Most-Popular

স্বামী বিবেকানন্দ: যুব ভারতের প্রতীক

আজ জন্মদিবস উপলক্ষে আমাদের পক্ষ থেকে  শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি যুব ভারতের প্রতীক স্বামী বিবেকানন্দকে।

স্বামী বিবেকানন্দ যুব ভারতের প্রতীক। বিশ্বের দরবারে তিনি ভারতবর্ষকে নতুন রূপে তুলে ধরেছিলেন। তিনি রামকৃষ্ণ মিশন এবং রামকৃষ্ণ মঠের প্রতিষ্ঠাতা। মুক্ত চিন্তাধারা এবং নানাবিধ কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি বিশ্ববাসীর মনে আজও সদা জাগ্রত। চলুন জেনেনি বিবেকানন্দকে নিয়ে কিছু অজানা গল্প।

১৮৬৩ সালের ১২ই জানুয়ারী কলকাতার এক সভ্রান্ত পরিবারে বিবেকানন্দের জন্ম হয়। তার পিতা শ্রী বিশ্বনাথ দত্ত সে যুগের নাম করা উকিল ছিলেন এবং সমাজের গণমান্য ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। মাতা ভুবনেশ্বরী দেবী ঈশ্বরের প্রতি অগাদ শ্রদ্ধা রাখতেন।

বিবেকানন্দের আসল নাম নরেন্দ্রনাথ দত্ত। সন্ন্যাস গ্রহণ করার পরেই তিনি সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে বিবেকানন্দ নামে পরিচিত হন। ছোটবেলায় তার নাম ছিল বিলে। তিনি বিশ্বনাথ দত্ত এবং ভুবনেশ্বরী দেবীর অষ্টম সন্তান। ছেলেবেলায় বিবেকানন্দ অন্যন্ত দুষ্টু ছিলেন। তার দুরন্তপনায় অস্থির ছিল সকলেই। এই দুরন্তপনায় অস্থির হয়ে ভুবনেশ্বরী দেবী বলেছিলেন “চেয়েছিলাম শিবকে ,পেলাম এক ভূত কে ” । ছোটবেলায় যখন বিবেকানন্দকে কিছুতেই শান্ত করা যেতনা তখন নাকি মাতা ভুবনেশ্বরী দেবী ছোট বিলেকে বসিয়ে শিব শিব বলতে তার মাথায় জল ঢালতেন। এভাবেই ছোট বিলেকে শান্ত করা হতো। গান বাজনার প্রতি তার আকর্ষণ ছিল।

ছোট বেলা থেকেই তিনি অতন্ত্য মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ১৮৭১ সালে ৮ বছর বয়সে তার স্কুল জীবন শুরু হয় কলকাতা মেট্রোপলিটন স্কুল থেকে। এর পর তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। সেই সময়টি একমাত্র তিনি যিনি প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। সাহিত্য ,দর্শন,ইতিহাস ,সমাজ বিজ্ঞান প্রায় সব বিষয়েই তার সমান আগ্রহ ছিল। এছাড়া হিন্দু ধৰ্ম তথা হিন্দু পুরান -বেদ ,উপনিষদ ,ভাগবত গীতা ,রামায়ণ ,মহাভারত ইত্যাদি ও তার আকর্ষণের বিষয়বস্তু ছিল। তিনি পাশ্চাত্য সাহিত্য,পাশ্চাত্য দর্শন এবং ইউরোপিয়ান ইতিহাস নিয়ে জেনারেল অ্যাসেম্বলি’স ইনস্টিটিউশন এ পড়াশোনা করেন,যা বর্তমানে স্কটিশ চার্চ নামে পরিচিত। ১৮৮৪ সালে তিনি বি.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এছাড়া তিনি ক্লাসিকাল সঙ্গীতে পারদর্শী ছিলেন। তিনি নিয়মিত খেলাধুলো ও শরীরচর্চার সাথে যুক্ত ছিলেন।

ছোট বেলা থেকেই মা ভুবনেশ্বরী দেবীকে তিনি দেখেছেন ঈশ্বররে অগাধ বিশ্বাস রাখতে।

খুব অল্প বয়সেই সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি শিক্ষা এবং আধ্যাত্মিকতা এই দু এর মেলবন্ধনে বড় হয়ে উঠছিলেন। কিন্তু তার মনে এক সময় ঈশ্বরের স্বরূপ নিয়ে দ্বন্দ শুরু হয় যখন তিনি কেশব চন্দ্র সেনের ব্রাহ্ম সমাজের সংস্পর্শে আসেন। কিন্তু সেখানেও তিনি তার মনকে শান্ত করতে পারেন না। এমত অবস্থায় তিনি শ্রী রামকৃষের সংস্পর্শে আসেন। তিনি শ্রী রামকৃষ্ণকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেন যে তিনি ভগবানকে দেখেছেন কিনা। এই প্রশ্নের উত্তরে শ্রী রামকৃষ্ণ বলেন যেমন ভাবে তিনি তার সামনে বিবেকানন্দকে দেখছেন তেমন ভাবেই তিনি ভগবানকে দেখেছেন। এই উত্তর পেয়ে তিনি শান্ত হন এবং রামকৃষ্ণ দেবের সান্নিধ্যে আসেন। এরপর থেকে আমরা এক অন্য বিবেকানন্দকে পাই।

শ্রী রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দকে মানব ধর্মের শিক্ষা দিয়েছিলেন।

তাই পরবর্তী কালে তিনি তার পুরো জীবন মানব ধর্মের উত্তরণের কাজে লাগিয়েছেন।

১৮৮৬ সালে শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের মৃত্যুর পর বিবেকানন্দ এবং কয়েক জন শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের অনুগামী বরানগরে একটি বাড়িতে থাকতে শুরু করে যা পরবর্তী কালে রামকৃষ্ণ মঠে পরিণত হয়। এখানেই তিনি সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহণ করেন। নরেন্দ্রনাথ নাম পরিবর্তন করে তিনি বিবেকানন্দ নাম ধারণ করেন।

১৮৮৬ সালে তিনি মঠ ত্যাগ করেন এবং পায়ে হেটে ভারত ভ্রমণ শুরু করেন। এই সমগ্র ভারতের সমাজ ,ধর্ম,রীতিনীতির সংস্পর্শে আসেন। শিকাগো ধর্ম সভার কথা এই সময়েই তিনি জানতে পারেন।

১৮৯৩ সালে তিনি শিকাগো ধর্মসভায় যোগদান করার উদ্দেশ্য রওনা হন। হাজার বাধার সম্মুখীন হয়েও তিনি যখন ধর্মসভায় সকলকে “মাই ব্রাদারস এন্ড সিস্টার্স অফ আমেরিকা “বলে সম্মোধন করেন তখন সমগ্র সভা করতালিতে ভোরে ওঠে। এই সভায় তিনি ভারতবর্ষের সাহিত্য সংস্কৃতি এবং ধর্মকে পৃথিবীর সামনে তুলে ধরেন। ১৮৯৪ সালে তিনি নিউ ইয়র্ক এ বেদান্ত সোসাইটি অফ নিউ ইয়র্ক প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং ১৮৯৭ সালে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন।

বিবেকানন্দ সারা জীবন ধরে শুধু মানবধর্মের উন্নতি ও উত্তরণের জন্য কাজ করেছেন। মানুষের সেবা করা তার মূল ধর্ম ছিল। তিনি বার বার বলেছেন “Do good and be good to people “. তিনি আরো বলতেন “আমি সেই ভগবানের পূজা করি যাকে তোমরা ভুল করে মানুষ বলে ডাকো”। তার জ্ঞানের কোনো সীমা ছিলো না। তিনি ধর্মের ভেদাভেদ মানতেন না। তিনি মুক্ত চিন্তাধারার মানুষ ছিলেন এবং জীব সেবার মধ্যে দিয়েই তিনি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। ১৯০২ সালের ৪ই জুলাই তিনি দেহত্যাগ করেন।

 

অন্বেষা দত্ত লাহিড়ী

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago