লোকে বলে মশা মারতে কামান দাগা! শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা মশার গুনগুন উপদ্রব লেগেই থাকে আমাদের জীবনে।এর সাথে আসে ফাইলেরিয়া, ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুর মারণ অসুখ। অনেকসময় যা হয়ে ওঠে প্রাণঘাতী।
অবশ্যই তার জন্য আমরাও এন্টিমস্কিটো ভেপার, ম্যাট, কয়েল ইত্যাদি নিয়ে প্রস্তুত থাকি কিন্তু সেগুলো অজান্তেই শিশু, বয়স্ক ও শ্বাস রোগীদের প্রভূত ক্ষতি করে। এগুলোতে নানান রাসায়নিক উপাদান মজুত থাকে। তাই মশাকে তুচ্ছ ভেবে অবহেলা না করে সতর্কতা হিসেবে মশা নিরোধক সামগ্রী ব্যবহারে উদ্যোগী হোন। মশা রাতে এক্টিভ থাকে তাই নিজের বাড়িতে অতি সহজেই বানিয়ে নিন ঘরোয়া রেপেলেন্ট।
১. লেমন ইউক্যালিপটাস তেল:
উপকরণ:
১০মিলিলিটার লেমন ইউক্যালিপটাস তেল ও ৯০মিলিলিটার অলিভ তেল।
পদ্ধতি:
- ১০০মিলি তেলের বোতল নিয়ে তাতে ১০মিলি লেমন ইউক্যালিপটাস তেল যোগ করুন। দিয়ে ভালোভাবে মিক্স করুন।
- তারপর মিশ্রণে অলিভ তেল দিন ও নাড়িয়ে দিন। রেডি আপনার তেল।
উপকারিতা:
- লেমন ইউক্যালিপটাস অয়েলে থাকে সাইট্রোনেলাল ও পি মিথেন যৌগ যা খুবই উত্তম মশা প্রতিরোধক।
- তার সাথে অলিভ অয়েল যোগ হয়ে এক উগ্র গন্ধ তৈরি করে যা মশারা সহ্য করতে পারেনা।
২. পেপারমিন্ট অয়েল ও কোকোনাট অয়েল:
উপকরণ:
১০-১২ফোঁটা পেপার মিন্ট অয়েল ও ৩০মিলিলিটার কোকোনাট অয়েল।
পদ্ধতি:
- পেপারমিন্ট অয়েলের সাথে কোকোনাট অয়েল ভালোভাবে মিক্স করে নিন।
- তারপর সেটা এপ্লাই করুন হাত ও পায়ে বাইরে বেরোনোর আগে ২-৩বার।
উপকারিতা:
- দুটো তেলের সংমিশ্রণ রেপেলেন্ট পোটেন্সিয়াল এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
- পেপারমিন্ট এ থাকা লিমনেল ও মেন্থল ও নারকোল তেলে থাকা আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড মশা তাড়াতে খুবই কার্যকরী।
- নারকেল তেল পেপারমিন্ট এর বাস্পীভবনকে হ্রাস করে তার কার্যকারিতা বাড়ায়।
৩. নিম তেল ও কোকোনাট অয়েল স্প্রে:
উপকরণ:
১০ফোঁটা নিমতেল ও সাথে ৩০মিলিলিটার কোকোনাট অয়েল।
পদ্ধতি:
- নিম তেলের সাথে কোকোনাট অয়েল ভালোভাবে মিশিয়ে নিন দিয়ে একটা ভালো মারজিং ঘন ক্রিম এর মত বানান।
- এবার সেটা হাতে নিয়ে দেহের এক্সপোসড জায়গাগুলোতে লাগিয়ে নিন।
উপকারিতা:
- নিমতেল নিমফল ও বীজ থেকে সংগৃহীত তাই এতে এন্টিব্যাক্টেরিয়াল ও জীবাণুনাশক প্রপার্টিজ থাকে যা নারকেলের সাথে খুবই কাজে দেয়। মশা পালানোর পথ পাবেনা।
৪. অ্যাপেল সিডার ভিনিগার এসেন্সিয়াল অয়েল স্প্রে:
উপকরণ:
৫০মিলিলিটার অ্যাপেল সিডার ভিনিগার, ৫০মিলিলিটার জল ও ১০-১২ ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল যেটা লবঙ্গ বা সাইট্রোনেল্লা যা কিছু নিতে পারেন।
পদ্ধতি:
- অ্যাপেল সিডার ভিনিগার ও জল সমপরিমাণে মেশান।
- তারপর কিছুপর কয়েকফোঁটা এসেন্সিয়াল অয়েল দিন ও মিক্স করুন।
- এরপর সল্যুশনটি বায়ুনিরুদ্ধ পাত্রে স্টোর করুন।
উপকারিতা:
- এটি তেলের রেপেলেন্ট এসেন্সিয়াল বাড়িয়ে দেয় ও সাথে ত্বক ও ময়েশ্চারাইজ করে।
- পাশাপাশি ভিনিগার চামড়ার অম্লমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
৫. চা তেল ও কোকোনাট অয়েল স্প্রে:
উপকরণ:
১০ ফোঁটা চা তেল ও সাথে ৩০মিলি কোকোনাট অয়েল।
পদ্ধতি:
- বাড়ির কিচেনে পেয়ে যাওয়া এই সহজ জিনিসগুলি দিয়ে সহজেই মশাকে দূর করতে পারবেন।
- দুটো তেল সমপরিমাণে নিয়ে তা ভালোভাবে মিক্স করে বোতলে ভরে ফেলুন।
- বাইরে বেরোনোর সময় অবশ্যই গায়ে হাতে পায়ে মেখে বেরোন।
উপকারিতা:
- চা তেল এন্টিসেপটিক ও এন্টি ইনফ্লেমেটরী যা কিনা মশাদের জম বলেই পরিচিত ।
- এর এমনি ঝাঁঝাঁলো গন্ধ যে মশা বাবাজি হুল ফোটানোর সাহসই পাবেনা।
৬. সাইট্রোনেলা তেল ও এলকোহল স্প্রে:
উপকরণ:
১০মিলি এলকোহল ও ১০ফোঁটা সাইট্রোনেলা তেল ও ৯০মিলি জল।
পদ্ধতি:
- প্রথমে জল ও এলকোহল ভালোভাবে মিক্স করে নিন।
- তারপর তাতে এড করুন সাইট্রোনেলা তেল এবং সেটা বোতলে ভরে রাখুন।
- এবার প্রয়োজনমতো স্প্রেয়ার এ নিয়ে গায়ে স্প্রে করে নিতে পারেন।
উপকারিতা:
- সাইট্রোনেলা লেমনগ্রাস থেকে নেয়া হয় যাতে সাইট্রোনেলাল, জেরানিওল, সাইট্রাল ও লিমনিন থাকে যা মশা তাড়াতে পারে চটপট।
- এটা ডিইই পি এর সমতুল্য । এলকোহল সাইট্রোনেলার শক্তি বাড়ায়।এতে থাকে থিয়ামিন যা মশার চরম শত্রু।
৭. দারচিনি অয়েল স্প্রে:
উপকরণ:
১০ফোঁটা দারচিনি তেল,৩০মিলিলিটার জল।
পদ্ধতি:
- দুটি উপকরণ নিয়ে সেটা ভালো করে মিক্স করে একটি সম্পৃক্ত দ্রবণ বানান।
- তারপর সেটা দরকার মতো শরীরে স্প্রে করে নিন। মশার প্রকোপ বেশি হলে দিনে দুবার ও ব্যবহার করতে পারবেন।
উপকারিতা:
- এটা জনপ্রিয় ঘরোয়া উপায়।দারুচিনি গাছের ছাল তাই এতে থাকে সিনামাইল, আসিটেট, ইউজিনল ও এনহোল যা শক্তিশালী ভাবে মশার দমন করে।
- চামড়ায় এক মোটা পরত বানায় যাতে মশা হুল ফোটাতে পারেনা।
- এডিস ইজিপটাই মশাদের বাড়বাড়ন্ত উল্লেখযোগ্য ভাবে রোধ করে ।
৮. ল্যাভেন্ডার ভ্যানিলা ও লেমন জুস স্প্রে:
উপকরণ:
১০-১২ফোঁটা ল্যাভেন্ডার,৩-৪ টেবিলচামচ ভ্যানিলা এসেন্স, ৩-৪ টেবিলচামচ লেমন জুস ও সাথে ১-২ কাপ জল।
পদ্ধতি:
- ল্যাভেন্ডার ও ভ্যানিলা এসেন্স একটি পাত্রে নিয়ে ভালো করে মিক্স করুন দিয়ে ভালো করে স্টার করুন।
- তারপর তাতে একটু একটু লেমন জুস এড করে মাখাতে থাকুন।
- শেষে ২কাপ মতো জল দিয়ে মিশ্রণটি তৈরি সম্পন্ন করুন।
উপকারিতা:
- ল্যাভেন্ডারের স্মেল একটা প্রশান্তির অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। এতে থাকে লিমনিন, লেনালল ও ক্যামফোর যেটা যেকোনো পোকামাকড় নিরোধক।
- ভ্যানিলা এসেন্স ও লেমনে সাইট্রিক এসিড মশা প্রতিরোধক উপাদান হিসেবে কাজ করে।
৯. বেকিং সোডা ভিনেগার স্প্রে:
উপকরণ:
১কাপ ভিনেগার ও ১/৪কাপ বেকিং সোডা।
পদ্ধতি:
- একটা বোতল নিয়ে তার হাফ কাটুন ও তার একদম তলার দিকে বেকিং সোডা এড করুন।
- এরপর উপরের দিকটা মুড়ে ফানেলের আকৃতি দান করুন।
- এবার ওই ফানেল দিয়ে অল্প অল্প করে ভিনেগার বোতলের ভিতরে ঢালতে থাকুন।
- তারপর মিশ্রণ রেডি।
উপকারিতা:
- এটা যেখানে মশার প্রজনন বেশি বলে মনে হচ্ছে সেখানে উন্মুক্ত করে রেখে দিন।
- বেকিং পাউডার ও ভিনিগার বিক্রিয়া করে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন করে যা মশাদের প্রথমে আকৃষ্ট করে ও তারপর তাদের দম বন্ধ করে মেরে ফেলে।
- অতএব বুঝতেই পারছেন মশাদের বংশ সমূলে বিনাশ করতে হলে এটি আপনার চাই।
১০. গার্লিক তেল:
উপকরণ:
৫-৬টা গার্লিক, লবঙ্গ তেল ৫-৬ ফোঁটা, ১টেবিলচামচ মিনারেল তেল, ১টেবিলচামচ লাইম জুস ও ২কাপ জল।
পদ্ধতি:
- রসুন কোয়া থেঁতো করে তার সাথে মিনারেল ও লবঙ্গ তেল ব্যবহার মিশিয়ে ফেলে রাখুন।
- এগুলো একসাথে মিসতে দিন এক রাত্রি অব্দি। তারপর সকালে ছিবড়ে গুলো ফেলে দিন।
- এরপর তাতে লাইম জুস এড করুন। ব্যাস আপনার স্প্রে রেডি। এটা বাড়ির অন্ধকার জায়গা ও গাছের কাছে দিতে পারেন যেখানে মশাদের আনাগোনা লেগে থাকে।
উপকারিতা:
- রসুনে অ্যালিসিন থাকে যা স্ট্রং ও শার্প রেপেলিং ইফেক্ট থাকে।
- লেমন ও লবঙ্গতে থাকে ইউজিনল যাতে মশা ছাড়াও অন্যান্য মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট ধ্বংস করে।