চুল আমাদের সৌন্দর্যের ধারণার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। ছেলে হোক কি মেয়ে, আজকাল সকলেই চুলের ফ্যাশানের দিকে বেশ নজর দিয়েছেন। মেয়েদের যেহেতু চুল খানিক বড় হয় আর অনেক স্টাইল করা যায় তাই চুল নিয়ে তাঁদের বাহার খানিক বেশি।
আর কোথাও গিয়ে যেন খোলা চুলেই মেয়েদের বেশি সুন্দর লাগে, বিশেষ করে খোলা চুলেই স্টাইল বেশি ভালো করা যায়। কিন্তু জানেন কী, মেয়েদের খোলা চুল রাখা বা চুল খুলে বাইরে যাওয়া হিন্দু শাস্ত্র মতে গর্হিত কাজ? আসুন, আজ এই নিয়ে আপনাদের সঙ্গে কিছু কথা ভাগ করে নিই।
আমাদের হিন্দু শাস্ত্র মতে মেয়েদের চুল সবসময়ে বেঁধে রাখতেই বলা হয়েছে। শাস্ত্র বলছে, জগত পরিচালিত হয় তিনটি প্রধান গুণের দ্বারা- সত্ত্ব, রজঃ আর তম। মেয়েদের মধ্যে রাজসিক আর তামসিক গুণের প্রভাব খানিক বেশি হয়। এই দুই গুণ বেশি থাকলে রাগ, ক্রোধ ইত্যাদি খারাপ বিষয়গুলি বেশি প্রভাব বিস্তার করে। শাস্ত্র মতে, চুল খোলা রাখলে ঋণাত্মক শক্তি চুলের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে খারাপ ফলাফল ঘটায় যার ফলে মানসিক অশান্তি, অস্থিরতা এ সব বেশি হয়।
হিন্দু শাস্ত্র আরও বলছে, বিশেষ করে সন্ধ্যেবেলা চুল খোলা না রেখে বেঁধে রাখা উচিৎ। যেহেতু সন্ধ্যে হলে বা অন্ধকার হলে অশুভ শক্তি বেশি শক্তিশালী হয় তাই তখন তার খারাপ প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতাও অনেক বেড়ে যায়। তাই সন্ধ্যেবেলা বিশেষ করে চুল বেঁধে রাখা উচিৎ মেয়েদের।
দেখুন আমরা সাধারণত সন্ধ্যেবেলা খোলা চুলে মেয়েরা থাকলে মায়েদের এই বলে বকাবকি করতে দেখেছি যে মেয়ে নাকি একটা অলক্ষ্মী। আসলে বলা হয়, খোলা চুল নাকি অলক্ষ্মী অর্থাৎ দুর্ভাগ্য ডেকে আনে আর লক্ষ্মীকে ঘর থেকে বের করে দেয়। তাই সন্ধ্যে বেলা চুল বেঁধে পুজো দেওয়াই বিধেও।
এই তো গেল শাস্ত্র, পুরাণ এই সবের কথা। এবার আসুন দেখি কিছু বাস্তবসম্মত কারণ এই মেয়েদের চুল খোলা না রাখার নেপথ্যে।
মূলত বলা হয় সন্ধ্যেবেলা চুল খোলা না রাখতে। এই সব নিয়ম তৈরি হয়েছিল তখন যখন আমাদের ঘরে ঘরে ইলেক্ট্রিসিটি ছিল না। প্রদীপের, হ্যাজাকের টিমটিমে আলোয় সবাই থাকতেন। এবার বড় চুল খোলা রাখলে তা উড়ে খাবারে পড়তে পারে আর তা পড়লে অন্ধকারে ওই কম আলোয় তা না দেখতে পেয়ে খেয়ে নেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ফলে হবে পেট খারাপ। তাই চুল বেঁধে রাখলে চুলও আর উড়বে না, শরীরও ঠিক থাকবে।
আমরা যত ভূতের গল্প পড়েছি বা যত ভূতের সিনেমা দেখি তাতে দেখা যায় ডাইনি বা ওই জাতীয় অশুভ আত্মারা আসে চুল খুলে। তাই বাচ্চাদের মনে ভয়ানক মুখ বলতেই যে ছবি আঁকা হয়ে থাকে তার চুল খোলা। এবার অন্ধকারে বা আলো ছায়াতে যদি বড় খোলা চুলের ছায়া তারা দেখে ফেলে তাহলে হয়তো ভয় পেতে পারে আর বাচ্চারা হঠাৎ ভয় পেলে অনেক সময়ে মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। তাই চুল বেঁধে রাখাই ভালো।
চুল খুলে রাখতে দেখি মহিলাদের তখনই বেশি করে যখন তারা আপন কাউকে হারান চিরকালের মতো। কারণ চুল বেঁধে রাখা বা পরিপাটি করার মতো মানসিক অবস্থা তখন তাঁর থাকে না। তাই চুল খুলে রাখা বা চুলের যত্ন না নেওয়া অনেক সময়েই তাঁর মানসিক অসুস্থতা বা খারাপ মানসিক অবস্থার মধ্যে থাকার ইঙ্গিত দেয়, যা আসলে দুর্ভাগ্যকেই বোঝায়।
চুল খোলা রাখলে লক্ষ্মীশ্রী নেই যে বলা হয় সেই ব্যাপারটা কিন্তু আমরা একটু অন্যভাবেও দেখতে পারি। আসলে চুল বাঁধা মানে হল পারিপাট্য বা যত্ন নেওয়া। সুন্দর করে সেজেগুজে থাকা। আর আমরা সবাই জানি, সুন্দর বা শ্রী লক্ষ্মীর আরেক নাম। তাই বলা হয় চুল বেঁধে রাখা ভালো যা সার্বিক যত্ন ও সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলা, আর তার বিপরীতে চুল খোলা রাখা শ্রীহীনতার প্রকাশ ঘটায়।
চুলের যত্নের দিক থেকেও কিন্তু চুল বেঁধে রাখতেই বলা হয়। চুল খোলা রাখলে চুলের ডগা ভাঙা, জট পড়া এই সমস্ত হয় যার পরিণতি হল চুল কমে যাওয়া। এমনকি বলা হয়, ঘুমনোর সময়েও চুল হাল্কা করে বেঁধে ঘুমনো উচিৎ, যাতে চুল এক জায়গায় থাকে। স্নান করেও শুকনোর জন্যও চুল খোলা রাখতে নেই। একটি তোয়ালের মধ্যে জড়িয়ে রাখা উচিৎ, এতেই চুল সুন্দর থাকে।
তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন লেখাটি পড়ে যে, চুল খোলা রাখাটা শুধু অবৈজ্ঞানিক বলে উড়িয়ে দেওয়ার জিনিস নয়। তাই যতই স্টাইল করুন না কেন, বেশির ভাগ সময়ে চুল কিন্তু বেঁধেই রাখবেন।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…