বেশ কয়েক দিন ধরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখ ছিলেন মাথার একটি দিকে কেমন চাক চাক মতো হয়ে চুল উঠে যাচ্ছে। আপনি বেশ কয়েক দিন দেখার পর ভাবলেন আপনার টাক পড়তে শুরু করেছে। অগত্যা মন খারাপ করে টাক যাতে আর না ছড়িয়ে যায় তার ব্যবস্থা নিলেন।
নানা রকম টোটকা করলেন, ঘরোয়া জিনিস থেকে শুরু করে ওষুধ সবই ব্যবহার করলেন। কিন্তু আবার দেখলেন আরেকটি জায়গায় ওই রকম করে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা, ভাল করে দেখুন তো ওই ফাঁকা হয়ে যাওয়া অংশটা গোল গোল বা খানিক প্রশ্ন চিহ্নের মতো কী দেখতে?
মাথার মধ্যে বেশ খানিক জায়গা জুড়েই কি হয়েছে ওইগুলো? তাহলে আর সময় নষ্ট করবেন না, টাক ভেবে ভুলভাল পথে চিকিৎসা করাবেন না। আপনার যেটি হয়েছে সেই রোগটির নাম হল এলোপেসিয়া এরিয়াটা। নিশ্চয়ই নামটা শোনেননি আগে? আজকের আর্টিকেলে রইল এই রোগের সম্বন্ধে বিশদ বিবরণ।
যদি এক কথায় আগে বলতে চাই তাহলে এলোপেসিয়া এরিয়াটা হল একটি অটোইমিউন ডিস-অর্ডার যা অস্বাভাবিক হারে চুল পড়ার দিকে আপনাকে নিয়ে যায়। আপনি হয়তো শুনলে অবাক হবেন, এটি আমেরিকার ৬.৮ মিলিয়ন মানুষের ওপর প্রভাব ফেলেছিল।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে মাথায় ছোট ছোট করে গোল হয়ে চুল পড়তে শুরু করে। তাও আবার নানা দিক থেকে সেটা হয় মানে খাবলা খাবলা করে প্রায় সবটা মাথায়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন মাথার স্ক্যাল্প দেখতে খুবই বাজে হয়ে যায়।
এখানেই অনেকের এলোপেসিয়া এরিয়াটার কাজ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এটি বেশ বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যায়। তখন মাথা সম্পূর্ণ ফাঁকা হয়ে যায়, যেখানে চুল আর খুব একটা গজায় না। অনেক সময়ে ভুরূ আর চোখের পাতা সব পড়ে যায়।
ভেবে দেখেছেন, এটি হলে কী রকম দেখতে লাগতে পারে! সারা শরীরের চুল পড়ে যেতে পারে। আর সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হল, যদিও এই রোগ যে কোনও বয়সে হতে পারে, কিন্তু ৩০ বছরের আগেই এই রোগ বেশি হয় বলে দেখা গেছে। সুতরাং এখনই কিন্তু সাবধান হওয়ার সময় হয়ে গেছে যদি মাথায় কোনও রকম ফাঁকা হয়ে যাওয়ার চিহ্ন দেখতে পান।
এই রোগ শরীরের এক বিশেষ বিক্রিয়ার ফল। যখন আমাদের শরীরের শ্বেত রক্ত কণিকা আমাদের হেয়ার ফলিকলকে আঘাত করে তখন সেগুলি সঙ্কুচিত হয়ে যায় আর খুব বেশি পরিমাণে পড়তে থাকে। ওই অংশে চুল আর তৈরি হতে চায় না। এখনও অবশ্য এটি জানা যায়নি কেন শ্বেত রক্ত কণিকা হেয়ার ফলিকলকে এভাবে আঘাত করে।
আসলে শ্বেত রক্ত কণিকার কাজ হল বাইরের কোনও অজানা ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া যদি আঘাত করে তাকে প্রতিহত করা। কিন্তু তার বদলে যদি শ্বেত রক্ত কণিকা সুস্থ কোষ, এক্ষেত্রে হেয়ার ফলিকলকে আঘাত করে তাহলে কিন্তু এই রোগ হতে পারে।
তবে গবেষকরা এর পিছনে জেনেটিক কারণকে একটি সম্ভাবনা হিসেবে ধরছেন। দেখা গেছে, যাদের ক্ষেত্রে এই রোগটি হচ্ছে তাদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের কারোর হয়ত এই রোগটি হয়েছিল। অন্তত পাঁচ জন রোগীর মধ্যে এক জনের এই রোগ হয় পরিবারের থেকে। এমনকি যদি টুইন বা যমজ সন্তান হয় আর তার মধ্যে এক জনের এই রোগ হয়, তাহলে অপর জনের ৫০ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে এই রোগ হওয়ার।
আবার অনেক সময়ে দেখা যায়, যদি হাইপার অ্যালার্জি থাকে, বা থাইরয়েড, সুগার থাকে তাহলেও এই রোগ হতে পারে খুব বেশি পরিমাণে। অনেক সময়ে শ্বেতি রোগের সঙ্গে এই রোগের তুলনা করা হয়ে থাকে।
শ্বেতি হলে যেমন শরীরের নির্দিষ্ট অংশে মেলানিন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়, তার ফলে চাক চাক হয়ে শরীরের রঙ সাদাটে হয়ে যায়, তেমনই দেখতে যেহেতু হয় এই এলোপেসিয়া এরিয়াটা, যদিও মাথায়, তাই অনেক সময় শ্বেতি যাদের আছে তাদের মাথায় এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায় বইকি। তাদের একটু বেশি সাবধান থাকা দরকার।
তবে এক্ষেত্রে আরেকটি কথা বলে রাখা দরকার। অনেকে ভাবতে পারেন স্ট্রেস বা অতিরিক্ত চিন্তা থেকে এসব রোগ হয়ে থাকতে পারে। দেখুন, অন্য রোগের ক্ষেত্রে কিছু বলার নেই। কিন্তু এই রোগের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞান গবেষণা করে বের করতে পারেনি যে স্ট্রেস থেকেই এই এলোপেসিয়া এরিয়াটা রোগটি হয় বা স্ট্রেস এই রোগের অন্যতম কারণ।
চিন্তা হয়তো অন্য অনেক কিছু বাড়াতে পারে, হরমোনের নানান ভারসাম্যহীনতার জন্য দায়ী থাকতে পারে যা ঘুরিয়ে এই রোগের কারণ হতে পারে, কিন্তু সরাসরি স্ট্রেস বা দুশ্চিন্তা যে এই রোগের কারণ তা এখনও প্রমাণিত হয়নি। আর মনে রাখবেন এটি কিন্তু ছোঁয়াচে নয়।
১. সবচেয়ে বড় উপসর্গ এই রোগের চাক চাক হয়ে চুল পড়ে যাওয়া। মূলত গোল গোল কয়েনের মতো হয়ে চুল পড়ে যায়। মূলত স্ক্যাল্পের উপর থেকে চুল পড়া শুরু হয়। আর তার থেকে বেশি হলে দাঁড়ি, গোঁফ বা চোখের পাতা থেকেও চুল পড়তে শুরু করে। এরকম গোল গোল চাক চাক হয়ে যাওয়া হঠাৎ করেও হতে পারে, আবার অনেক দিন ধরেও হতে পারে।
২. অনেক সময়ে সেই গোল গোল হয়ে যাওয়া অংশে জ্বালার অনুভূতি হয়। চুলকাতেও পারে। সাধারণত টাক হলে চুলকানি বা জ্বালা হয় না। সুতরাং এগুলিও বোঝাবে যে মাথায় ফাঁকা হয়ে যাওয়া সাধারণ টাক না এই বিশেষ রোগটি।
৩. এই রোগ হলে হাতের আর পায়ের নখেও কিছু কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। এই পরিবর্তন কিন্তু ইঙ্গিত করতে পারে আপনার এলোপেসিয়া এরিয়াটা হল কিনা। কী সেই চিহ্নগুলি-
৪. এই বিশেষ উপসর্গ ছাড়াও মাথার মধ্যেও কিছু বিশেষ আলাদা উপসর্গ দেখলে আপনি বুঝতে পারেন আপনার এই রোগটি হল কিনা-
এই রোগ কিন্তু নানা ধরণের হতে পারে-
সবার প্রথমে তো বলব অবশ্যই ডাক্তার দেখান, তার পরামর্শ নিন আর তারপরেই ওষুধ খান। কিন্তু এর পাশাপাশি আপনি ঘরে বসে কিছু কাজ করতে পারেন।
তবে একটা জিনিস মনে রাখার, ঘরে বসে এগুলো ব্যবহার করলে আপনার যে উপকার হবেই তার কিন্তু কোনও প্রমাণ এখনও নেই। তবে এতে যে আপনার কোনও ক্ষতি হবে না এই কথা হলফ করে বলা যায়।
আসলে এই রোগটি এতোটাই মারাত্মক যে অনেকে এর জন্য মানসিক অবসাদের শিকার হয়ে যান। দেখতে খারাপ লাগা, প্রেজেন্টেবল না থাকতে পারা তার সবচেয়ে বড় কারণ। আর তার চেয়েও বড় কথা হল, আগেই বলেছি, এটি হয় মূলত ত্রিশ বছরের মধ্যে বেশি। তাই দেরী না করে তাড়াতাড়ি শুরু করুন চিকিৎসা। খুব বেশি ছড়িয়ে না পড়লে কিন্তু এই রোগ ঠিক করা সম্ভব।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…