও ভিটামিন বি১২ এর যোগান পাবেন এইদুটি খাদ্যে। ওটস বেশিক্ষন পেটভর্তি রাখতেও সহায়ক।

খাবার চার্ট:

দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় সুষম খাদ্যের সঠিক নির্বাচন ও বৈচিত্র দরকার যাতে খাবারের পুনরাবৃত্তি হয়ে একঘেয়ে না হয়ে ওঠে শিশুর কাছে এবং সে যাতে সহজে পরিপাক করতে পারে সেটাও লক্ষ রাখা দরকার।

১) রবিবার:

  • দিনের শুরু(সকাল ৭টা): ভেজিটেবল পোহা বা উপমা,বাদাম ও এককাপ দুধ
  • প্রাতঃরাশ (সকাল ১০টা): পছন্দের নাটস
  • লাঞ্চ (দুপুর ১২টা): ভাত ও মুরগির ঝোল
  • বিকেলের খাবার (বিকেল ৫টা): আপেলের জুস
  • ডিনার (রাত ৯টা): আলুর পরোটা ও লাইট চাটনি

২) সোমবার:

  • দিনের শুরু(সকাল ৭টা): স্টাফড ধোসা সাথে নারকেল চাটনি
  • প্রাতঃরাশ (সকাল ১০টা): ভেজিটেবল স্যুপ
  • লাঞ্চ (দুপুর ১২টা): ভাত,ডাল ও মাছ
  • বিকেলের খাবার (বিকেল ৫টা): মিল্ক শেক
  • ডিনার (রাত ৯টা): পনির রোল সাথে রায়তা

৩) মঙ্গলবার:

  • দিনের শুরু(সকাল ৭টা : ওটস
  • প্রাতঃরাশ (সকাল ১০টা): মরসুমি যেকোনো একটা ফল
  • লাঞ্চ (দুপুর ১২টা): সবজির খিচুড়ি ও ডিমের ভুজিয়া
  • বিকেলের খাবার (বিকেল ৫টা): কলার স্মুদি
  • ডিনার (রাত ৯টা): হাত রুটি ও তরকারি

৪) বুধবার:

  • দিনের শুরু(সকাল ৭টা): প্যানকেক সাথে ম্যাপল সিরাপ
  • প্রাতঃরাশ (সকাল ১০টা): কয়েকটা বিস্কিট ও চিজ একটুকরো
  • লাঞ্চ (দুপুর ১২টা): ভাত, মুরগির করি ও দই
  • বিকেলের খাবার (বিকেল ৫টা): মরসুমি ফল
  • ডিনার (রাত ৯টা): ভেজ পরোটা ও লাইট ডাল

৫) বৃহস্পতিবার:

  • দিনের শুরু(সকাল ৭টা): বাটার জ্যাম টোস্ট
  • প্রাতঃরাশ (সকাল ১০টা): এক কাপ দুধ বাদাম গুঁড়ো দিয়ে
  • লাঞ্চ (দুপুর ১২টা): ভেজ বিরিয়ানি ও স্যালাড
  • বিকেলের খাবার (বিকেল ৫টা): সেদ্ধ কর্ন ও ফল
  • ডিনার (রাত ৯টা): সুজির উপমা ও ড্রাই ফ্রুট

৬) শুক্রবার:

  • দিনের শুরু(সকাল ৭টা): ইডলি ও সাম্বার
  • প্রাতঃরাশ (সকাল ১০টা): ভেজ স্যুপ ও মুগ ডালের চিল্লা
  • লাঞ্চ (দুপুর ১২টা): মাছ,ডাল, ভাত ও কাস্টার্ড
  • বিকেলের খাবার (বিকেল ৫টা): পনির বা চিকেন কাটলেট
  • ডিনার (রাত ৯টা): ছোলার তরকারি ও কচুরি

৭) শনিবার:

  • দিনের শুরু(সকাল ৭টা): চিজ ও ভেজ অমলেট সাথে মাফিন
  • প্রাতঃরাশ (সকাল ১০টা): স্মুদি বা চকো শেক
  • লাঞ্চ (দুপুর ১২টা): ভেজ পোলাও ও মিক্সড ডাল
  • বিকেলের খাবার (বিকেল ৫টা): উত্তপম বা পুডিং
  • ডিনার (রাত ৯টা): ভাত, ডাল, ভাজি ও হালুয়া

বি.দ্র: শিশুর খাবারে তেল মশলার ব্যবহার একদমই করবেন না। রিচ খাবার খাওয়াবেন না। আর খাবার তালিকা অনুসরণ করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নেবেন। শিশুর ঘুমোনোর আদর্শ সময় রাত ১০টার মধ্যে হওয়া উচিত। তাই ঘুমোনোর আগে প্রতিদিনই অল্প গরম দুধ এর সাথে মধু দিয়ে খাওয়াতে পারেন।

খাবার খাওয়ানোর সময় যে বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন:

  • ফাস্টফুড ও কোল্ডড্রিংক জাতীয় জিনিস যতটা দেরি করে খাওয়ানো যায় সেটা দেখুন। জেদ করলেই শুনবেন না। টাটকা খাবার বেশি করে দিন।
  • মিল টাইমিং এর উপর কড়া নজর রাখুন। রুটিন ফলো করলে বাচ্চার সঠিক সময়ে খিদে পাবে ও পেট ভর্তি করে খেতে পারবে।
  • লাঞ্চ বা ডিনার এর আগে স্ন্যাকস বা লিকুইড দেবেন না।
  • একটা মিল এর খাবার সময় ২০মিনিট এর বেশি হওয়া ঠিক না।
  • খাবার সময় বাচ্চার গ্লুটেন বা ল্যাকটজ জাতীয় খাবারে এলার্জি হচ্ছে কিনা সেটা পর্যবেক্ষণ করুন ও সেই মতো সংশ্লিষ্ট খাদ্যে বদল আনুন।
  • জোর করবেন না ও ধৈর্য রাখুন। খাবার সময় টিভি বা ফোনে ভিডিও চালিয়ে খাওয়াবেন না।
Biswarup Parichha

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

3 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

3 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

3 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

3 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

3 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

3 বছর ago