চোখ হলো মনের আয়না। তাই চোখ যে সাজগোজ ও রূপ-সৌন্দর্যের ভিত্তিতে কতটা ভূমিকা রাখে তা বলা নিষ্প্রয়োজন। চোখের পাতা বড়ো আর ঘন করার ইচ্ছে সবারই থাকে, এর জন্য অনেকেই আইল্যাশ, ডার্ক পাউডার ও মাস্কারার ব্যবহার করেন যেগুলো কৃত্রিম কসমেটিকস।
এগুলো কখনো দীর্ঘস্থায়ী সমধান বা সম্পুর্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত নয়। তাই এই প্রতিবেদনে থাকছে আপনাদের জন্য এমন কিছু ঘরোয়া কৌশল যা দিয়ে আপনার চোখের আকর্ষণ যাবে বহুগুণে বেড়ে। কালোহরিণ চোখ বা পটলচেরা চোখ কবিতায় নয় বাস্তবে হবে হাতের মুঠোয় আর আপনি হবেন সবার “নয়নমণি”।
১) কম্বিং:
- আমাদের চোখের পাতা অবিন্যস্ত অবস্থায় থাকে তাই সেগুলো আঁচড়ে নিলে চোখের পাতা গোছানো ও টানটান দেখতে লাগে।
- চোখের পাতা কম্বিং করতে মাস্কারা ব্রাশ ধুয়ে তাতে ভিটামিন ই তেল মাখিয়ে আলতো ভাবে অল্প অল্প চুল নিয়ে আঁচড়ে নিন। এতে খুশকি দূর হবে আর রক্তসঞ্চালন ও ভালো হবে।
২) ভেসলিন এর ভরসা:
- চোখের পাতা মাথার চুলের মতো তেল পায়না তাই রুক্ষ হয়ে পড়ে। এটিকে নমনীয় রাখতে আঙুলে ভেসলিন নিয়ে চোখের দুটি পাতায় লাগিয়ে নিন তবে চোখের ভেতরে যেন প্রবেশ না করে দেখবেন।
- ভেসলিন রাত্রে শুতে যাবার আগে প্রয়োগ করলে বেশি সময় ধরে কার্যকরী ফল দিতে পারে।
৩) ক্যাস্টর তেল:
- ১/২ চামচ জোজোবা অয়েল ও ১/২ চামচ অলিভ অয়েল নিয়ে মিক্স করে ব্রাশে মাখিয়ে নিয়ে চোখের পাতায় লাগান।
- এই ক্যাস্টর অয়েল ফর্মুলা চোখের পল্লবের গ্ল্যান্ডে পুষ্টি যোগায় ও নতুন চুল জন্মানোর জায়গা প্রদান করে।
৪) আন্ডার ফান্ডা:
- ডিমের মাস্ক চোখের পাপড়ি ঘন করতে আদর্শ কারণ এর বায়টিন ও ভিটামিন বি এর যৌথ মেলবন্ধন পাতার স্বাভাবিক গ্রোথ বুস্ট করে।
- এটি বানানোর জন্য একটি গোটা ডিম তার সাথে ১ টেবিলচামচ গ্লিসারিন ও ১ টেবিলচামচ পেট্রোলিয়াম জেলি মেশাতে হবে। নিয়মিত লাগান উত্তম ফল পেতে।
৫) মেকআপে সাবধানতা:
- চোখের পাতার আকৃতি বাড়াতে আমরা মাসকারা ইউজ করে থাকি যেটা কিন্তু খুবই ক্ষতিকারক আমাদের স্নিগ্ধ চোখের জন্য। এটি চোখকে নিস্তেজ ও প্রাণহীন করে দেয়।
- তাই গ্লু যুক্ত মাসকারা চোখের পাতা শক্ত করে। যার ফলে চোখের চুল পড়ে।চোখে মেকআপ করলে তাই সপ্তাহে ২-৩ দিনের গ্যাপ নিয়ে করুন।
- রাত্রে মেকআপ নিয়ে মোটেই শুতে যাবেন না। চেষ্টা করবেন সবসময় নামী কোম্পানির আই লাইনার বা আইশ্যাডো ব্যবহার করতে।
৬) গ্রীন টি:
- গরম জলে গ্রীন টি এর পাতা দিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে সেটা ঠান্ডা করুন ধৈর্য্য ধরে। এবার সেই চা এর লিকার তুলোয় অল্প অল্প নিয়ে চোখে লাগান যাতে পাতা সম্পূর্ণ ভেজে।
- এই জল এন্টি অক্সিডেন্ট ও ট্যানিন সমৃদ্ধ যেটি চোখের পাতার পতন রোধ করে ও সেটিকে গাঢ় করে তোলে।
৭) হাতের কাছেই সিরাম:
- আজ্ঞে ঠিক শুনেছেন বাড়ি বসেই এই সিরাম আপনি বানাতে পারবেন, দরকার পড়বেনা কোনো বাজারি ব্র্যান্ড এর পেছনে খরচের।
- এর জন্য অর্ধেক একটা লেবুর খোসা নিয়ে শুকনো করে সেটা গ্রাইন্ড করে রাখুন।একটা পাত্রে ১ টেবিলচামচ নারকেল তেল, ১ টেবিলচামচ এলোভেরা মিক্স আপ করে নিন ।
- শেষে মিশিয়ে নিন তাতে শুকনো লেবুর খোসা। ব্যাস তৈরি আপনার সিরাম। এটি সপ্তাহে ৩-৪ বার লাগান রোলারে চমৎকার ফল পেতে।
৮) অভ্যাস:
- কথায় বলে স্বভাব যায় না মলে। আপনার যদি কোনো কারণ ছাড়াই বারবার চোখে হাত দেবার অভ্যাস থাকে তবে তা থেকে বিরত হন।
- ঘুম থেকে উঠে অনেকের বদ অভ্যাস চোখ কচলে নেবার। কেউ বা এমনি চোখ চুলকে নেবার শখ রাখেন। এর ফলে অনাবশ্যক চোখের চুলের ক্ষতি করেন নিজেদের অজান্তে।
৯) সুষম খাবার:
- আইল্যাশ এর পারফেক্ট ঘনত্ব পেতে খাবার দাবার ও ভালোই হাত রেখে যায়। তাই রোজকার ডায়েটে আপেল, আঙ্গুর, পেয়ারা, সবুজ সব্জি, মাছ,মাংস রাখুন।
- ভিটামিন এ ও সি এর সাপ্লাই কিন্তু এগুলো থেকেই আসে যেটা আপনার চোখ ও তার চুলের জন্য খুবই জরুরি।
১০) সতর্কতা:
- যাদের কম্পিউটার এর সামনে বসে ডেস্ক ওয়ার্ক করতে হয় বা যাদের ফোনের স্ক্রিনেই চোখ রেখে কেটে যায় দিন তাদের ক্ষেত্রে কিন্তু চোখের পাতা নিয়ে শঙ্কার কারণ আছে যথেষ্ট।
- তারা পারলে চশমা পরে কাজ করুন এতে ব্লু লাইট ফিল্টার হয়ে চোখে যাবে যেটা ক্ষতি করবে কম।
- চোখের পাতা ফেলুন ৩-৪ সেকেন্ড এর ব্যবধানে এতে চোখের রেটিনার ড্রাইনেস দূর হয়ে যাবে।
- পর্যাপ্ত ঘুম দিন ও চোখে মাঝে মাঝে জলের ঝাপটা দিন যার ফলে চোখ থাকবে আর্দ্র ও চোখের পেশীর সক্রিয়তা থাকবে অটুট।
- চোখের পাতার বিষয়টি আমরা অন্যান্য অঙ্গের মতো সমান ইম্পোর্টেনস দিন।কিন্তু একটু যত্ন ও নিয়ম মেনে চললে আপনি সহজেই পাবেন মোহময়ী আইল্যাশ।