এই সবে বৈশাখ মাস পড়ল। যদিও কয়েক দিন ঝড় বা বৃষ্টিতে আমরা খানিক স্বস্তিতে আছি, কিন্তু ভুললে তো চলবে না যে আমরা আস্তে আস্তে জ্যৈষ্ঠ মাসের গরমের দিকে এগোচ্ছি। দুপুরের দিকে হলকা, রোদের প্রচণ্ড তাপ, ঘাম, গায়ে বেশিক্ষণ জামা-কাপড় রাখা মানেই অস্বস্তি, এই ধরণের ঘটনা আর কিছু দিন পর থেকেই ঘটতে থাকবে।
আপনি হয়তো এসি-তে বসে কাজ করেন বা বাড়িতে এসি লাগিয়ে বেশ খানিক আরাম বোধ করছেন। কিন্তু বেশিক্ষণ তো এসির হাওয়াও ভালো নয় শরীরের পক্ষে। আসলে ভিতর থেকে শরীর ঠাণ্ডা রাখাটাই আসল কথা, বিশেষ করে পেট। যার জন্য এই গরমে আপনাদের কয়েকটি খাবার খেতেই হবে।
১. ডাবের জল
গরম কালে বাইরে বেরোলেই আমাদের ঘন ঘন কোল্ড ড্রিংক খেতে ইচ্ছে করে। এবার থেকে কোল্ড ড্রিংককে টাটা বলুন আর ডাবের জল খান তার বদলে। ডাবের জল শরীরকে ভিতর থেকে সুস্থ রাখে, আর পেট ঠাণ্ডা রাখে।
ডাবের জলকে বলা হয় ন্যাচারাল এনার্জি ড্রিংক। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ন্যাচারাল ইলেক্ট্রোলাইট, যা আমাদের শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে, জলের পরিমাণ ঠিক রাখে আর তার ফলে আমাদের শরীর ঠাণ্ডা থাকে, ক্লান্তিভাবও অনেক কম আসে।
২. শসা
শসায় জলের পরিমাণ বেশ ভালো। তাই ঘন ঘন শসা খেতে পারেন। এমনি হোক বা স্যালাডের সঙ্গে হোক, আপনার খাদ্য তালিকায় শসা কিন্তু অবশ্যই রাখতে হবে।
শসা রোজ খান এবারের গরমে। আর এটি খুবই সস্তা একটি ফল। তাই রোজ খেলেও পয়সা নিয়ে ভাবতে হবে না। আর শরীর পেট ঠাণ্ডা রাখার সাথে সাথে শসা স্কিনের জন্য খুব ভালো।
৩. তরমুজ
গরম কালের আদর্শ ফল এই তরমুজ। এতে আছে প্রচুর জল, যা আমাদের শরীরে জলের পরিমাণ ঠিক রাখে।
ঘামের সঙ্গে যে জল শরীরের বাইরে চলে যায় আর তার ফলে শরীর যে ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়ে, সেই ঘাটতি কিন্তু তরমুজ মিটিয়ে দেয় আর শরীরকে ভিতর থেকে খুবই ঠাণ্ডা রাখে।
পাশাপাশি এতে আছে ভিটামিন আর মিনারেলস, তাই গরমে তরমুজ অবশ্যই খেতে হবে।
৪. লেবু
গরমে ক্লান্তি দূর করতে, এনার্জি ফিরিয়ে আনতে আর শরীর ঠাণ্ডা রাখতে লেবুর কিন্তু জুড়ি মেলা ভার।
সকালে ঘুম থেকে উঠে গরম জলে পাতিলেবুর রস খেলে শরীর তো টক্সিন মুক্ত হবেই, পাশাপাশি সারাদিন তরতাজা থাকা যাবে।
এর সঙ্গে একটি বোতলে বাইরে যাওয়ার সময়ে অল্প লেবুর শরবৎ করে নিয়ে যান।
যখনই খুব ক্লান্ত লাগবে তখন খেয়ে নিন। সঙ্গে সঙ্গে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে ক্লান্তি কেটে যাবে।
৫. ডালিম
পেট ঠাণ্ডা রাখতে ডালিমের কথা বোধহয় শোনেননি।
ডালিমও কিন্তু এই গরমে শরীর ঠাণ্ডা রাখতে খুব ভালো কাজ করে।
বিকেলের দিকে ডালিমের রস করে খেয়ে নিন।
বাইরে থেকে এসে ফ্রিজের জল না খেয়ে এটি খেতে পারেন। দেখবেন পেট আর মন দুইই জুড়িয়ে গেছে।
৬. পুদিনা পাতা
গরমে পুদিনা পাতা যে কত ভালো কাজ দেয় সেটা আপনারা জানেন অনেকেই। আমরা সকলেই অন্য কিছু খাই বা না খাই, পুদিনা পাতার শরবৎ কিন্তু খেয়েই থাকি।
ছোটবেলা থেকেই আমাদের মায়েদের দেখেছি মৌরি আর মিছরি রাতে জলে ভিজিয়ে রাখতে। এতে নাকি শরীর খুবই ঠাণ্ডা থাকে।
আগের দিন রাতে একটি বাটিতে জল নিয়ে তাতে মৌরি আর মিছরি ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন মৌরি আর মিছরির জল ছাকনি দিয়ে ছেঁকে নিয়ে সেই জল খালি পেটে খেয়ে নিন। সারাদিন শরীর একেবারে তরতাজা থাকবে। শরীর ফিট থাকলে আপনার পেটও বেশ শান্তিতে কাজ করবে।
৮. টক দই
গরমে আমাদের সকলেরই হজমের সমস্যা হয়। কিছুই যেন ভালো করে হজম হতে চায় না। এই সমস্যা থেকে মুক্তি দেবে টক দই।
টক দই খাবার যেমন হজম করায়, তেমনই শরীরের ভিতরের তাপকে কম করতে সাহায্য করে। তাই রোজ খাবারের শেষে দুপুর বেলা টক দই কিন্তু খেতেই হবে।
৯. কাঁচা পেঁয়াজ
পেঁয়াজের মধ্যেও জলের পরিমাণ অনেকটাই। এছাড়াও পেঁয়াজে আছে কিছু দরকারি মিনারেলস আর খনিজ পদার্থ যা শরীর ভিতর থেকে ঠাণ্ডা রাখে। তাই রোজ পাতে খানিকটা কাঁচা পেঁয়াজ অবশ্যই রাখুন।
১০. লাউ
আপনারা জানেন লাউতে কত জল থাকে। এমনিতেই ওই জল বেশ ঠাণ্ডা লাগে। ডাক্তাররাও লাউয়ের জল খেতে বলেন শরীর ঠাণ্ডা রাখতে। কিন্তু স্বাদে একটু কটু বলে খুব একটা কেউ ওই জল খেতে চাননা। তাতে কী হয়েছে! যে ভাবে খুশি লাউ রান্না করে খান।
দিনের শেষে লাউয়ের গুণাগুণ আপনার শরীরে ঢোকা নিয়ে কথা। এই গরমে শরীর ঠিক রাখতে তাই অবশ্যই লাউ খান।
এসির হাওয়ার বিকল্প সন্ধান দিলাম তো বলুন! ভিতর থেকে শরীর ঠাণ্ডা রেখে এই গরমে ফিট থাকুন পেট ঠাণ্ডা রাখুন আর সক্কলকে তাক লাগিয়ে দিন নিজের ফিটনেস দেখিয়ে।