Personal Care

মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের সৌন্দর্যের রহস্য এবার আপনার হাতের মুঠোয়!

তিনি কতটা অভিনয় করতে পারতেন, না পারতেন না, তিনি কতটা দাম্ভিক ছিলেন, তিনি কত বেশি পারিশ্রমিক নিতেন, এসব কথা তো চলতেই থাকবে। এ নিয়ে দ্বিমতও থাকবে হয়তো। কিন্তু যা নিয়ে দ্বিমত থাকবে না সেটা হল তাঁর রূপ, সৌন্দর্য নিয়ে।

একজন বাঙালি মহিলা যে ওই অপার স্বর্গীয় রূপের অধিকারী হতে পারেন তা আজও ভাবলে অবাক লাগে। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, আমি বলছি সুচিত্রা সেনের কথা। রমা থেকে সুচিত্রা সেন হয়ে মিসেস সেন, আর তারপর মহানায়িকা, এই যাত্রাপথে অন্যতম পাথেয় কিন্তু ছিল সুচিত্রা সেনের অপার্থিব ভুবনমোহিনী রূপ।

আজ দাশবাস আপনাদের সামনে আনতে চলেছে রিনা ব্রাউনের সুন্দর থাকার সিক্রেট। আপনার আর সেই সিক্রেটের মধ্যে এখন শুধু এই লেখাটি পড়ে ফেলার দূরত্ব মাত্র।

দামী ব্র্যান্ড নাকি সাধারণ যত্ন?

কথায় বলে, ঈশ্বর যাকে ধরে ধরে তৈরি করেন তাঁর নাকি আর বাইরের কোনও জিনিস লাগে না নিজেকে সুন্দর করে তুলতে। আমাদের মধ্যে কতজন বলুন তো এটা বিশ্বাস করি না যে তিনি অলৌকিক সৌন্দর্য নিয়ে আসেননি! তিনি সরাসরি হয়তো কখনও তাঁর যত্ন বা রুপচর্চা নিয়ে কিছু বলেন নি, কিন্তু তাঁকে নিয়ে তাঁর সময়ের মানুষ বা তাঁর পরিবারের মানুষদের টুকরো টুকরো কথা কিন্তু বলে দেয় তিনি হয়তো সাধারণ ভাবেই নিজের যত্ন নিতেন, কিন্তু তা নিতেন কঠোরভাবে।

রোদ লাগানো যাবে না

মাধবী মুখোপাধ্যায় তাঁর একটি ইন্টারভিউতে বলেছেন, সুচিত্রা সেন নাকি মেকআপ রুম থেকে বেরিয়ে শুটিং এর সেটে যেতেন ছাতা নিয়ে। একজন লোক থাকতেন যিনি ছাতা ধরে থাকতেন এবং শুটিং হয়ে গেলে আবার ছাতা মাথায় ধরে নিয়ে আসতেন তাঁকে। এভাবেই হয়তো তিনি নিজের ত্বকের যত্ন নিতেন। আমরা তো জানি রোদ লাগলে ট্যান পড়ে যায় আর তা আমাদের সুন্দর থাকার পথে বড় বাধা। যদিও এর জন্য মিসেস সেনকে অনেকে দাম্ভিক বলতেন, কিন্তু তিনি সেইসব পাত্তা দিতেন না। আগেই বললাম, সাদামাটা জিনিস করতেন, কিন্তু করতেন কঠোর হয়ে।

শরীরচর্চাও নিশ্চয়ই করতেন

সুন্দর কিন্তু শুধু কিছু মেখে বা ভালো পোশাক পরে হয় না। তার জন্য নিজের শরীরকে ধরে রাখতে হয়, ‘টোনড’ থাকতে হয়। সুচিত্রা সেন সেটা ভালোই করতেন। দেখুন এমনিতেই পূর্ব বাংলার গ্রামের মেয়ে হিসেবে সাঁতার কাটতে পারতেনই। কিন্তু আমরা তাঁকে যখন আদ্যন্ত সুইমিং কস্টিউমে দেখলাম ১৯৬৩ সালে মস্কো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পুরস্কার নেওয়ার কাছাকাছি সময়ে, তখন কিন্তু তাঁর শরীরের বাঁধুনি দেখে বোঝাই যায় তিনি কতটা শরীরচর্চায় মন দিতেন। তাই আজকের দিনে খালি নয়, আমাদের মহানায়িকাও কিন্তু যথেষ্ট ফিট থাকার চেষ্টা করতেন ভেতো বাঙ্গালিপনা ছেড়ে, আর এটাও তাঁর লাস্যময়ী থাকার চাবিকাঠি বলতে পারেন।

আর চোখের যত্ন?

হ্যাঁ, চোখ। আজকের দিনে দাঁড়িয়েও যখন আপনি সুচিত্রা সেনের চোখের দিকে দেখবেন, শুধু তাকিয়েই থাকবেন। ওনার রূপের ভরকেন্দ্র ছিল ওই চোখ। কিন্তু উনি চোখের যত্ন নিতেন কিভাবে? কী ব্যবহার করতেন চোখে? উত্তর দিয়েছেন তাঁর নাতনি রিয়া সেন। তিনি বলছে একটি সাক্ষাৎকারে, সুচিত্রা সেন চোখে আই লাইনারের পাশাপাশি সুর্মাও ব্যবহার করতেন আর তা বেশ মোটা করেই লাগাতেন। আমরা সুচিত্রা সেনের ছবি ভালো করে দেখলেও তা বুঝতে পারব। তাই আজ থেকেই সাজার সময়ে চোখে একটু সুর্মা দেবেন নাকি!

একমাথা চুল কী করে রাখতেন!

আমরা আজকের দিনে নানা ঝামেলায় চুল রাখতে চাই না, কেটে ছোট করেই রাখি। তাঁর ওপর চিন্তায় চিন্তায় তো চুল পড়ে যাওয়ার জোগাড়। কিন্তু সুচিত্রা সেন এই বিষয়ে ঘরোয়া ভাবেই যত্ন নিতেন। তিনি নারকেল তেল আর ডিমের কুসুমের মিশ্রণ চুলে দিতে বেশি পছন্দ করতেন। সপ্তাহে একদিন করেই দিতেন। আর তাই হয়তো মুনমুন সেন তাঁর মেয়েদেরও এই ভাবেই যত্ন নিতে বলেছেন। এর সঙ্গে ওই যে বললাম, রোদ লাগাতেন না গায়ে বা মাথায়। তাই ওই রোদে চুল ঘেমে স্প্লিট এন্ডস বা চুল পড়া তাঁকে ছুঁতেই পারত না।

সবচেয়ে বড় কথা, প্রেজেন্টেবল থাকা

চরিত্রের বাছাইয়ের ক্ষেত্রেই হোক বা নিজের পোশাকের ক্ষেত্রে, নিজেকে ঠিকভাবে উপস্থাপন করা যাচ্ছে না বুঝলে তিনি তা করতেন না। তাই তো সত্যজিৎ রায়ের থেকে ফিল্মের অফার পেয়েও ছেড়ে দেন। নিজেকে প্রেজেন্টেবল রাখতে জানতেন বলেই হয়তো বড় টিপ, বড় খোপা আর তার সঙ্গে শাড়িতে নিজেকে মোহময়ী করে তুলে ধরতেন, তেমনই আবার ওয়েস্টআর্ন আউটফিটেও নিজেকে সমান মানিয়ে নিতেন মাঝে মাঝে। আর এই সব ক্ষেত্রেই কিন্তু চড়া মেকআপ নয়, তাঁর ব্যক্তিত্বই আর নিজেকে ‘ক্যারি’ করার ক্ষমতাই ছিল প্রধান অবলম্বন।

আর্টিকেল পড়ে কী বুঝলেন? দেখুন, যার রূপের কথা বলছি তিনি আমাদের মহানায়িকা। তাই আমরা যদি ভাবি তার রূপ নির্ভর করতো কিছু মেক আপ কিটের মধ্যে তাহলে মস্ত ভুল করবো। তাই হয়তো এই লেখাতেও সেইরকম কিছু প্রোডাক্টের নাম রইল না। কিন্তু যা রইল তা হল ব্যক্তিত্ব ধরে রাখা, নিজেকে মেইন্টেইন করা আর নিয়ম মেনে চলার শিক্ষা। এগুলোই হয়তো তার বিউটি সিক্রেট। চিরকালের রহস্যময়ীর রূপের রহস্য আমাদের মতো মানুষ কী করেই বা জানবে বলুন! শুধু সিন্দুক থেকে ঠিকরে আসা আলো দেখে লুকিয়ে থাকা রত্নের কথা খানিক ভাবতে পারি মাত্র।

অভীক সরকার

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago