Most-Popular

বাঙালীর ন্যাড়া পোড়া দোলের আগে কেন করা হয় কি জানেন! অবাক হয়ে যাবেন শুনে।

‘আজ আমাদের ন্যাড়া পোড়া, কাল আমাদের দোল।
পূর্ণিমাতে চাঁদ উঠেছে, বলো হরিবোল॥’

এই ছড়া আমারা ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি। দোল হল রঙের উৎসব। তবে এই দোলের আগের দিন ধুমধাম করে পালিত হয় ন্যাড়া পোড়া। শুকনো পাতা, খড়, বা্ঁশের গায়ে বেঁধে তৈরি করা হয় ন্যাড়ার ঘর, তারপর তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বহুপ্রাচীন এই আচার আম বাঙালির কাছে ন্যাড়া পোড়া নামে পরিচিত হলেও অবাঙালিদের কাছে এটি হোলিকা দহন নামে পরিচিত।

এই সুপ্রাচীন প্রথাটি কেন প্রচলিত হয়েছিল এই ইতিহাস অনেকেরই অজানা। হোলিকা দহনের নেপথ্যের কাহিনি নিয়ে একটা পৌরাণিক ইতিহাস রয়েছে।

পৌরাণিক কাহিনী

  • রাক্ষস রাজ হিরণ্যকশিপু একবার তাঁর প্রজাদের পুজো করা বন্ধ করে দেন। এরপর তিনি অমরত্ব লাভের আশায় ব্রহ্মার তপস্যা করা শুরু করেন। তাঁর তপস্যায় অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন ব্রহ্মা, যে তিনি তাঁকে পাঁচটি বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার আশীর্বাদ প্রদান করেছিলেন।
  • জানেন কী ছিল সেই বিশেষ ক্ষমতা? এই যে, হিরম্যকশিপ মৃত্যু দিনেরবেলাও হবে না, রাত্রিবেলাও হবে না। কোনও মানুষের হাতেও হবে না, প্রাণীর হাতও হবে না। চারদেওয়ালের ভিতরেও হবে না, চারদেওয়ালের বাইরেও হবে না। জলে-স্থলে মহাশূণ্যেও মৃত্যু হবে না। এমনকি অস্ত্রের সাহায্যেও হবে না, শস্ত্রের সাহায্যেও হবে না।
  • অমরত্বের বরলাভ করার পর থেকে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন হিরণ্যকশিপ। প্রজাদের ওপর তাঁর অত্যাচার আরও বাড়তে শুরু করে। কিন্তু হিরম্যকশিপ-র নিজের ছেলে প্রহ্লাদ তাঁর বাবাকে ঈশ্বর বলে মানতেন না। প্রহ্লাদ ভগবান বিষ্ণুর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন। তাই রাগে নিজের ছেলেকেই হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন হিরণ্যকশিপ। আর এর জন্য হিরণ্যকশিপ তাঁর নিজের বোন রাক্ষসী হোলিকার সাহায্য নেন।
  • প্রসঙ্গত হোলিকাও ব্রহ্মার বরপ্রাপ্ত ছিলেন। তাঁর ওপর আশীর্বাদ ছিল যে হোলিকা কখনওই আগুনে পুড়বেন না। তাই ভক্ত প্রহ্লাদকে আগুনে পুড়িয়ে মারার নির্দেশ দেন হিরণ্যকশিপ। সেই নির্দেশমতোই প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুনে বসেন হোলিকা। কিন্তু ভক্ত প্রহ্লাদের সত্যিকারের ভক্তিতে প্রসন্ন হন ভগবান বিষ্ণু। তাই তিনি প্রহ্লাদকে বাঁচিয়ে দেন। কিন্তু হোলিকা তার এই বিশেষ ক্ষমতার অপব্যবহার করার জন্য আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
  • এই কাহিনি প্রমাণ করে যে, যা-কিছু অন্যায়, যা কিছু খারাপ এই সবকিছুর অবসান হয়ে একদিন ন্যায়বিচারই প্রতিষ্ঠা পায়। পুরাণে সেই ঘটনার পর থেকেই হোলিকা দহন উৎসব পালিত হয়ে আসছে।

এ তো গেল ন্যাড়াপোড়ার পৌরাণিক ব্যাখ্যা। তবে এর নেপথ্যে কিন্তু একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও রয়েছে। জানেন সেটি কী?

  • দোল উৎসব পালিত হয় বসন্ত ঋতুতে। বসন্ত এমন একটা ঋতু যেখানে প্রকৃতি বিভিন্নরকমের পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয়। এই পরিবর্তন আ মরা সকলেই অনুভব করে থাকি। এই সময় একটা না-ঠান্ডা, না-গরম একটা মিশ্র আবহাওয়া, যে আবহাওয়ায় যতরকমের জীবাণু ব্যাকটেরিয়া বাতাসে ঘুরতে থাকে।
  • যার ফলে ফ্লু ভাইরাসঘটিত জ্বর, চিকেন পক্সের মতো একাধিক রোগ শরীরে বাসা বাধতে পারে। তাছাড়া বসন্তকালে প্রকৃতির রূপও খুবই ম্লান হয়ে পড়ে। কারণ এই সময় গাছের পাতা শুকিয়ে ঝড়ে যায়। তাই বিপুল পরিমাণে আবর্জনার সৃষ্টি হয়। আর সেই কারণেই ঝরে যাওয়া শুকনো নারকেল পাতা, সুপুরির পাতা, খড় ইত্যাদি জড়ো করে তা পুড়িয়ে ফেলা হয়।
  • এর ফলে আগুনের সংস্পর্শে এসে জীবাণুও নষ্ট হয় এবং আবর্জনাও পুড়িয়ে ফেলাই ভাল-তাই এই প্রথাটি খুবই পরিবেশবান্ধব বলেই মনে করেন বিজ্ঞানীরা।
  • তাই আজও নিয়ম করে দোলপূর্ণিমার আগের রাতে পালিত হয় ন্যাড়া পোড়া বা হোলিকা দহন উৎসব।
Indrani Mukherjee

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago