ধর্ম ও সংস্কৃতি

হাঁচি হলে বসে যেতে বলা হয়। কেন? কুসংস্কার না আছে বৈজ্ঞানিক কারণ?

আপনি বাইরে বেরোচ্ছেন, হঠাৎ আপনার হাঁচি হল। আর সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে বলা হল বসে যেতে। আপনি আধুনিক মনের মানুষ, এই সব মা-কাকিমার কথা অন্ধ বিশ্বাস বলে উড়িয়ে দিতেই পারেন, কিন্তু তার আগে আজকের লেখা কিন্তু পড়া খুবই দরকারি।

শুধু যে অন্ধ বিশ্বাস নয়, এই প্রথার পিছনে যে আছে একান্ত বাস্তব ও বিজ্ঞানসম্মত কারণ তা আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনি জানতে পারবেন।

হাঁচি হয় কেন?

হাঁচি একটি অত্যন্ত স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। এটি মূলত নাকের মাধ্যমে আমাদের শরীরে যাতে দুষিত কিছু প্রবেশ না করে তার মেকানিজম বলতে পারেন। আসলে যখন নিঃশ্বাসের সঙ্গে কোনও দুষিত পদার্থ নাকে ঢুকতে যায় তখন নাকের মধ্যে থাকা সিলিকা নামক সূক্ষ্ম তন্তু সেই পদার্থকে আটকানোর জন্য মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায়। সেই সংকেতের উত্তরে মস্তিষ্ক নাকের পেশিগুলোকে নির্দেশ দেয় নাকের থেকে বের করে দেওয়ার জন্য। তখনই আমাদের নাক সুড়সুড় করে আর আমাদের হাঁচি হয়। আর যদি কারোর ধুলো থেকে অ্যালার্জি বা ‘ডাস্ট’ অ্যালার্জি থাকে তাহলে তো তার এক্ষেত্রে বেশি হাঁচি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

বাইরে না যাওয়ার প্রথাগত কারণঃ

হাঁচি কেন হয় তা তো আমরা জানলাম। এর থেকে নিশ্চয়ই বুঝলাম আমরা যে হাঁচি জিনিসটি কতটা বৈজ্ঞানিক। তাহলে এর সঙ্গে বাইরে যাওয়া আর না যাওয়ার ব্যাপারটি যুক্ত হল কী করে?

  • আসলে আগেকার দিনে মানুষ তো আর এতো বৈজ্ঞানিক কারণ জানতেন না। তাঁরা ভাবতেন হাঁচি হওয়াটা হয়তো কোনও অস্বাভাবিক বিষয়, কারণ এটি হঠাৎ যে কোনও সময়ে হয়। তাই আগেকার দিনে ভাবা হত যে হাঁচির মাধ্যমে কোনও দুষ্ট আত্মা আমাদের দেহ থেকে বাইরে যাচ্ছে আর তা অন্যের দেহে প্রবেশ করবে। কিন্তু সেই আত্মা হাঁচির মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার পড়েও খানিক ক্ষণ আমাদের চারপাশেই থাকে। তাই যার হাঁচি হল তিনি একা বেরোলে তার অনিষ্ট করতে পারে ওই দুষ্ট আত্মা। আর ভাবা হয় ওই দুষ্ট আত্মার জন্যই হাঁচির পর বেরিয়ে করা কোনও কাজ সাফল্যের সঙ্গে করা যাবে না বা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই আগেকার দিনে বলা হত কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে যেতে হাঁচি হলে।
  • এ তো গেল আমাদের চারপাশের কথা। এবার আপনাদের শোনাই পাশ্চাত্যের কথা। আমরা মনে করি পাশ্চাত্য মানেই শিক্ষা আর সভ্যতার পরাকাষ্ঠা। কিন্তু সেখানেও হাঁচির পিছনে জড়িয়ে গিয়েছিল বিশেষ কারণ, অবশ্য তা খানিক প্রত্যক্ষ। আমরা জানি ইউরোপে আগে প্লেগ হত আর তা মহামারীর আকার নিত যেহেতু ওষুধের সন্ধান তখনও পাওয়া যায়নি। আর এই প্লেগের অন্যতম উপসর্গ ছিল হাঁচি ও কাশি। সেই থেকে এই হাঁচির সঙ্গে মৃত্যু আর ভয়াবহতার যোগ তৈরি হয় খোদ ইউরোপে। স্বয়ং পোপ নিজে হাঁচি হলে ‘ঈশ্বর মঙ্গল করুন’ এটা বলতে বলতেন এই ভরসায় যে হাঁচি হলে যেন প্লেগ না হয়।

আচ্ছা, বিজ্ঞান কী বলছেঃ

হাঁচি হলে মা ঠাকুমারা কেন বাইরে যেতে বারণ করেন তার কারণ তো জানলাম। এবার আসুন জানি বিজ্ঞান আমাদের কী জানাচ্ছে। বিজ্ঞানও কিন্তু আমাদের বাইরে না যাওয়ারই কথা বলে হাঁচি হওয়ার সময়ে, কিন্তু তার কারণ অন্য।

ভাবনায় ব্যাঘাতঃ

আমরা যখন বাইরে যাই তখন আমাদের মাথায় কিছু পরিকল্পনা থাকে। আমরা কিছু চিন্তা করি সারাদিনের কাজ বা যে কাজটি করতে যাচ্ছি তার সম্বন্ধে। সেই সময় যদি হাঁচি হয় তাহলে আমাদের চিন্তাসূত্র ছিন্ন হতে পারে। এর ফলে বাইরে সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে কাজটি হয়তো আমরা ভালো করে নাও করে উঠতে পারতে পারি। তাই ঘরে বসে খানিক ধাতস্থ হয়ে বাইরে যাওয়া উচিৎ।

ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণঃ

হাঁচির কারণ আগেই বলেছি দূষিত পদার্থ বাইরে বের করে দেওয়া। এর মধ্যে কিছু ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াও থাকতে পারে। গবেষণা বলছে, হাঁচির পর আপনার চারপাশে সেই ব্যাকটেরিয়া কিন্তু আরও ৪৫ মিনিট মতো থাকতে পারে। তাই আপনি যখনই বাইরে গিয়ে অন্য লোকের সঙ্গে কথা বলছেন ব্যাকটেরিয়া সেই মানুষটির শরীরে চলে যেতে পারে।

নিজের ও অন্যের খেয়ালঃ

আবার এমনও নয় যে বেরোবার সময়ে হাঁচি হয়েই হাঁচি শেষ হয়ে গেল। আপনার বেরোবার ৫ মিনিট পর হয়তো আবার আপনার হাঁচি হল আর আপনি তখন সামনে কোনও ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছেন। তখন ব্যাকটেরিয়া সরাসরি সেই ব্যক্তিকে আক্রান্ত করবে।

আজকে করোনা ভাইরাসের সময়ে এটা আমরা আরও ভালো বুঝতে পারব। তাই বিজ্ঞান বলে, হাঁচি হলে ঘরে খানিক বসুন, আরও হাঁচি হলে তা হোক, তারপর সাবধানে বাইরে বেরোন আর কিছুক্ষণ পারলে খানিক দূরত্ব বজায় রাখুন অন্যদের সঙ্গে।

হার্টের স্বভাবিকতা বজায় রাখাঃ

হাঁচির সময়ে কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমাদের হার্ট বিট বন্ধ হয়ে যায়। তাই হাঁচি হওয়ার পরেই তাড়াতাড়ি বাইরে গেলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। একটু বসে হার্টকে বিশ্রাম দিয়ে খানিক স্বাভাবিক ছন্দে হার্টকে কাজ করতে দিলে আর তারপরে বাইরে গেলে দেখবেন আপনিও বেশ তরতাজা বোধ করছেন।

হাঁচি নানা রোগের উপসর্গঃ

কয়েক শতাব্দী আগেও নিউমোনিয়া, টিবি ইত্যাদিতে অনেক মানুষ মারা যেতেন কারণ চিকিৎসা ছিল না। আর এগুলোর অন্যতম উপসর্গ ছিল হাঁচি। তাই হাঁচি হলে আগেকার দিনে বসে যেতে বলা হত কারণ খানিক ঘরে বসিয়ে দেখা হত ব্যাপারটি ওই রোগগুলোর দিকে যাচ্ছে কি না। না গেলে তারপর বাইরে যেতে বলা হত। এটাও যথেষ্ট যুক্তিসম্মত।

এবার নিশ্চয়ই আপনি হাঁচি হলে বেরোবার আগে খানিক বসে যাবেন। আর হয়তো আপনি এই বিষয়টিকে অবৈজ্ঞানিক বলবেন না! ভেবে দেখার দায়িত্ব আপনার।

অভীক সরকার

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago