বাড়িতে বসে বসে ক্লান্ত। হয় ওয়ার্ক ফ্রম হোম, নয়তো ঘর গুছানো, রান্নাবান্না এইসব। কী ভাবছেন, খানিক সিনেমা দেখবেন, তাও পুরনো বাংলা সিনেমা! আর তখনই মাথায় ভিড় করে এলো সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, আরেকটু এগোলে ঋতুপর্ণ ঘোষ বা অপর্ণা সেন।
ধুর! সে সব তো সিরিয়াস সিরিয়াস সিনেমা। এই করোনার কালে একটু হাসানোর মতো বাংলা ক্লাসিক সিনেমা আছে কি! আছে আছে, বাংলা সিনেমায় কমেডি আর ক্লাসিক মিলিয়েছে যে কাল্ট সিনেমাগুলো, সেরকম দশটা সিনেমার নাম রইল আজকের আর্টিকেলে।
এই সিনেমা এতো দিনেও যদি না দেখে থাকেন তাহলে সেটা অপরাধ। গল্প মানে প্লট, কাস্টিং, পরিচালনা সব দিক থেকে শ্রেষ্ঠ এই ছবি। তপন সিংহের পরিচালনায় এই ছবি এতই জনপ্রিয়ও হয় যে এর অনেক রিমেক হয় অন্য ভাষায়।
১৯৬৬ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমা আজও অনেক বিদেশী ছবিকে টক্কর দিতে পারে। একটি বাড়িতে কারোর সঙ্গে কারোর মিল নেই। সেখানে তাই কোনও কাজ ভালো করে হয় না। সেই বাড়িতে আসেন একজন চাকর, হঠাৎ করেই।
তারপর সেইই এক সূত্রে বেঁধে ফেলে বাড়ির সবাইকে। কীভাবে? তার জন্য সিনেমাটি দেখতে হবে। চাকরের ভূমিকায় রবি ঘোষ, সুতরাং সিনেমার মান বুঝতেই পারছেন। এছাড়া আছেন ছায়া দেবী, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, চিন্ময় রায়, কাকে ছেড়ে কার নাম বলব। সুতরাং এই সিনেমা দেখতেই হবে।
গল্প হলেও সত্যি
মুক্তির দিনঃ ১৯৬৬ সাল
পরিচালকঃ তপন সিংহ
মুখ্য ভূমিকায়ঃ রবি ঘোষ, ছায়া দেবী, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, চিন্ময় রায়।
এই সিনেমা সম্বন্ধে আর কী বলব নতুন করে। উত্তমকুমার আর সুচিত্রা সেনের একদম শুরুর দিকের সিনেমা এটি। ১৯৫৩ সালে নির্মল দে’র পরিচালনায় এই সিনেমা তৈরি হয়। এটি বিখ্যাত নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের একটি গল্পের আধারে তৈরি করা হয়। তবে এই সিনেমার মূল কেন্দ্রবিন্দু তুলসী চক্রবর্তী, সঙ্গে মলিনা দেবী। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় আর জহর রায়ের জন্য এই সিনেমা কমেডি মুভি হিসেবে এক অনন্য মাত্রা পেয়েছে। একটি ছেলেদের বোর্ডিং হাউসে একজন মহিলার গোটা পরিবার নিয়ে থাকা প্রসঙ্গ, খানিক খুনসুটি, তারপর প্রেম, সব মিলিয়ে দেখতে বেশ ভালোই লাগবে, বেশ রিফ্রেসিং। আর এই সিনেমার বিখ্যাত ডায়ালগ মাসিমা মালপোয়া খামু তো আমাদের বাঙালি ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে।
সাড়ে চুয়াত্তর
মুক্তির দিনঃ ১৯৫৩ সাল
পরিচালকঃ নির্মল দে
মুখ্য ভূমিকায়ঃ তুলসী চক্রবর্তী, মলিনা দেবী, সুচিত্রা সেন, উত্তম কুমার, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, জহর রায়।
এই সিনেমা তুলসী চক্রবর্তীর। পরশুরাম বা রাজশেখর বসুর পরশপাথর গল্প অবলম্বনে এই সিনেমা তৈরি হয়। কে করেছিলেন জানেন পরিচালনা? সত্যজিৎ রায়। অপু সিরিজের বাইরে এটি তাঁর প্রথম সিনেমা যা মুক্তি পায় ১৯৫৮ সালে। সুতরাং পরিচালনা আর তুলসী চক্রবর্তীর অভিনয়, সব মিলিয়ে যে সিনেমাটি পেটে খিল ধরাবে তা বোঝাই যায়। পাহাড়ি সান্যাল, ছবি বিশ্বাস, জহর রায়, কালী বন্দ্যোপাধ্যায় এরকম রত্নের সমাবেশ ঘটেছিল এই সিনেমায়। আর এই সিনেমার মিউজিক করেছিলেন রবি শঙ্কর। ব্যস, এইটুকু একটি সিনেমা দেখার জন্য যথেষ্ট। বিদেশী সিনেমার সঙ্গে টক্কর দেওয়ার জন্যও এইটুকু তথ্য যথেষ্ট। বাকী একজন সামান্য বাঙালি কেরানী কীভাবে পরশ পাথর বা অদ্ভুত যাদুময় একটি পাথর পেয়ে জীবন বদলে ফেললেন তা হাসির মাধ্যমে অনবদ্য ভাবে এখানে দেখানো আছে।
পরশপাথর
মুক্তির দিনঃ ১৯৫৮ সাল
পরিচালকঃ সত্যজিৎ রায়
মুখ্য ভূমিকায়ঃ তুলসী চক্রবর্তী, পাহাড়ি সান্যাল, ছবি বিশ্বাস, জহর রায়, কালী বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৯৭০ সালে নিত্যানন্দ দত্তের পরিচালনায় এই অসাধারণ সিনেমা মুক্তি পায়। প্রধান চরিত্রে ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আর অপর্ণা সেন। রেলগাড়িতে যেতে যেতে দুই যাত্রীর বাক্স কীভাবে বদলে যায় আর তা নিয়ে হাসকর কীরকম ঘটনা ঘটে তাই নিয়েই এই সিনেমা। এর সঙ্গে মেলে খানিক প্রেম। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আর অপর্ণা সেনের অভিনয় নিয়ে কিছু তো বলার নেই। এছাড়াও ছিলেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। এই সিনেমাটি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি গল্প অবলম্বনে তৈরি হয় আর এর মিউজিক করেন সত্যজিৎ রায়। সুতরাং এই সিনেমা দেখতেই হবে।
বাক্স বদল
মুক্তির দিনঃ ১৯৭০ সাল
পরিচালকঃ নিত্যানন্দ দত্ত
মুখ্য ভূমিকায়ঃ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়।
আরেকটি ক্লাসিক সিনেমা, বাংলা সিনেমার ইতিহাস লেখা হলে যেটিকে বাদ দিয়ে লেখা যাবে না। ১৯৭১ সালে এই সিনেমা তৈরি হয়। এতে মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন উত্তমকুমার আর মাধবী মুখোপাধ্যায়। ‘আমি কোন পথে যে চলি, কোন কথা যে বলি’ থেকে ‘আরও দূরে চলো যাই’ এই সব কালজয়ী গান যা আজও সমাদৃত তা সব এই সিনেমার। উত্তমকুমারকে যদি চিনতে চান এই সিনেমা দেখা মাস্ট। উত্তমকুমার এখানে ড্রাইভার সাজেন আর তাঁর সঙ্গে মাধবী মুখোপাধ্যায়ের প্রেম, এই নিয়ে খুব হাসির একটা সিনেমা। সঙ্গে আছে জহর রায়ের টাচ। মন খুব ভালো করে দেবে।
ছদ্মবেশী
মুক্তির দিনঃ ১৯৭১
পরিচালকঃ অগ্রদূত
মুখ্য ভূমিকায়ঃ উত্তমকুমার, মাধবী মুখোপাধ্যায়, বিকাশ রায়, জহর রায়, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়, তরুনকুমার, অনুভা গুপ্ত, সমিতা বিশ্বাস।
এটিও খুব হাসির একটি সিনেমা। রঞ্জিত মল্লিকের প্রথম দিকের সিনেমা এটি। সঙ্গে নায়িকা ছিলেন মিঠু মুখার্জী। রঞ্জিত মল্লিক একজন এলিজিবল ব্যাচেলর। তাঁর বিয়ে নিয়ে কত রঙ্গ তামাশা। তারপর একজন মেয়ের সঙ্গে প্রেম আর সেই সূত্রে বেশ ভালো কমেডি। রঞ্জিত মল্লিকের দাদার ভূমিকায় উত্তমকুমার আর বৌদির ভূমিকায় সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় অনবদ্য। ১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমা আপনাকে আনন্দ দেবেই।
মৌচাক
মুক্তির দিনঃ ১৯৭৫ সাল
পরিচালকঃ অরবিন্দ মুখার্জী
মুখ্য ভূমিকায়ঃ উত্তমকুমার, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, রঞ্জিত মল্লিক, মিঠু মুখার্জী, শেখর চট্টোপাধ্যায়।
এই সিনেমার নাম জানেন না এমন বাঙালী নেই খুব একটা। উত্তমকুমারের শেষ সিনেমা আর এই সিনেমা করতে করতেই তিনি মারা যান। একটি গ্রামের মেয়ে, যেখানে অভিনয় করেন মৌসুমি চট্টোপাধ্যায়, তাকে শিক্ষিত করে ভদ্র সমাজের সামনে আনা, আর সেই সূত্রে কমেডি,এই হল মূল প্লট। মৌসুমি চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম দিকের সিনেমা, অভিনয় দেখার মতো। আজও দেখলে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাবে। ১৯৮১ সালে এটি রিলিজ হয়। উত্তমকুমারের স্ত্রীর ভূমিকায় সুমিত্রা মুখার্জীও অনবদ্য ছিলেন। এখনও না দেখে থাকলে দেখে নিন অবশ্যই।
ওগো বধূ সুন্দরী
মুক্তির দিনঃ ১৯৮১ সাল
পরিচালকঃ সলিল দত্ত
মুখ্য ভূমিকায়ঃ উত্তমকুমার, সন্তোষ দত্ত, সুমিত্রা মুখার্জী, রঞ্জিত মল্লিক, মৌসুমি চট্টোপাধ্যায়, হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়।
এটি একটি কাল্ট সিনেমা। দীনবন্ধু মিত্রের লেখা উপন্যাস অবলম্বনে এই ছবি তৈরি হয়। দু’জন জীবন্ত মানুষের যমালয়ে গিয়ে কী অবস্থা হয় তাই নিয়ে গল্প। কী করে একজন জীবন্ত মানুষ যমালয়ে গেলেন, কেন গেলেন, এই সব জানার জন্য তো আপনাকে এই ছবি দেখতে হবে। আমরা খালি বলতে পারি কারা ছিলেন এই ছবিতে। মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে উপযুক্ত সঙ্গত দিয়েছিলেন ছবি বিশ্বাস, জহর রায়, তুলসী চক্রবর্তী। কমল মিত্র যমরাজের ভূমিকায় অনবদ্য। এটি দেখে নিতেই হবে।
যমালয়ে জীবন্ত মানুষ
মুক্তির দিনঃ ১৯৫৮ সাল
পরিচালকঃ প্রফুল্ল চক্রবর্তী
মুখ্য ভূমিকায়ঃ ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, ছবি বিশ্বাস, জহর রায়, তুলসী চক্রবর্তী, বাসবি নন্দী, কমল মিত্র।
নামটাই খুব অনবদ্য, তাই না! একজন বয়স্ক মানুষ একটি পুকুরে ডুব দিয়ে তাঁর যৌবন ফিরে পান। তারপর তাঁর জীবনে কী কী ঘটে সেই নিয়ে খুব অনবদ্য এভারগ্রিন একটি সিনেমা। বয়স্ক মানুষটির ভূমিকায় অভিনয় করেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর স্ত্রীর ভূমিকায় ছিলেন রুমা গুহ ঠাকুরতা। এছাড়াও ছিলেন রবি ঘোষ, জহর রায়। এইরকম কাস্টিং থাকলে যে কোনও সিনেমা দেখে নেওয়া যায় এক নিঃশ্বাসে। এই সিনেমায় হাসির উপাদানের জন্য গানের ভূমিকাও অনেকটা। ১৯৬৭ সালে মুক্তি পাওয়া এই কমিক মুভি কিন্তু আজও সমান জনপ্রিয়।
৮০তে আসিও না
মুক্তির দিনঃ ১৯৬৭ সাল
পরিচালকঃ শ্রী জয়দ্রথ
মুখ্য ভূমিকায়ঃভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, কমল মিত্র, রুমা গুহ ঠাকুরতা, রবি ঘোষ, জহর রায়।
বাংলা সিনেমা কমেডি নিয়ে হবে আর তাতে টেনিদা থাকবে না তা তো হয় না। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের টেনিদা আমরা সবাই পড়েছি। সেই টেনিদাকে ভিত্তি করে এই ছবি তৈরি হয় ১৯৭৮ সালে। টেনিদা আর তাঁর তিন সাগরেদ, ক্যাবলা, হাবুল আর প্যালারাম ঠিক করে ঘুরতে যাবে রামগড়। সেখানে গিয়ে তাঁদের অ্যাডভেঞ্চার করতে গিয়ে কী সমস্যার পড়তে হয়, আর তার থেকে মুক্তির পথ বের করা দেখে এতো হাসি পাবে আপনাদের যে বলার নয়। টেনদার চরিত্রে চিন্ময় রায় আজও আমাদের মনে রয়ে গেছেন। এছাড়াও ছিলেন রবি ঘোষ। একদিন দুপুরে খেয়ে দেয়ে এই সিনেমাটি দেখে নিন।
চারমূর্তি
মুক্তির দিনঃ ১৯৭৮ সাল
পরিচালকঃ উমানাথ বন্দ্যোপাধ্যা
মুখ্য ভূমিকায়ঃ চিন্ময় রায়, সন্তোষ দত্ত, রবি ঘোষ, বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়, কাজল গুপ্ত, শম্ভু ভট্টাচার্য।
এই দশটি ক্লাসিক সিনেমা সামনের কয়েক দিনে দেখে নিন। আমরা ডিটেইল গল্প বললাম না, কারণ গল্প বললে আর সিনেমা দেখার মজা কোথায়। হাসাতে তো পারে সিনেমা নিজেই। তাই আর দেরী নয়।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…
View Comments
আমি তো দেখবোই ছদ্মবেশী আর মৌচাক।কিন্তু কি ভাবে দেখবো।কারণ টিভি তে তো এখন এই সিনেমা গুলো দেখা না
ইউটিউবে পেয়ে যাবেন।