করোনা পজিটিভ না নেগেটিভ? ফেলুদা জানিয়ে দেবে মাত্র ৫ মিনিটে
করোনা মুক্তিতে, করোনা দমনের কাজ স্বয়ং নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন ফেলুদা। দিল্লির দুই বাঙালি বিজ্ঞানী ডঃ শৌভিক মাইতি আর ডঃ দেবজ্যোতি চক্রবর্তী পাঁচ মিনিটে করোনা টেস্ট করার টেস্টিং কিট আবিষ্কার করেছেন, যথাযোগ্য নাম দিয়েছেন, ‘ফেলুদা’।
গল্পের পাতায় যেমন আমরা দেখেছি ফেলুদাকে কম সময়ের মধ্যে অপরাধীকে শনাক্ত করতে, ঠিক সেরকমটাই এবার ঘটবে আরেকবার। আর এই অপরাধীর নাম করোনা। ফেলুদা টেস্ট কিট মাত্র পাঁচ মিনিটে বলে দেবে ব্যাক্তি করোনা পজেটিভ না নেগেটিভ।
ব্যাপারটা কী?
দিল্লির সিএসআইআ র-আইজিআইবি (CSIR-IGIB) অর্থাৎ কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ’স ইন্সটিটিউট অব জেনোমিক্স অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজির একদল বিজ্ঞানী, যাদের নেতৃত্বে ছিলেন দু’জন বাঙালি বিজ্ঞানী, তাঁরা একটি টেস্ট কিট আবিষ্কার করেছেন যার নাম দিয়েছেন ‘ফেলুদা’।
ভারতে এই প্রথম এই ধরণের কোনও কিট দিয়ে এবার পরীক্ষা করা হবে। এই ধরণের কিট তৈরি করতে বা উন্নত করতে দু’-তিন বছর সময় লাগে। কিন্তু ভারত সেই তিন-চারটি দেশের মধ্যে একটি যে খুব তাড়াতাড়ি, প্রায় দু’মাসের মধ্যে এই টেস্ট কিট তৈরি করেছে।
দুই বাঙালি বিজ্ঞানী, ডঃ শৌভিক মাইতি আর ডঃ দেবজ্যোতি চক্রবর্তী দুজনের নিরলস চেষ্টায় আজ ভারত স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি বা ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি (MIT), যারা এই কিট ব্যবহার করে, তাদের সঙ্গে এক সারিতে দাঁড়িয়ে গর্ব করতে পারে।
কীভাবে কাজ করে ‘ফেলুদা’?
ফেলুদা টেস্ট কিট একটা সাধারণ প্রেগনেন্সি কিটের মতোই কাজ করে। রঙ পরিবর্তন করার মাধ্যমে এটি জানিয়ে দেবে রোগী আদৌ করোনা আক্রান্ত কিনা!
এই কিট প্রচলিত পি.সি.আর (PCR) পদ্ধতি বা পলিমিরেস চেইন রিঅ্যাকশন পদ্ধতির ওপর কাজ করে না। এটি কাজ করে CRISPR-CAS 19 টেকনোলজি দ্বারা যেখানে নভেল করোনা ভাইরাসের জেনোমিক সিকোয়েন্সকে টার্গেট করা হয় আর ১০০ শতাংশ নির্ভুল ভাবে বলে দেওয়া যেতে পারে যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে কি না!
সবচেয়ে বড় কথা, মাত্র ৫-১০ মিনিটের মধ্যেই ফলাফল জানা যাবে। ‘জিকা’ ভাইরাসের সময়েও এই পদ্ধতি ব্যবহার করে ফল পাওয়া গিয়েছিল। আর এই কিট আমেরিকায় ব্যবহার করা কিটের থেকে আরও উন্নত কারণ সেখানে CAS-12 বা CAS-13 প্রোটিন টেকনোলজি ব্যবহার করা হয় ভাইরাস শনাক্ত করতে।
আমাদের ফেলুদা কিট CAS-9 প্রোটিন পদ্ধতিতে ভাইরাস শনাক্ত করবে যা আরও কার্যকরী ভাবে ভাইরাস চিহ্নিত করতে সক্ষম।
কেন ‘ফেলুদা’ টেস্ট কিট?
এই কিট তৈরির তত্ত্বাবধানে যারা আছেন তাঁরা বলছেন এই কিট ব্যবহার করা অনেক বেশি সাশ্রয়ী।
বর্তমানে টেস্ট কিট দিয়ে পরীক্ষা করতে প্রায় সাড়ে চার হাজার টাকার মতো খরচ হয় প্রতি মানুষের জন্য। সেখানে এই কিট ব্যবহার করলে লাগবে ৫০০ টাকা মাত্র।
আর এটি ব্যবহার করাও খুব সহজ। কোনও ‘লেভেল-২’ বা ‘লেভেল-৩’ ল্যাব লাগবে না, সাধারণ ল্যাবেই হয়ে যাবে পরীক্ষা।
পি.সি.আর পদ্ধতিতে পরীক্ষা করার মেশিনটার দামই হয়ে যায় ১৪ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা। তার ওপর বিদেশ থেকে আনানোর খরচ আছে। সেই সব ঝামেলা কিন্তু এই টেস্ট কিট মিটিয়ে দিতে পারে।
বিগত দু’মাস ধরে দিনে ২০ ঘণ্টা করে গবেষণা করে ভারতের বিজ্ঞানীরা এমনই অসাধারণ টেস্ট কিট তৈরি করেছেন।
কেন ‘ফেলুদা’ নাম হল?
এই টেস্ট কিট তৈরির নেপথ্যে আছেন দুই বাঙালি বিজ্ঞানী। আর বাঙালিদের সঙ্গে ফেলুদার যোগাযোগ যে কোথায়, কত গভীরে সেটা আর নতুন করে বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না।
এই কিট অব্যর্থ ভাবে ১০০ শতাংশ ঠিক পদ্ধতিতে ভাইরাসকে খুঁজে বের করবে কয়েক মিনিটেই, যেভাবে ফেলুদা অতি সহজেই অপরাধীকে শনাক্ত করতেন।
আর তাছাড়া, ২০২১ সালেই সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবার্ষিকী। কেন্দ্রীয় সরকারও গোটা বছর ধরে কিছু না কিছু করার কথা ভাবছেন এই উপলক্ষ্যে। সেই কথা মাথায় রেখেও এটি এক ভাবে তাঁকে, তাঁর কাজকে সম্মান জানানোর প্রচেষ্টা হতে পারে।
তাহলে বুঝতেই পারছেন, আমাদের ফেলুদা মাঠে নেমে যখন পড়েছেন তখন করোনার পালাবার আর কোনও পথ নেই। এখন দেখার ফেলুদা কত তাড়াতাড়ি করোনাকে কৈলাস বা কাঠমান্ডু ঘুরিয়ে আরও দূরে পাঠিয়ে দিতে পারে।