সেরা দশ বাংলা ছায়াছবি যা না দেখলে মিস করবেন অনেক কিছু
সিনেমা দেখা যে একটা ফেভারিট পাসটাইম সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। বিনোদন এর এই জগতে অনেক উত্থান পতন রয়েছে। বর্তমানে আমাজন প্রাইম ও নেটফ্লিক্স এর ওয়েবসিরিজ এর যুগে বাংলা সিনেমা যে তার কৌলিন্য হারাতে বসেছে এটা স্পষ্টই বোঝা যায়।
আজ আপনাদের সামনে থাকলো এমন দশ ক্লাসিক বাংলা সিনেমা যা আপনাদের ভাবাবে, প্রশ্ন করবে এবং বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা ও দেবে। আমাদের মনোনয়ন এ এই সিনেমা গুলি বাংলা সিনেমার সেই স্বর্ণযুগের, যেগুলো দেখে মনে মনে সেই সময়ের সেট ডিজাইনিং বা সিনেম্যাটোগ্রাফি কিংবা অভিনয় এর তারিফ করে বাঙালিয়ানা নিয়ে গৌরব বোধ করতে আপনি বাধ্য হবেন।
১) পথের পাঁচালী:
বাংলা সিনেমায় নজিরবিহীন একটি ফিল্ম যাকে সাফল্যের পরিভাষায় মাপা যায়না। ১৯৫৫ সালে সত্যজিৎ রায় এর নির্দেশনায় মুক্তি পায়।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সম্মানিত এবং সম্প্রতি বিবিসি এর সেরা ১০০টি বিশ্বের সিনেমার মধ্যে স্থান পেয়েছিল এই সিনেমা।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি এই সিনেমার কাঠামো।গ্রামীন চিত্র, জীবনবোধ, মানবিকতার এক অপূর্ব সমন্বয় দেখতে পাবেন আপনি।
অপু ও দুর্গার ট্রেন দেখার দৃশ্যটি দর্শকমনে আজও বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। অভিনয় করেছিলেন সুবীর ও রুঙ্কি ব্যানার্জি।
২) মেঘে ঢাকা তারা:
১৯৬০ সালে প্রকাশিত ঋত্বিক ঘটকের কালজয়ী সৃষ্টি হলো এটি। ১৯৪৭ সালের দেশভাগ, উদ্বাস্তু সমস্যাকে কেন্দ্র করেই কাহিনীর প্রেক্ষাপট গড়ে উঠেছে।
কাহিনীর প্রধান চরিত্র নীতার জীবন সংগ্রাম ভোলার নয়। “দাদা, আমি বাঁচতে চাই” এর মত হৃদয়স্পর্শী সংলাপ বোধহয় খুব কম বাংলা সিনেমায় আছে।
সুপ্রিয়া দেবী ও অনিল চ্যাটার্জির অভিনয় প্রতিভা আপনাদের মুগ্ধ করবে। তাই দেরি না করে আজই দেখে ফেলুন না দেখা থাকলে।
৩) পদ্মা নদীর মাঝি:
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাস এর আধারে গৌতম ঘোষ ১৯৯৩ সালে এই চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। সিনেমাটির স্পেশাল ফ্যাক্ট হলো এটি ভারত ও বাংলাদেশ উভয় সরকারের যৌথ প্রযোজনায় তৈরি।
জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত এই ছবিতে দেখানো হয়েছে নদীকেন্দ্রিক জীবন ধারায় অভ্যস্ত জেলেদের দুঃখ ও দুর্দশা ও আদিম সত্যের আলেখ্য।
উৎপল দত্ত, রবি ঘোষ, রূপা গাঙ্গুলির মতো লেজেন্ড দ্বারা তারকা খচিত এই সিনেমার স্টারকাস্ট। তাই মিস করবেন না মোটেই।
৪) সাড়ে চুয়াত্তর:
বাঙালির সর্বকালের সেরা কমেডি ছবি হলো এটি। অনেকেই আছেন যারা হেরা ফেরি দেখেছেন তাদের রেকমেন্ড করবো এটি দেখুন আপনি ইমপ্রেস হবেন।
ঠাট্টা রসিকতা, ভালোবাসা এমনকি ঝাড়ফুঁক সব মসলাই মজুত এই সিনেমায় আপনাকে বুঁদ করার জন্য। পরিচালক হলেন নির্মল দে।
৫) নায়ক:
১৯৬৬ সালে সত্যজিৎ রায় এর নিজের লেখা ও পরিচালনায় তৈরি সিনেমাটি সেরা ফিচার ফিল্মে জাতীয় পুরস্কার লাভ করে। একটু আলাদা ঘরানার ছবি এটি।
ট্রেন সফররত সাংবাদিক এর কাছে ২৪ঘন্টায় মুখ্য চরিত্র নিজের কাহিনী ব্যক্ত করে। ব্যক্তিজীবনের চাওয়া পাওয়া ও মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েনের এক জীবন্ত দলিল এই সিনেমা।
যারা সাইকোলজিক্যাল টেনশন ও জাঁকজমকপূর্ণ জীবনের পিছনে হতাশার ছায়া রয়েছে এরকম সত্য উদঘাটন মূলক সিনেমা ভালোবাসেন তাদের জন্য খুবই ভালো হবে।
৬) সপ্তপদী:
বাঙালির এভারগ্রিন রোমান্টিক উপকথা হলো এই সিনেমা। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এর উপন্যাস নির্ভর এই গল্প নির্ভেজাল প্রেমের পিপাসুদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
এই ছবিটি দেখলে বুঝবেন আমরা কেন উত্তম-সুচিত্রাকে একে অপরের পরিপূরক বলে থাকি। তাদের অনস্ক্রিন রসায়ন আপনার হৃদয়ে তরঙ্গ তুলবেই।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বানানো ধর্ম, সামাজিকতা সবকিছু উপেক্ষা করে জয়ী হয় ভালোবাসা।
আর বাইকের পেছনে বসে “এই পথ যদি না শেষ হয়” এর সুরে প্রিয়জনের কথা আপনার মনে হয়ে পড়বে কারণ সাবেকিয়ানা ও মেলোডির এমন চমৎকার মেলবন্ধন তো চট করে হয়না।
৭) গুপি গাইন বাঘা বাইন:
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর অমর সৃষ্টি। সত্যজিৎ রায় এর জাদুস্পর্শে বাংলা সিনেমায় আলোড়ন ফেলা একটি ফিল্ম।
তপেন চ্যাটার্জি, রবি ঘোষ এর হাস্যকর ও কৌতুকপূর্ণ এক্টিং, ভুতের নাচ আর সঙ্গীতের আবহমানতা আবালবৃদ্ধবনিতা সবার মন জয় করবে।
শিশুদের রূপকথা ধর্মী গল্প খুবই ভালো লাগে তাই তাদের সাথে বসে এনজয় করতে পারেন।
৮) সোনার কেল্লা:
১৯৭৪ সালে মুক্তি পাওয়া সোনার কেল্লা এক জাতিস্মর শিশু মুকুল এর গল্প।কাহিনীর মোড় যথেষ্ট ঘোরালো ও রয়েছে আল্টিমেট টুইস্ট।
ফেলুদার এডভেঞ্চার ও গোয়েন্দাগিরির কথা নতুন করে বলার কি আছে! ভক্ত মাত্রেই জানেন। উপরি পাওনা হিসেবে থাকবে সন্তোষ দত্তের কমেডি আর রাজস্থানের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
কুশল চক্রবর্তী, সৌমিত্র বাবুদের নিপুণ ও নিখুঁত অভিনয় দেখে আপনি তারিফ না করে পারবেন না। গর্ব ও করতে পারেন যে এরকম সিনেমা বাংলায় বানানো হয়েছে।
৯) কাবুলিওয়ালা:
চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম কিংবদন্তি তপন সিংহের পরিচালনায় ১৯৫৭ সালে মুক্তি পাওয়া একটি দুর্দান্ত সিনেমা।
রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত এই ছবিতে শিল্পবোধ ও গল্প বলার মুন্সিয়ানার অভিনব সমাবেশ ঘটেছে। আফগানিস্তান থেকে আগত কাবুলিওয়ালা কিভাবে কলকাতার মিনিকে আপন করে নেয় তার মর্মস্পর্শী উপাখ্যান রচিত হয়েছে।
মিনির “মেঘের কোলে রোদ হেসেছে” দেখে আপনার মন ও নেচে উঠবে কথা দিচ্ছি। বাৎসল্য ও স্নেহের এরকম সিনেমা আর দুটি নেই।
১০) বেলাশেষে:
শিবপ্রসাদ ও নন্দিতা ব্যানারে অবিশ্বাস্য একটি বৈবাহিক জীবনের চিত্র ধরা হয়েছে। গতানুগতিক দৃষ্টিভঙ্গির থেকে অনেকটাই ভিন্ন এই ছবিটি।
জীবনের বেলাশেষে প্রান্তরে এসেও স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে আবিষ্কার করে এবং নির্ভরশীলতা খুঁজে পায়।
এই সিনেমাটি সব স্বামী ও স্ত্রীর দেখা উচিত। শিক্ষণীয় উপাদান হলো প্রেম যে অভ্যাস নয় চর্চার বিষয় তা নিয়ে সুন্দর বার্তা দিয়েছেন সৌমিত্র ও সাতীলেখা জুটি।